কিশোরগঞ্জের চমকপ্রদ 'মস্কো বাড়ি'

, ফিচার

ড. মাহফুজ পারভেজ, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর, বার্ডা২৪.কম | 2023-08-30 13:34:54

আকুবপুর (তাড়াইল, কিশোরগঞ্জ): তিনটি উপজেলা এসে মিশেছে এখানে। দক্ষিণে কিশোরগঞ্জ সদর, উত্তরে তাড়াইল আর পশ্চিমে ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলা। ত্রিমোহনী জায়গাটির নাম সুনামগঞ্জ বাজার।

শনিবার (২৫ আগস্ট) দুপুরে কিশোরগঞ্জ সদরের নীলগঞ্জ হয়ে এসেছি সুনামগঞ্জ বাজারে। আমাদের গন্তব্য আকুবপুর গ্রাম, উপজেলা তাড়াইল, জেলা কিশোরগঞ্জ। সেখানে রয়েছে কিশোরগঞ্জের 'মস্কো বাড়ি' নামে আলোচিত একটি নিবাস।

স্থানীয় লোকজনের কাছে পথের দিশা জানতে চাইতেই এককথায় দেখিয়ে দিলেন। ঘোরতর গহীন গ্রামের ভেতর ঝকঝক করছে উদ্যান শোভিত বাড়িটি।

একদা নাম ছিল মাস্টার বাড়ি।

তারপর ডাক্তার বাড়ি। এখন নাম 'রাশান বাড়ি' বা 'মস্কো বাড়ি'।

বাড়িটির পোষাকী নাম যদিও 'মায়া নীড়', তথাপি দশ গ্রামের মানুষ ডাকে  'মস্কো বাড়ি'। 'কেন এমন নাম?' জানতে চাইলে সহযাত্রী তরুণ উদ্যোক্তা সাইফুল ইসলাম অপু জানান, 'বাড়ির কর্তা ইঞ্জিনিয়ার মো. আমিরুল ইসলাম ১৯৮২ সালে মস্কো গমন করেন। সেখান থেকে তিনি সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন। তারপর এখানে মনের মতো বাড়ি, বাগান ও দুগ্ধখামার তৈরি করেন। পুরো জেলায় আদর্শ বাড়ি এটি।'

মস্কোতে রাশান স্ত্রী আর দুই পুত্র নিয়ে বসবাস করলেও ইঞ্জিনিয়ার মো আমিরুল ইসলাম বছরে ৪/৫ মাস দেশের বাড়িতে কাটান। কৃষিজাত সামগ্রী উৎপাদনের পাশাপাশি আধুনিক ইন্টারনেট, প্রযুক্তি এবং পরিবেশবান্ধব গাছপালায় সুন্দরভাবে সাজিয়েছেন বাড়িটিকে।

মস্কোর ইঞ্জিনিয়ারের বাড়ি বলে লোকজন সাধারণ ভাষায় একে 'মস্কো বাড়ি' ডাকে। বাগান, বিচিত্র ফুল, পত্রালি দিয়ে সাজানো বাড়িটিকে মনে হয় ইউরোপের খামার বাড়ির মতো। ফোয়ারা, পদ্ম পুকুর ছাড়াও শতাধিক গরুর খামার আছে বাড়িতে। কিশোরগঞ্জ জেলা সদরের মিষ্টির দোকানগুলো দুধের চাহিদা মেটায় এই 'মস্কো বাড়ি'।

বাড়িটি ঘুরে দেখা গেলো বাস্তুকলার পরিপাটি বিন্যাস। সিসি ক্যামেরা লাগানো রয়েছে সর্বত্র। বাড়ির ঘরে ঘরে মনিটর। বিদ্যুৎ,  সোলার সিস্টেমস। সম্পূর্ণ স্বয়ং সম্পূর্ণ ভাবে গড়ে তোলা হয়েছে বাড়িটিকে।

'মস্কো বাড়ি'র দায়িত্বশীলরা জানান, 'দেশে না থাকলে ইঞ্জিনিয়ার মো. আমিরুল ইসলাম মস্কো থেকে ইন্টারনেটে প্রতিদিন খোঁজ-খবর নেন ও প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা প্রদান করেন। সিসি টিভিতে সব কিছু নিজে পর্যবেক্ষণ করেন। প্রতিনিয়ত তিনি বাড়ি ও খামারটিকে গড়ে তুলতে সচেষ্ট রয়েছেন।'

হাজি মো হাবিবুর রহমানের পুত্র মস্কো প্রবাসী ইঞ্জিনিয়ার মো. আমিরুল ইসলাম সুদীর্ঘ বছর রাশিয়ায় থাকলেও সে দেশের নাগরিকত্ব নেন নি। বাংলাদেশের নাগরিক হিসাবে তিনি গ্রিন কার্ড নিয়ে সে দেশে বসবাস করেন। শেষ জীবনে তিনি দেশে ফিরে আসার সঙ্কল্প নিয়ে কাজ করছেন। গ্রামীণ পরিবেশে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা ও উন্নত প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে তিনি পরিবেশবান্ধব-কৃষিভিত্তিক জীবন-যাপন করার স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে চলেছেন।

বহু মানুষের আগ্রহস্থল 'মস্কো বাড়ি' তার স্বপ্নের বাস্তব ঠিকানা। আদর্শ ও স্বয়ংসম্পূর্ণ গ্রামীণ আবাস 'মস্কো বাড়ি' আর্থিকভাবে লাভজনক ও পরিবেশবান্ধব বসবাসের উজ্জ্বল-অনুকরণীয় মডেল।

এ সম্পর্কিত আরও খবর