করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ধূমপান ত্যাগ করা জরুরি

, ফিচার

তানিম কায়সার, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট | 2023-09-01 08:25:47

আপনি কি সিগারেট ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবছেন? শত চেষ্টা করেও পারছেন না? তাহলে এটাই হতে পারে শ্রেষ্ঠ সময়। কেননা ডাক্তার ও গবেষকরা বারবার বলছেন যদি আপনি নোভেল করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে নিজের শরীরের প্রাকৃতিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর সর্বোচ্চ ব্যবহার চান তবে এখনই ছেড়ে দিন সিগারেটের অভ্যাস।

ধূমপানের কারণে ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হয়, একথা আমরা সবাই জানি। কিন্তু বিভিন্ন কারণে যখন আমরা এই ক্ষতির জালে আটকা পড়ে যাই, চাইলেও আর বের হতে পারি না। কেউ কেউ ছেড়ে দিয়েও আবার কয়েকদিন পরে ঠিক ফিরে যান পুরনো অভ্যস্ততায়। এর পেছনে সবচেয়ে বেশি প্রভাবক হিসেবে কাজ করে অন্যকে ধূমপান করতে দেখা। বিশেষত চায়ের দোকানে বসে চা খেতে খেতে একটা সিগারেট না হলে যেন চায়ের আসল মজাই পাওয়া যায় না। কিন্তু এই লকডাউনে বাইরে যাওয়া বন্ধ। তাই এসব বাধা জয় করা এখন তুলনামূলক সহজ।

এটা ঠিক যে ধূমপান ছেড়ে দিলে সাথে সাথেই আপনার ফুসফুস ঠিক হয়ে যাবে না। দীর্ঘদিন ধূমপানের ফলে আপনার ফুসফুসের যে ক্ষতি হয়েছে তা এক নিমিষেই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব না। কিন্তু এটা প্রমাণিত সিগারেট ছেড়ে দেওয়ার পরদিন থেকেই শরীরে বিভিন্ন ইতিবাচক পরিবর্তন আসতে শুরু করবে। বিশেষ করে শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত নানান সমস্যা কমতে শুরু করবে যা এই সময়ে নোভেল করোনাভাইরাস প্রতিরোধেও রাখবে ভূমিকা।

ধূমপানের কারণে ফুসফুসের যে ক্ষতি হয়েছে তা রাতারাতি কমে না গেলেও আমেরিকার রোগতত্ত্ব গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘The US Centers for Disease Control and Prevention’-এর মতে নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম মেনে চলাফেরা করলে খুব দ্রুতই আপনার ফুসফুস ফিরে যাবে আগের অবস্থাতে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও ধূমপানকে করোনা-ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে উল্লেখ করেছে

আমেরিকান ফুসফুস সমিতির (The American Lung Association) স্বেচ্ছাসেবী মুখপাত্র এবং ভ্যান্ডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিনের অধ্যাপক ডা. ব্রায়ান ক্রাইস্টম্যান এক সাক্ষাৎকারে বলেন, আমেরিকার প্রতিটি ফুসফুসের ডাক্তার একথাই প্রচার করেন যে প্রত্যেককে ধূমপান ছেড়ে দেওয়া উচিত। যদিও এই কথাটি নতুন কোনো কথা নয়, তবুও তারা প্রত্যেক রোগীকে এই কথা স্মরণ করিয়ে দেন। তবে বর্তমান সময়ে যে সকল চিকিৎসক সামনে থেকে নোভেল করোনাভাইরাসের চিকিৎসা সেবা প্রদান করছেন তারা প্রত্যেকেই এই বিষয়টি বারবার করে বলেছেন—এই ভাইরাস মোকাবেলার জন্য ধূমপায়ীদের তুলনায় যারা ধূমপান করে না তাদের শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি।

সিলিয়া হলো তার ফুসফুসের নিরাময়ের প্রথম অংশ। একটি ব্রাশ যেভাবে আপনার চুলকে তরঙ্গের মতো সামনে এবং পেছনের দিকে নিয়ে যায়, ঠিক একইভাবে ফুসফুসের সিলিয়াগুলো আপনার প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে এবং শরীরকে সর্দি ও কাশির সংক্রমণ থেকে রক্ষায় সহায়তা করে। ‘The US Centers for Disease Control and Prevention’-এর গবেষণা আরো বলে, এগুলো শ্লেষ্মা পরিষ্কার করার ক্ষেত্রেও কাজ করে।

সিলিয়া শ্লেষ্মা পরিষ্কার করার শারীরিক প্রক্রিয়াটিকে সক্রিয় করে, যাকে বলা হয় মিউকোসিলারি এসকেলেটর। ধূমপায়ী ব্যক্তির ফুসফুসে প্রচুর তরল থাকে যার প্রভাবে মিউকোসিলারি এসকেলেটর দুর্বল হয়ে পড়ে—তাদের শ্লেষ্মা পরিষ্কার হয় না। সুতরাং বুঝতেই পারছেন এর ফলে নোভেল করোনাভাইরাস প্রতিরোধের প্রথম যে সুরক্ষা কবচ, সেখানেই তৈরি হয় পরাস্ত হওয়ার আশঙ্কা।

করোনাভাইরাস সংক্রমণের ক্ষেত্রে আপনার ফুসফুসকে যতটা সম্ভব সুস্থ রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কোভিড-১৯ রোগীদের ঘন ঘন তীব্র ফুসফুসে আঘাতের অভিজ্ঞতা হয় যা শ্লেষ্মাঝিল্লি ফুটো করে দিতে পারে। যাকে Acute respiratory distress syndrome বা শ্বাসযন্ত্রের তীব্র সঙ্কটের সিনড্রোম বলে। আর এই অবস্থার ফলে একজন রোগী নিজস্ব শ্লেষ্মায় ডুবে যেতে পারে। প্রাণপণ চেষ্টা করেও যেই শ্লেষ্মা কাটিয়ে শ্বাস গ্রহণ করা যায় না। এমন অবস্থায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রোগীর মৃত্যু হয়ে থাকে।

সিডিসির মার্বিডিটি এবং মর্টালিটি সাপ্তাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ হয় ২৮ মার্চ, যেখানে দেখা যায় আমেরিকায় কোভিড-১৯ এর ক্ষেত্রে ৭৮% রোগীর ঝুঁকির কারণ আগে থেকেই তাদের জটিল কোনো সমস্যা থাকা। যার মধ্যে বেশিরভাগ লোকের সমস্যা হিসেবে শ্বাসযন্ত্রের জটিলতা চিহ্নিত হয়। এছাড়াও ডায়াবেটিস, দীর্ঘস্থায়ী ফুসফুসের রোগ, কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ উল্লেখযোগ্য।

উল্লেখ করা ভালো হার্ট অ্যাটাক কোভিড-১৯ এর ক্ষেত্রে মৃত্যুর আরেকটি কারণ। সিডিসি বলেছে আপনি ধূমপান ত্যাগ করার পরে, আপনার রক্ত পাতলা হয়ে যায় এবং জমাট বাঁধার জন্য কম সংবেদনশীল হয়ে পড়ে। যার ফলে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা কমে যায়।

নভেল করোনা ভাইরাস থেকে নিজেকে বাঁচানোর জন্য আপনি ইতোমধ্যে সামাজিক দূরত্ব অনুশীলন, ঘন ঘন হাত ধোয়া, নাখ, মুখ, চোখে হাতের স্পর্শ এড়ানোর কাজ করে যাচ্ছেন। পাশাপাশি ধূমপান ত্যাগ করা, নিদেনপক্ষে কমিয়ে দেওয়া হতে পারে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে আরেকটি ধাপ এগিয়ে থাকা।

এ সম্পর্কিত আরও খবর