পাইলস, যাকে অর্শ্বরোগও বলা হয়। বৃহদান্ত্রের শেষাংশে রেকটামের ভেতরে ও বাইরে থাকা কুশনের মতো একটি রক্তশিরার জালিকা থাকে, যা প্রয়োজন সাপেক্ষে সংকুচিত ও প্রসারিত হয় যা আমরা পাইলস নামে জেনে থাকি। যখন পায়ুপথে এসব শিরার সংক্রমণ বা প্রদাহ হয় এবং চাপ পড়ে তখন পাইলস বা হেমোরয়েডসে প্রদাহ হয়। যাকে সাধারণ ভাষায় অর্শরোগ বলা হয়।
এটি মলদ্বারের এক ধরনের জটিল রোগ। পাইলসের ফলে রক্তনালিগুলো বড় হয়ে গিয়ে ভাসকুলার কুশন তৈরি হয়। শিশু থেকে বৃদ্ধ যেকোন বয়সের মানুষ এ জটিল রোগে আক্রান্ত হতে পারে। পাইলস হলে সাধারণত চুলকানি বা রক্তক্ষরণ হয়। মলদ্বারের নিচের অংশে গোল আকারে ফুলে উঠে, ফলে যে কোন সময় সেই জায়গা থেকে রক্তপাত হতে থাকে। এটি খুবই অস্বস্তিকর এবং যন্ত্রনাদায়ক।
দীর্ঘকালীন কোষ্ঠকাঠিন্যের রোগীদের পাইলসের সমস্যা দেখা দেওয়ায় অস্বাভাবিক কিছু নয়। এছাড়া যাদের মলত্যাগের অকারণে বেগ প্রদানের বদভ্যাস রয়েছে, তারাও এই রোগ বাধিয়ে ফেলতে পারেন। আসুন তাহলে বিস্তারিত জেনে নেই পাইলস কী, পাইলসের লক্ষণ ও চিকিৎসাসহ কিছু তথ্য।
পাইলসের প্রকারভেদ
সাধারণত পাইলস দুই প্রকার হয়ে থাকে- অভ্যন্তরীণ পাইলস ও বাহ্যিক পাইলস।
অভ্যন্তরীণ পাইলস এবং বাহ্যিক পাইলস মলদ্বারে তাদের অবস্থানের উপর ভিত্তি করে। এগুলি সাধারণ এবং মলদ্বারের ভিতরে মলদ্বারের খোলার উপরে ২ থেকে ৪ সেন্টিমিটারের (সেমি) মধ্যে ঘটে।
অভ্যন্তরীণ পাইলস
অভ্যন্তরীণ অর্শ্বরোগ চারটি শ্রেণি বা পর্যায়ের হয় যা প্রোল্যাপের ওপর ভিত্তি করে।
প্রথম পর্যায়- পাইলস ফুলে বাইরের দিকে বের হয়ে আসে না বা প্রলেপস হয় না।
দ্বিতীয় পর্যায়- মলমূত্র ত্যাগের পর পাইলস ফুলে বাইরের দিকে বের হয়ে আসে এবং তারপর আপনা-আপনি ঠিক হয়ে যায়।
তৃতীয় পর্যায় - পাইলস ফুলে বাইরের দিকে বের হয়ে আসে এবং নিজে নিজে ঠিক করতে হয়।
চতুর্থ পযার্য় - পাইলস ফুলে বাইরের দিকে বের হয়ে আসে বা প্রলেপস হয় এবং তা আর নিজে ঠিক হয় না বা করা যায় না।
বাহ্যিক পাইলস
বাহ্যিক পাইলস মলদ্বারের বাইরের প্রান্তে ছোট ছোট গলদ গঠন করে। এগুলো প্রায়শই চুলকানিদায়ক এবং বেদনাদায়ক হয়ে থাকে।
পাইলসের কারণ
পাইলসের প্রধান কারণগুলো হচ্ছে- দীর্ঘদিন কোষ্ঠকাঠিণ্যে ভোগা, পুরনো ডায়রিয়া, মলত্যাগে দীর্ঘক্ষণ টয়লেটে বসে থাকা ও দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা। এছাড়া পারিবারিক ইতিহাস, আঁশযুক্ত খাবার কম খাওয়া, ভারি মালপত্র বহন করা, স্থুলতা, কায়িক শ্রম কম করা।
গর্ভকালীন সময়ে, পায়ুপথে যৌনক্রিয়া, যকৃত রোগ বা লিভার সিরোসিস ইত্যাদি কারণেও এ রোগের আশঙ্কা বেড়ে যায়। সর্বোপরি পোর্টাল ভেনাস সিস্টেমে কোনো ভাল্ব না থাকায় উপরিউক্ত যে কোনো কারণে পায়ু অঞ্চলে শিরাগুলোতে চাপের ফলে পাইলস সৃষ্টি হয়।
পাইলসের লক্ষণ-
