ধানমন্ডিতে একখণ্ড প্রাণময় সবুজ উদ্যান

, ফিচার

মায়াবতী মৃন্ময়ী, অতিথি লেখক, বার্তা২৪.কম | 2023-08-28 10:15:39

ঢাকা: রাপা প্লাজার মোড় থেকে ২৭ নং সড়ক ধরে সাত মসজিদ রোডের দিকে যেতে বাড়িটির দেখা পাওয়া যায়। মোড় থেকে কয়েক কদম এগিয়ে হাতের বাম পাশের বাড়িটির সামনে দাঁড়ালে রাস্তার উল্টো দিকে সাবেক মন্ত্রী হুমায়ূন রশীদ চৌধুরী আর রাজনীতিবিদ কাজি জাফরউল্লাহর পাশাপাশি দুটি বাড়ি। তারপরেই জেনেটিক্স প্লাজা।

রাজধানী ঢাকার প্রাণকেন্দ্রের এমন জায়গায় গিজগিজ করছে এপার্টমেন্ট, দোকান, শো রুম। ডেভেলপার আর বিল্ডার্সদের থাবায় একদা সবুজে-শ্যামলে সাজানো, বৃক্ষময়-পাখিডাকা ধানমন্ডি-লালমাটিয়া পরিণত হয়েছে অতীত দিনের স্মৃতি।

তবু কিভাবে যেন রক্ষা পেয়েছে ৩৯ শতাংশের বিরাট ও খোলামেলা বাড়িটি। শরিকি বিভাজন কিংবা প্রমোটারের কবল থেকে রক্ষা পাওয়া বাড়িটিতে এলে প্রাণ জুড়ায়। ধানমন্ডি-২৭ রোডের চরম যান্ত্রিক ও দমবদ্ধ পরিবেশে বাড়িটি যেন একখন্ড প্রাণময় উদ্যান।

বন্ধু পাপ্পুর বোনের বাসা বলে বাড়িটি আমাদের অনেকের অতি পরিচিত ও প্রিয় একটি জায়গা। গফরগাঁওয়ের মেয়ে হোসনা মঞ্জুর গৃহিণী হয়ে সারা জীবন স্বামীর সাথে দেশে-বিদেশে কাটিয়ে অবসর জীবনে বাড়িকে প্রকৃতি-বান্ধবভাবে মনের মতো করে সাজিয়েছেন। স্বামী মঞ্জুরুল আলম সাবেক রাষ্ট্রদূত। কবি জীবনানন্দের দেশ বরিশালের মানুষ তিনি। স্বামী-স্ত্রী দুজনেই মন-প্রাণ দিয়ে ফুলে ফুলে ভরে তুলেছেন বাড়িটিকে।

সন্তানরা দেশে বিদেশে কর্মরত বলে অখন্ড অবসর তাদের। বাগান ও পুষ্প-বৃক্ষের পরিচর্যা করাই জীবনের প্রান্ত বেলায় তাদের একমাত্র শখ এবং অদম্য নেশা। বিশ্বের নানা দেশে বসবাসের সুবাদে প্রচুর বাগান ও উদ্যান দেখেছেন এই দম্পতি। অবসরে নিজের বাড়িটিকে তেমনভাবে সাজাতে চান তারা।

লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে এনেছেন বিভিন্ন চারা। সেগুলোর পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষনে ব্যয় করছেন প্রয়োজনীয় শ্রম ও অর্থ। তাদের সাধনা সার্থকতা পেয়েছে সবুজের উদ্ভাসনে।

শত শত টবে শত শত জাতের ফুল ফোটে আছে বাড়ি জুড়ে। বাড়ির খোলা চত্বর ভরে আছে পুষ্প ও গুল্মে। গামলায় মাথা উঁচিয়ে হাসছে শাপলা, পদ্ম। বাড়ির দেওয়ালে ও পিলারে ঝুলে আছে বাহারি ফুল আর পাতা। রঙে আর গন্ধে মৌ মৌ করছে পুরো বাড়ি।

প্রকৃতির আচ্ছাদনে যেন চাপা পড়েছে মূল বাড়িটি। বাড়ির নির্মাণ ও প্রকৌশল আড়াল করে প্রকৃতিময়তায় ভাসছে পুরো কাঠামো। বনানীর গভীর কোলে প্রাকৃতিক আবাসে রূপান্তিত হয়েছে আধুনিক শহরের মধ্যকার এই আবাসস্থলটি। ফুল, পাতা, গুল্মের জগতে এসে ভিড় করেছে অনেক পাখি, পতঙ্গ, প্রজাপতি, ফড়িং।

পুষ্পচর্চার পাশাপাশি বিভিন্ন জাতের কুকুর আর মুরগি পালন করছেন এই দম্পতি। 'এরাও আমাদের পরিবারের সদস্য, নিত্য সঙ্গী', জানালেন তারা।

যান্ত্রিক জীবনের যন্ত্রণা আর স্বার্থান্ধ মানুষের কাছ থেকে দূরের পুষ্প-বিহঙ্গ- পশুদের অনাবিল সান্নিধ্যের এই বাড়িটিকে মনে হয় জগতের মাঝে এক আলাদা জগৎ, জীবন যেখানে স্বচ্ছ, সুন্দর এবং কোলাহল ও কালিমামুক্ত।

এ সম্পর্কিত আরও খবর