ভীতিকার শোনালেও বাস্তব তথ্য বলছে, করোনা সহজে বিদায় নেওয়ার মতো ভাইরাস নয়। দীর্ঘদিন প্রাণঘাতী করোনা বিপদের বিরুদ্ধে লড়াই করেই বাঁচতে হবে পৃথিবীর মানুষকে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান এমনই আশঙ্কা ব্যক্ত করেছে।
ফলে ভীতি নয়, লড়াইয়ের প্রস্তুতি জরুরি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। করোনায় মৃত্যু ও আক্রান্তের ভয়াবহতা ছাড়াও আনবে চরম অর্থনৈতিক মন্দা, বেকারত্ব এবং বৈশ্বিক খাদ্যাভাব, যার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়ার প্রতিও জরুরিভাবে মনোযোগ আকর্ষণ করা হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও) সর্বশেষ বুলেটিনে জানিয়েছে, বিশ্বব্যাপী লকডাউনের জেরে বহু দেশেই সংক্রমণের গতি কমানো গিয়েছে। তবে আত্মতুষ্টির জায়গা নেই। লকডাউন তুললে ফের বিপজ্জনক পর্যায়ে চলে যেতে পারে সংক্রমণের গতি। তাড়াহুড়ো করে লকডাউন তোলা নিয়ে করোনা আক্রান্ত দেশগুলোকে সতর্কবার্তাও দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
এদিকে, করোনার নানামুখী প্রতিক্রিয়া সম্পর্কেও জোরালো গবেষণা চলছে। সম্ভাব্য বিপদগুলোকে চিহ্নিত করে সন্ধান করা হচ্ছে উত্তরণের উপায়। করোনার কারণে চরম আর্থিক মন্দা ও বেকারত্বের পাশাপাশি এখন বিশ্বব্যাপী প্রচণ্ড খাদ্যাভাবেরও আশঙ্কা জানানো হয়েছে।
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডাব্লিউএফপি) সামনের বছরগুলোতে করোনার প্রভাবে বহুমাত্রিক দুর্ভিক্ষ ও খাদ্যাভাবের আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। সদ্য প্রকাশিত রিপোর্টে বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে সৃষ্ট দুর্ভিক্ষ ও খাদ্যভাবকে বাইবেলে বর্ণিত চরম খাদ্য সঙ্কটের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। সংস্থার 'গ্লোবাল রিপোর্ট অন ফুড ক্রাইসিস ২০২০' সম্ভাব্য খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা ও বিপর্যকে বলেছে, 'multiple famines of biblical proportions'।
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডাব্লিউএফপি)-এর প্রধান ডেভিড বেস্টলে 'গ্লোবাল রিপোর্ট অন ফুড ক্রাইসিস ২০২০' প্রকাশকালে বলেন, এই চরম খাদ্য সঙ্কটের ফলে দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক বিপর্যয় নেমে আসারও আশঙ্কা রয়েছ।
'গ্লোবাল রিপোর্ট অন ফুড ক্রাইসিস ২০২০'-এর মতে, খাদ্যাভাবের দিক থেকে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হবে ইয়েমেন, দক্ষিণ সুদান, আফগানিস্তান ও পার্শ্ববর্তী দেশগুলো, যেখানে চরম দুর্ভিক্ষ দেখা দেওয়ার ভয় রয়েছে। করোনার বিস্তৃতি ও সময়কাল যত বাড়ছে, খাদ্য সঙ্কট ও দুর্ভিক্ষও বিশ্বের তত বেশি দেশ আর অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়বে।
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডাব্লিউএফপি)-এর 'গ্লোবাল রিপোর্ট অন ফুড ক্রাইসিস ২০২০' মনে করে, করোনার কারণে আসন্ন ভীতিকর পরিস্থিতিতে মুষড়ে পড়লে হবেনা, বরং সবাইকে সাহসের সঙ্গে প্রস্তুতি নিতে হবে। মৃত্যু ও আক্রান্তের ক্রমবর্ধমান হারের মাধ্যমে যে প্রচণ্ড ক্ষতি করোনার কারণে হচ্ছে, তার প্রতিক্রিয়ায় সৃষ্ট খাদ্যাভাব ও দুর্ভিক্ষে যেন মানবিক বিপর্যয় না ঘটে, সমগ্র বিশ্ববাসীকে মিলেই সে চেষ্টা করতে হবে।