পাইলস রোগে যেসব লক্ষণ দেখা যায় তা হচ্ছে- পায়ুপথের অন্ত্র বা ভেতরের পাইলস রোগে সাধারণত তেমন কোনো ব্যথা বেদনা, অস্বস্তি থাকে না। অন্যদিকে পায়ুপথের বহিঃঅর্শরোগে পায়ুপথ চুলকায়, বসলে ব্যথা করে, পায়খানার সঙ্গে টকটকে লাল রক্ত দেখা যায় বা শৌচ করার টিস্যুতে তাজা রক্ত লেগে থাকে, মলত্যাগে ব্যথা লাগা, পায়ুর চারপাশে এক বা একের অধিক থোকা থোকা ফোলা থাকে।
পাইলসের সাধারণ লক্ষণগুলো হলো-
>> পায়ু অঞ্চলে ব্যথা ও চুলকানি।
>> মল বা মলত্যাগের পর রক্ত।
>> মলদ্বারের চারপাশে একটি শক্ত গলদা।
অভ্যন্তরীণ অর্শ্বরোগের লক্ষণ-
>> মল অতিক্রম করার সময় অতিরিক্ত চাপ বা জ্বালা হতে পারে।
>> মলত্যাগের সময় ব্যথাহীন রক্তপাত।
>> যদি পাইলস প্রল্যাপস, ব্যথা এবং জ্বালা হয়।
বহিরাগত অর্শ্বরোগের লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে-
>> মলদ্বারের চারপাশে চুলকানি।
>> মলদ্বারের কাছে বেদনাদায়ক মাংসল গলদ।
>> বসার সময় ব্যথা বা অস্বস্তি।
>> মলদ্বারে রক্তক্ষরণ।
পাইলসের চিকিৎসা-
পায়ুদ্বার সংক্রান্ত যে কোনো সমস্যা হলে প্রথমেই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। এ ধরনের অসুখের ক্ষেত্রে অনেকেই চেপে যান প্রথমে, যা অসুখের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয়। চিকিৎসকেরা রোগ নির্ণয় করে প্রক্টোস্কোপির মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে চিকিৎসা শুরু করতে পারেন।
প্রথম পর্যায়ে মলম, ইনজেকশন বা রাবার ব্যান্ড লাইগেশনের সাহায্যেই রোগ নিরাময় করা সম্ভব। অসুখের মাত্রা বাড়াবাড়ি পর্যায়ে চলে গেলে অবশ্য শল্যচিকিৎসা ছাড়া উপায় নেই। তবে সব কয়টি ক্ষেত্রেই রোগটি ফিরে আসার শঙ্কা থাকে, যদি না সাবধানে থাকা যায়।
এজন্য বদলে ফেলুন লাইফস্টাইল। পাইলস বা পায়ুদ্বার সংক্রান্ত যে কোনো অসুখের জন্য পরোক্ষভাবে দায়ী অনিয়মিত লাইফস্টাইল। এজন্য খাওয়ার অভ্যাস বাড়াতে হবে। এড়িয়ে চলতে হবে ক্যাফিন জাতীয় পানীয়, তেল-ঝাল মশলাযুক্ত রান্না। পাইলসের রোগীদের পক্ষে শুকনো লঙ্কা বিষতুল্য। ভারী জিনিস তোলাও কিন্তু বারণ।
পাইলস থেকে ক্যান্সার হওয়ার পূর্বেই এর চিকিৎসা করা জরুরি। রিং লাইগেশন এবং লংগো অপারেশনের দ্বারা শতকরাই প্রায় ১০০% রোগী সুস্থ হয়ে উঠছেন। প্রচলিত এই অপারেশনে মলদ্বারের তিনটি অংশ কাটার প্রয়োজন হয়।
এই অপারেশন শুধু তাদের জন্যই করা হয় যাদের রিং লাইগেশন এর জন্য উপযুক্ত হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং যারা লংগো অপারেশন করানোর জন্য মেশিন কিনতে অক্ষম।
চলিত অপারেশনের মতই আরেকটি অপারেশন হলো লেজার অপারেশন। পার্থক্য শুধু এটাই যে, লেজার অপারেশনে বিম ব্যবহার করা হয়। এবং প্রচলিত অপারেশনে সার্জিক্যাল নাইফ ব্যবহার করে কাটাকাটির কাজ করা হয়।
চলিত অপারেশনের মতো লেজার অপারেশনে ক্ষত স্থান হবে তিনটি । লেজার অপারেশন ও সাধারণত অপারেশ
লেখক: ডা. সুশীত কুমার বিশ্বাস, এমবিবিএস, বিসিএস (স্বাস্থ্য) এফসিপিএস (সার্জারি), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ফরিদপুর।