সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশি নাগরিক সমাজের বিবৃতি

, প্রবাসী

নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-30 03:30:24

আবারো সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ক্ষত-বিক্ষত হয়েছে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়। ইসলাম ধর্মের অবমাননার অপ্রমাণিত অভিযোগের ভিত্তিতে সারা দেশে দুর্গা পুজার প্রতিমা ও মণ্ডপ ভাঙার প্রতিযোগিতা চলেছে। অপবিত্র হয়েছে উৎসব মুখর পূজা মণ্ডপ। হতাহত এমন মানুষের সংখ্যা শতাধিক।

যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রবাসী নাগরিক সমাজ এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছে। দুর্গাপূজা বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাৎসরিক ধর্মীয় উৎসব। প্রতিটি হিন্দু পরিবার এই উৎসবের অপেক্ষায় সারা বছর পথ চেয়ে বসে থাকে। শুধু পুজা উৎসবে অংশ নেওয়ার জন্য অসংখ্য প্রবাসী হিন্দু পরিবার বাংলাদেশে বেড়াতে যান। এবারেও তারা গেছেন, কিন্তু উৎসবের বদলে তাদের মুখোমুখি হতে হয়েছে কুৎসিত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার। এই ঘটনা গভীর গ্লানির। আমরা এই নিন্দা জানাই। 

সরকারিভাবে বলা হয়েছে এটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা, এর পেছনে গভীর রাজনৈতিক দুরভিসন্ধি রয়েছে। কিন্তু এটি যে বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় তার প্রমাণ প্রায় অর্ধ শতক প্রতীমা ভাংচুরের ঘটনা ও অসংখ্য পুজা মন্ডপে হামলা। দাঙ্গার আগে ও পরে পর্যাপ্ত নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণে আইনশৃঙ্খলা প্রশাসনের ব্যর্থতা অস্বীকারের কোন উপায় নেই। চলতি প্রশাসন বারবার আশ্বাস দিয়েছেন, সকল সাম্প্রদায়িক উস্কানির বিরুদ্ধে তারা যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন। বাংলাদেশে এর আগেও আমরা দেখেছি দাঙ্গার পরপর সরকার এই রকম কঠোর ভাষায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকে, কিন্তু প্রকৃত অপরাধী কখনোই খুঁজে বের করা হয় না। কেউ যথাযথ শাস্তিও পায়না। আমাদের দাবি, এই নাটকের অবসান হোক, স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সকল অপরাধীর যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা গৃহীত হোক।

দাঙ্গা রোধের ব্যর্থতা কেবল সরকারের নয়, নাগরিক সমাজের। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গঠনের অঙ্গিকার নিয়ে আমরা মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলাম, কিন্তু স্বাধীনতার অর্ধ শতক পরেও প্রকৃত অসাম্প্রদায়িক চেতনা নির্মাণে আমরা সক্ষম হয়নি। এই ব্যর্থতা নাগরিক ও সুশীল সমাজকে বহন করতেই হবে। প্রতিটি সংখ্যালঘু শুধু এই দেশের সমান অধিকারভোগী নাগরিকই নয়, তারা আমাদের প্রতিবেশী ও বন্ধু। তাদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করণে যে অক্ষমতা, তার দায়ভার এই নাগরিক ও সুশীল সমাজকেও নিতে হবে। তাদের দ্বিগুণ প্রত্যয় নিয়ে সকল রকম সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হতে হবে। আমরা তাদের আশ্বাস দিতে চাই, এমন লড়াইতে আমরা আপনাদের সঙ্গে আছি।

প্রবাসী বাংলাদেশি হিসাবে বাংলাদেশের সরকারের কাছে আমাদের দাবি, অবিলম্বে দাঙ্গার সকল ঘটনা তদন্ত ও ঘটনার সঙ্গে জড়িত সকল ব্যক্তি অথবা গ্রুপকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা হোক। একইভাবে ভবিষ্যতে যাতে এমন ঘটনা না ঘটতে পারে সেজন্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণে একটি সংখ্যালঘু কমিশন গঠন করা হোক। এই কমিশনের দায়িত্ব হবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় ও অন্যান্য সকল নাগরিক সমানাধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সুপারিশ চূড়ান্ত করা।   

এ সম্পর্কিত আরও খবর