প্রিয় ১২ বিঘায় নেই কোনো আড্ডা

, ফিচার

আসমাউল মুত্তাকিন | 2023-08-27 23:39:14

মিরপুর থেকে এখনকার দূরত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটার। ইট-পাথর আর কংক্রিটের তৈরি কিছু বিল্ডিং। তার পাশে একটি খেলার মাঠ। মাঠের এক পাশে কিছু গাছ আর অন্য পাশে ফুলের বাগান। এই নিয়ে গঠিত মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।

এই বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নালিজম এন্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগে পড়েন শেখ সুলেমান কবির। করোনাভাইরাসের ছুটির কারণে নিজ বাড়িতে অবস্থান করছেন। গত কয়েকদিন ধরে তার মনটা খারাপ।হচ্ছে না প্রিয় বন্ধুদের সাথে দেখা। হচ্ছে না আড্ডা আর খোশগল্প। মোবাইলের ওয়ালে তাকালেন। সেখান থেকে কিছু ক্যাম্পাসের পুরাতন ছবি পোস্ট করলেন ফেসবুকে। আবেগতাড়িত হয়ে লিখলে 'বন্ধুরা মিস করছি তোদের'। সুলেমানের মতো হয়তো আরও অনেক শিক্ষার্থী এইভাবে স্মৃতিচারণ করছেন। সবার মনে এখন করোনার আতঙ্ক।

করোনাভাইরাস থেকে বেঁচে থাকতে গত ১৮ মার্চ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। এ ছাড়াও ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। পরে পরিস্থিতি ক্রমশ ভয়ানক হওয়ায় আবার প্রাক-প্রাথমিক থেকে সব রকমের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটির সময় বৃদ্ধি করা হয়। ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সময় দেয়া থাকলেও তা বাড়িয়ে এখন ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত করা হয়।

সরকারি নির্দেশনা পেয়ে মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ভিসি অধ্যাপক ড.নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেন। মেয়েদের আবাসিক হল ছেড়ে দেয়ার নোটিশ দেয়া হয়। ছাত্র-শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী সবার অনুপস্থিতিতে কোলাহলের ক্যাম্পাস আজ জনশূন্য। নেই জম্পেশ আড্ডা। ক্যান্টিন, খেলার মাঠ, ও গোলচত্তরে কারো নেই আনাগোনা।

ক্লান্তির ক্লাস শেষে ঘোরাঘুরি ও হলকা মন ফ্রেস করতে খাগান বাজারে চলে যেত একদল শিক্ষার্থী। সেই খাগান বাজারটাও আজ নিস্তব্ধ। বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন দোকানগুলোও আজ ক্রেতাশূন্য। সবুজ বাসে বন্ধুরা মিলে আর গাওয়া হয়না কোনো গান। ক্যাম্পাসের সবুজ আর সাদা বাসগুলোও যেনো আজ নীরবে দাঁড়িয়ে আছে।ওরাও হয়তো মনে মনে গতদিনগুলো স্মৃতিচারণে । সংগীতপ্রেমীদের আড্ডা নেই আজ ক্যাম্পাসে।বল ও ব্যাট হাতে খেলার মাঠে দেখা যায় না আর কাউকে। নেই গ্রুপ অ্যাসাইনম্যান্ট আর প্রেজেন্টেশন মিটিং। ক্লাস টেস্ট, সেমিস্টার ফাইনালও নেই। সব কিছু যেন থেকে আছে। লাল কংক্রিটের বিল্ডিংগুলো নেই কোনো ক্লাশ। ক্যাম্পাসের মসজিদে আজ মুসুল্লি শূন্য। নেই কোনো আজানের ধ্বনি।মসজিদের পাশে অবস্থিত ফটোকপি দোকানটিতে নেই আর কোনো শিক্ষর্থীদের ভিড়। নেই কোনো ব্যস্ততা। কেউ ফটোকপিওয়ালা মামাকে হয়তো বলেছে না 'মামা তাড়াতাড়ি করেন এখন ক্লাশ শুরু হবে'। হয়তো সবগুলো শিক্ষার্থীদের আসার প্রহর গুনছে। চির চেনা ক্যাম্পাস আজ বড় অচেনা মনে হচ্ছে। সবকিছুতেই নিস্তব্ধতা। একমাত্র নিরাপত্তাকর্মী ছাড়া কারো কোনো পদচারণা নেই সেখানে।

বিদায় বেলায় শিক্ষার্থীদের মনে একটাই চাওয়া করোনা শঙ্কা মুক্ত হোক সবাই। সবাই সুস্থভাবে ফিরে আসুক প্রিয় ক্যাম্পাসে।আনন্দ আড্ডায় প্রাণ ফিরে পাক ১২ বিঘা। এমনটাই চাওয়া সবার। সবাই ভালো থাকবেন। সুস্থ থাকবেন আবার দেখা হবে ইনশাআল্লাহ।

এ সম্পর্কিত আরও খবর