কপ-২৫: বৈশ্বিক উষ্ণতা রুখতে নেই কোনো কার্যকর পদক্ষেপ

, প্রবাসী

কবির আল মাহমুদ, স্পেন | 2023-08-29 10:14:21

জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনে বৈশ্বিক উষ্ণতা রুখতে বিশ্বনেতারা কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছেন। স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদে অনুষ্ঠিত কপ-২৫ সম্মেলনের অতিরিক্ত দু’দিনের আলোচনার পর রোববার (১৫ ডিসেম্বর) একটি সমঝোতামূলক চুক্তিতে পৌঁছেছেন নেতারা।

২ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া সম্মেলন ১৩ ডিসেম্বর শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কোনো চুক্তিতে না পৌঁছানোয় আলোচনার সময়সীমা বাড়ানো হয়। তবে তাও কোনো কাজে আসেনি।

‘টাইম ফর অ্যাকশন’ (এখনই পদক্ষেপ নেয়ার সময়) স্লোগানে শুরু হলেও এখনই কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেননি নেতারা। ফলে এ বছরের মতো ‘লাইফ সাপোর্টে’ চলে গেছে জলবায়ু সম্মেলন।

কপ-২৫ সম্মেলনে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ছবি: সংগৃহীত

অতিরিক্ত প্রায় ৩৬ ঘণ্টার আলোচনায় ক্লান্ত প্রতিনিধিরা কার্বন রোধে বিশ্বব্যাপী প্রতিক্রিয়া বাড়ানোর মূল প্রশ্নে একমত হয়েছেন। আগামী বছরে গ্লাসগোতে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে নতুন জলবায়ু প্রতিশ্রুতি নিয়ে হাজির হতে হবে প্রত্যেক দেশকে। কিন্তু কার্বন বাণিজ্য বন্ধের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে বিভাজন থেকেই গেছে।

আগামী সম্মেলনে এ বিষয়ে আলোচনা হবে বলে তুলে রাখা হয়েছে। জলবায়ু সম্মেলনে বাস্তবিক চুক্তিতে পৌঁছুতে ব্যর্থ হওয়ায় বিক্ষোভ করছেন পরিবেশবাদী সংগঠনের কর্মীরা। তারা বলছেন, সম্মেলনের স্লোগান অনুসারে কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়ায় বৈঠকটি কার্যত ব্যর্থ হয়েছে।

বাংলাদেশ, কোরিয়া ও জাপানের সঙ্গে যৌথভাবে ওই পার্শ্বসম্মেলনে বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বাংলাদেশকে জলবায়ু পরিবর্তনের নিষ্পাপ শিকার বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংকের হিসাব মতো বাংলাদেশের মাথাপিছু কার্বন নিঃসরণের হার মাত্র শূন্য দশমিক পাঁচ টন। সেখানে উন্নত দেশগুলোর মাথাপিছু গড় কার্বন নিঃসরণ ছয় টন।

স্থানীয় সময় গত বুধবার (৯ ডিসেম্বর) রাতে স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদে এক সভায় সভাপতির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন। জাতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক ‘কনফারেন্স অব পার্টিস’–এর (কপ) ২৫তম সম্মেলনে বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নে ‘ক্লাইমেট চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভ অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক ওই পার্শ্বসম্মেলন হয়। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালক মির্জা শওকত আলী।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা এরই মধ্যে এক ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে গেছে। বর্তমান হারে কার্বন নির্গমন হতে থাকলে এ তাপমাত্রা বৃদ্ধি প্রাক-শিল্প যুগের চেয়ে তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যাবে। অথচ এক ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বৃদ্ধির ভয়ানক পরিণতি এখন পৃথিবী দেখছে। এ তাপমাত্রা তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গেলে পৃথিবীর অস্তিত্বই বিলীন হয়ে যাবে। এ অবস্থায় পৃথিবীকে বাঁচাতে হলে সব দেশের সম্মিলিত ও সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। তাই আমরা জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় বিশ্বের সব দেশের ঐক্যবদ্ধ ও সমন্বিত উদ্যোগ চাই।

তথ্যমন্ত্রী আরো বলেন, দায়ী না হয়েও বাংলাদেশ সীমিত সম্পদ নিয়ে নিজ উদ্যোগে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সারা দেশে ৫০ লাখেরও বেশি সোলার সিস্টেম স্থাপন করা হয়েছে।

বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এখন দৃশ্যমান। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ততা বেড়ে চলেছে। দেশের কোনো কোনো অঞ্চলে মরুকরণ দেখা দিয়েছে। সম্ভাবনার চেয়ে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কম হচ্ছে। অন্যদিকে, বাংলাদেশের পানির প্রধান উৎস হিমালয়ের বরফ দ্রুত গলছে। এর ফলে বাংলাদেশ এখন জলবায়ু পরিবর্তনের বহুমাত্রিক হুমকির মুখে, যোগ করেন মন্ত্রী।

কপ-২৫ সম্মেলনে অংশ নেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, ছবি: সংগৃহীত

হাছান মাহমুদ বলেন, ক্ষুদ্র দ্বীপদেশগুলোও জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকির মুখে। এসব দেশে মরুকরণেরও সুযোগ নেই। তা ছাড়া এসব দেশের জনসংখ্যা কম। কিন্তু বাংলাদেশ একটি জনবহুল দেশ। বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলেই চার কোটি ২০ লাখ মানুষের বসবাস। এর ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশ অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

মূল প্রবন্ধের ওপর আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশের সংসদ সদস্য জাফর আলম ও রেজাউল করিম, বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আহমেদ কায়কাউস ও পরিবেশ সচিব আবদুল্লাহ আল মোহসীন চৌধুরী। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নূরুল কাদের। বাংলাদেশে অভিযোজন প্রকল্প বাস্তবায়নে সহায়তাকারী দেশগুলোর মধ্যে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিনিধিরা তাদের কার্যক্রম এ অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, সীমিত সম্পদ সত্ত্বেও জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশ অনেক ক্ষেত্রেই অগ্রপথিক। এরই মধ্যে বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থে ৭২০টি অভিযোজন প্রকল্প হাতে নিয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর