সৌন্দর্যের মোহনীয় মায়াজাল খুলনার পদ্মবিল

, ফিচার

আশরাফুল ইসলাম নূর, ডিস্ট্রিক করেসপন্ডেন্ট,বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 02:37:36

“জলে ভাসা পদ্ম আমি, শুধুই পেলাম ছলনা/ ও আমার সহেলি, আমার নাই তো কোথাও কোনো ঠাঁই/ বুকের জ্বালা কোথায় যে জুরাই!” কর্মব্যস্ত এক ঘেঁয়েমী যান্ত্রিক জীবনে জ্বালা জুড়াতে একবার হলেও ঘুরে আসতে পারেন আবহ বাংলার অপরূপ প্রকৃতির প্রতিচ্ছবি খুলনার তেরখাদা উপজেলার ভূতিয়ার বিলে।

শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায় ভূপেন হাজারিকার সুরে আর প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কালজয়ী গানের মতো; যারা ছলনার ছলে আবিষ্ট তারা তো বটেই আর প্রকৃতি ও ভ্রমণ পিপাসুদের পদ্মবিলের অপূর্ব সৌন্দর্য্য যেন হাত নেড়ে ডাকছে তাদের।

নীল আকাশের ছাউনিতে ২০ হাজার একর জমির জলাবদ্ধ বিশাল বিলে পদ্মপাতার জলে নিজেকে বিলিয়ে দিতে পারবেন নিশ্চিত। আর সঙ্গে একটু রোদ, মেঘ-বৃষ্টির খেলা হলে তো জবাব নেই।

আর যদি নগর বাউলের কণ্ঠে গান বাজতে থাকে “কবিতা, তুমি স্বপ্নচারিণী হয়ে খবর নিও না/ কবিতা, এই নিশাচর আমায় ভেবোনা সুখের মোহনা/ দেখবে আমাদের ভালবাসা হয়ে গেছে কখন যেনো; পদ্ম পাতারও জল”। গানের তালে তালে আনাবৃত আকাশের নিচে বিশাল জলরাশিতে ছোট্ট ডিঙ্গি নৌকায় বসে পদ্ম ফুল ও সবুজের সমারোহে প্রকৃতির এক মোহময় মায়াজালে ফেঁসে যেতে পারেন আপনিও।

খুলনার জেলখানা ঘাট পার হয়ে সেনেরবাজার। এরপর বাস-ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল বা স্থানীয় যানবাহন অটোতে চড়ে তেরখাদা বাজারে (ইখড়িকাটেঙ্গা) পৌঁছে ভ্যান যোগে ভূতিয়ার বিলে পৌঁছানো যায়।

তারপর নৌকা নিয়ে পদ্ম পাতার জল পেরিয়ে আকাশের কাছাকাছি মিলে যেতে পারবেন দর্শনার্থীরা। ভার্চুয়াল জগতে ডুব দিয়ে থাকা মানুষগুলোকে ঘুরিয়ে আনতে পারেন এই অকৃত্রিম জাগতিক স্বপ্নসুধা থেকেও। খাবার ও বিশুদ্ধ পানি, ছাতাসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী দিতে ভুলবেন না যেনো; কারণ বিলের আশেপাশে আপনার প্রয়োজনীয় কিছু নাও পেতে পারেন।

আঠারবেকি নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে খুলনার তেরখাদা উপজেলা ও নড়াইল জেলার অংশ বিশেষ নিয়ে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে উঠেছে ভূতিয়ার বিল। ২০০৩ সাল থেকে ভূতিয়ার বিলের ২০ হাজার একর জমিতে স্থায়ী জলাবদ্ধতা ও অনাবাদী। বিলের উপর নির্ভরশীল অর্ধাহারে-অনাহারে পরিবারগুলোর জীবিকা চলে মাছ ধরে, শাপলা, পদ্ম ও শাক-সবজি বিক্রি করে।

২০১১ সালে খুলনা খালিশপুরের জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিলের জলাবদ্ধতা দূরকরণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতিতে ২০১৩ সালে একনেকে অনুমোদিত প্রকল্পে ২৮১ কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে ৩৩টি খাল ৮৯ কি.মি এবং আঠারবেকি ও চিত্রা নদীর সাড়ে ৬৭কি.মি খননকার্য চলছে। তাই এ বছরেই ভূতিয়ার বিলে না গেলে বিশাল পদ্মকাননের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য দেখা থেকে বঞ্চিত হতে পারেন আপনি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর