`পুরাতন সু-হাসপাতালের’ ডাক্তার শতিশ বাবু

, ফিচার

সিদ্দিকুর রহমান, ডিস্ট্রিক করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-28 00:36:06

বরিশাল: সত্তরোর্ধ্ব শতিশ বাবু। শরীর জুড়ে বার্ধক্যের ছাপ। তবে চোখ-মুখে হার না মানার দৃঢ়তা। সবার কাছে পরিচিত ডাক্তার বাবু নামেই। বরিশাল ফকিরবাড়ি রোডের পুরাতন সু-হাসপাতালের একমাত্র ডাক্তার। দীর্ঘ ৬০ বছর ধরে এই কাজ তার!

ডাক্তার শতিশ বাবু, শুনে ভাবছেন এমবিবিএস বা প্যারামেডিক করা কোনো ডাক্তার হবে। না, শতিশ বাবু কোনো মানুষের ডাক্তার নয়। মানুষের পরিহিত জুতা-স্যান্ডেলের ডাক্তার এই শতিশ বাবু।

পাকিস্তান আমল থেকেই পুরাতন জুতা সেলাইয়ের পেশায় অভিজ্ঞ শতিশ বাবু। তাইতো এলাকায় নামে ছোট-বড় সকলের কাছেই তিনি ডাক্তার বাবু পরিচিত নামে পরিচিত। ফকিরবাড়ী রোডে ছোট্ট একটা দোকান রয়েছে তার, আর ‘পুরাতন সু-হাসপাতাল’ নামটি তারেই দেওয়া।

বরিশাল নগরের ফকিরবাড়ী রোডে ছোট্ট দোকানটিতে তার পুরো জীবনটাই কেটে যাচ্ছে। বয়সের ভারে নুয়ে পড়লেও, এখনো দিব্বি আগের মতই কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। জুতা মেরামতে এলাকাবাসীর কাছে শতিশ বাবুর কদর পাক্কা ষোল আনা।

শরতের এক কড়ার রোদের দুপুরে বার্তা ২৪. কমের সঙ্গে কথা হয় শতিশ বাবুর। জানালেন, শৈশবের কথা, কিভাবে জড়িয়ে পড়লেন জুতা-স্যান্ডেল মেরামতের কাজে।

প্রথমে কথা হয় তার ডাক্তার নামটি নিয়েই। শুনেই হেসে দেন। এলাকায় ডাক্তার বাবু নামটি বেশ উপভোগ করেন জীবন সংগ্রামী এই মানুষটি। বললেন, মানুষের শরীর খারাপ হলে যেমন হাসপাতালে যায়, ডাক্তার অনেক সময় কাটাছেঁড়া করে ওষুধ দেয়। তেমনি জুতা স্যান্ডেল নষ্ট হলে ছিড়ে গেলে আমার কাছে আসে। আমি কাটাছেঁড়া করে তালি দিয়ে মেরামত করি। এজন্য সবাই ডাক্তার ডাকে।

শতিশ বাবু বলেন, ‘আড়াই বছর বয়সে বাবা, আর ১২ বছর বয়সে মারা যান মা। এরপর থেকেই পরিবারের অর্থের জোগান দিতেই শুরু করেন এই পেশা।’

৭৩ বছর বয়সী শতিশ বাবু বরিশাল অনেক ঘটনা ও ইতিহাসের সাক্ষী। এক সময়ে ওয়ার্কার্স পার্টির একনিষ্ট কর্মীও ছিলেন। শেষ বয়সে এসে বয়স্ক ভাতা ছাড়া কোন সুযোগ সুবিধাই পান না তিনি।

যেখানে জীবনের শেষ বেলায় আরাম আয়েশে কাটানোর কথা, সেখানে শতিশ বাবু এখনও সংসারের ঘানি টেনেই যাচ্ছেন। চার ছেলে, তিন মেয়ে এবং স্ত্রী নিয়ে নয়জনের সংসার তার। এক মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। আর ছেলেরা ছোট ছোট কাজে জড়িত। তাই তার এই জুতা সেলাইয়ের থেকে উপার্জিত আয়ই পরিবার পরিচালনার একমাত্র মাধ্যম।

আয়ের বিষয়ে ডাক্তার বাবু জানান, আবহাওয়ার উপর নির্ভর করে তার আয় বৃদ্ধি পায়। বর্ষা থাকলে তার আয় কমে যায়। তাছাড়া দৈনিক সর্বনিম্ন ২৫০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৩৫০ টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারেন।

তবে এই কাজে প্রায়ই বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় তার বয়স, ফলে বেশি পরিশ্রমও আর করতে পারেন না। তাই অল্প আয়ের এই মানুষটি প্রত্যাশা করেন একটু সহায়তা। যাতে জীবনের শেষ সময়ে একটু ভালো ভাবে বেঁচে থাকতে পারেন।

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর