শরতের অপার রূপ

, ফিচার

ড. মাহফুজ পারভেজ, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 23:43:14

কিশোরগঞ্জ: শহর পেরিয়ে গ্রামের দিকে যেতেই বাতাসে টের পাওয়া যায় শীতের টান। মাঠে মাঠে কচি সবুজের সমারোহ। বাংলার চিরন্তন শরৎ ক্রমেই মেলে দিচ্ছে নিজস্ব অপার রূপ।

জায়গাটির নাম লক্ষ্ণীগঞ্জ বাজার। সামনের বড় রাস্তাটি চলে গেছে হোসেনপুর উপজেলায়। জেলার পশ্চিম দিক দিয়ে হোসেনপুর-গফরগাঁও (ময়মনসিংহ) হয়ে ঢাকা যাওয়ার নতুন ও সহজ রাস্তা উদ্বোধনের অপেক্ষায়। ঢাকা-ময়মনসিংহ রোড ধরে নতুন রাস্তাটি স্বল্প সময়ে জেলার সঙ্গে রাজধানীর যোগাযোগ তৈরি করবে।

লক্ষ্ণীগঞ্জ ও আশেপাশের এলাকাগুলোসহ জেলার অবহেলিত পশ্চিমাঞ্চল ধীরে ধীরে সচল হয়ে উঠছে এই নতুন মহাসড়কের কারণে। স্থানীয় বাসিন্দা রিপন মিয়া এমন তথ্য দিয়ে বললেন, 'প্রতিদিনই জায়গার দাম বাড়ছে। ছোট-বড় মিল, কারখানা, পোল্ট্রি ফার্ম গড়ে উঠছে।'

বড় সড়ক থেকে গ্রামের ভেতরের দিকে ঢুকতেই নয়ন মুগ্ধকর ছবি। মাঠের পর মাঠ সবুজ কার্পেটের মতো ধানের তরুণ চারায় আন্দোলিত। স্নিগ্ধতা মাখিয়ে তাপহীন নরম আলোর খেয়ায় পুরো চরাচর যেন ভাসছে।

শরতের প্রথম মাস ভাদ্রের ১১ তারিখে রূপের ঋতু শরৎ খুলে দিয়েছে নিজের সৌন্দর্যের মহিমা। শান্ত, সমাহিত প্রকৃতির আভায় অপরূপ শরতের চিরন্তন সুষমা ঢলে পড়ছে আকাশ, মাটি ও বাতাসে। নীলাকাশে শুভ্র মেঘদল, মাটিতে সবুজের উদ্ভাস আর বাতাসে কোমল পরশ ছড়িয়ে দিচ্ছে শরতের ভালোবাসা।

আদিঅন্তহীন ফসলের মাঠ জুড়ে বাতাসে দোলা দিচ্ছে যে কচি ধানের সবুজ চারা, তারা নিয়ে আসবে আমনের সমৃদ্ধ ফলন। নিভৃত গ্রাম-বাংলায় জাগছে শরতের অনিন্দ্য শোভার সঙ্গে ফসলের আবাহন।

'মাঠে মাঠে এখন অগ্রহায়ণ ধান বপন করা হয়েছে। হাল্কা বৃষ্টি আর রোদে তরতর করে বড় হবে চারা। হেমন্তে ঘরে তোলা যাবে ধান', জানান স্থানীয় লোকজন। শহরের কাছাকাছি জায়গাটি ক্রমেই নগরায়নের থাবার মধ্যে চলে এলেও মানুষের প্রধান জীবিকা এখনও কৃষিভিত্তিক। মাছ চাষ, হাঁস, মুরগি পালনের হারও দিনে দিনে বাড়ছে।

ঘুরতে ঘুরতে দেখা যায় কৃষিজীবী মানুষের দিন শেষের ঘরে ফেরার ব্যস্ততা। দিনের পরিধিও ছোট হচ্ছে। প্রকৃতিতে টের পাওয়া যায় দ্রুত সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার তোরজোড়। সূর্য যেন বিকেলের পাশ গলে তাড়াতাড়ি অস্তে যাওয়ার জন্য উতলা। যতই প্রকৃতি শীতের দিকে যেতে থাকবে, ততই দিন ছোট হয়ে প্রলম্বিত হবে রাত্রি। শরৎ প্রকৃতি যেন সংগোপনে জানান দিচ্ছে প্রাকৃতিক পালাবদলের ধ্বনি।

দেখতে দেখতে টুক করে ডুবে গেল সূর্য। গোধুলীর আবির রঙের সঙ্গে অদ্ভুত বর্ণালী আকাশে ছড়িয়ে দিল মায়াবী আবেশ। আলোর বন্যার শেষে অন্ধকার নেমে আসতে দেখা গেলো দিগন্তে। দিন-রাত্রির পালাবদলের সন্ধিক্ষণে বড় মায়ায় আর ভালোবাসায় পৃথিবী ছুঁয়ে গেলো মাটি, মানুষ ও প্রকৃতিকে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর