দিল্লিতে বাংলাদেশ দূতাবাসে বিজয় দিবস উদযাপন

, প্রবাসী

শরিফুল ইসলাম, নিউ দিল্লি থেকে | 2023-09-01 20:05:26

লাল-সবুজ-হলুদ-সাদাসহ বিভিন্ন রঙে সাজানো হয়েছে ভবনের প্রবেশদ্বার থেকে শুরু করে ভেতর পর্যন্ত। জ্বলছে জোনাকি আলোকবাতিও। মনোমুগ্ধকর এক রঙিন পরিবেশ। অতিথিরাও আসছেন বিভিন্ন রঙের পোশাক পরে। তবে, বাংলাদেশিদের পোশাকে লাল-সবুজের প্রাধান্য। অতিথিদের হাসিমুখে অভ্যর্থনা জানাচ্ছেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনে বিজয় দিবস উদযাপন অনুষ্ঠান শুরু হয় সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায়। বর্ণিল ও মনোমুগ্ধকর এ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন অনুষ্ঠানের আয়োজক ও আমন্ত্রণকারী বাংলাদেশ হাইকমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী।

বক্তব্যে তিনি বাংলাদেশের জন্মের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস তুলে ধরেন। সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী বলেন, বহু প্রাণের বিনিময়ে, অসংখ্য মায়ের বুক খালি হওয়ার মাধ্যমে ১৯৭১ সালের এ দিনে বাংলাদেশ নামে একটি দেশের জন্ম হয়। সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে বাঙালিরা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে পাক হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে।

এ কূটনীতিক আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে মুক্তিসংগ্রামের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, আর আজ তারই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোনার বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে নিজেকে নিয়োজিত করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের দ্রুত উন্নয়নশীল দেশগুলোর একটিতে পরিণত হয়েছে।

বক্তব্য শেষ করার আগে আগত অথিতিদের জন্য বাংলাদেশের বিখ্যাত ফখরুদ্দিনের কাচ্চি বিরিয়ানীর বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানান হাইকমিশনার। ঢাকা থেকে ফখরুদ্দিন বিরিয়ানীর বার্বুচিদের নিয়ে আসা হয় বিরিয়ানী রান্না করতে।

এর পর শুরু হয় সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার। এর আগে হাইকমিশনারের স্ত্রী তোহফা জামান আলী শিল্পীদের উত্তরীয় ও ফুলের তোড়া দিয়ে সম্মান জানান। এর পরপরই হাইকমিশনে কর্মরত কুটনীতিক ও কর্মকর্তাদের স্ত্রী ও স্বামীরা সমবেতভাবে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন।

এ সময় আবেগঘন পরিবেশ তৈরি হয়। এরপর বাংলাদেশ দূতাবাসের এক কর্মকতা আবৃত্তি করেন শামসুর রাহমানের ‘তোমাকে পাওয়ার জন্য, হে স্বাধীনতা’ কবিতাটি।

প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের লেখা ‘আমি বাংলায় গান গাই, আমি বাংলার গান গাই’ গানটি সমবেত পরিবেশনার মাধ্যমে শুরু হয় দিল্লিভিত্তিক বাঙালিদের সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘অহং’-এর শিল্পীদের পরিবেশনা। অহংয়ের শিল্পীরা একে একে পরিবেশন করেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘দুর্গম গিরি, কান্তার-মরু, দুস্তর পারাবার হে’, আপেল মাহমুদের ‘এক সাগর রক্তের বিনিময়ে,’ গোবিন্দ হালদারের ‘পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে, রক্ত লাল, রক্ত লাল’ গান।

বাংলাদেশের বাইরে এক খণ্ড বাংলাদেশেরই প্রতিধ্বনি হতে থাকে একের গানের মধ্যে। দর্শকরাও শিল্পীদের সঙ্গে সুর মেলান এ সময়।

অনুষ্ঠানের মধ্যে একটু ভিন্নতা আনতে গান থামিয়ে আবার একটি স্বাধীনতা বিষয়ক কবিতা আবৃত্তি করা হয়। ‘স্বাধীনতা তুমি রবি ঠাকুরের অজর কবিতা’ কবিতাটির আবৃত্তির সঙ্গে নেচেছেন এক শিল্পী। এ সময় দর্শকের করতালিতে মুখরিত হয় দূতাবাসের অডিটোরিয়াম।

এরপর আবার গানে ফিরে যান অহংযের শিল্পীরা। এবার তারা সমবেতভাবে পরিবেশন করেন ‘ও আমার দেশের মাটি তোমার পরে ঠেকাই মাথা’ ও ‘মুক্তির মন্দির সোপান-তলে’ গান। এরপর দ্বিজেন্দ্র লাল রায়ের ‘ধন ধান্যে পুষ্পে ভরা আমাদের এই বসুন্ধরা’ গানের সঙ্গে নৃত্যের পরিবেশন করেন অহংয়ের দুই শিল্পী। অংয়ের ঘণ্টারও বেশি সময়ের পরিবেশনার শেষ হয় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘প্রাণ ভরিয়ে, তৃষা হরিয়ে’ সঙ্গীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে।

 দিল্লিতে বাংলাদেশ দূতাবাসে বিজয় দিবস উদযাপন, ছবি: বার্তা২৪.কম

অহংয়ের পরিবেশনার পর বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মণন্ত্রালয়ে সহকারী কমিশনার হিসেবে ২০১৮ সালে যোগ দেয়া ব্যাচের কয়েকজন ‘সূর্যোদয়ে তুমি, সূর্যাস্তে তুমি’ গানটি সমবেতভাবে পরিবেশন করেন।

এরপর আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে যোগ দেয়া বাংলাদেশের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী শাকিলা গেয়ে শোনান ‘স্বাধীনতা তুমি আছ বলে, আজো গোলাপ চামেলি ফোটে,’ ‘তুমি আমার প্রথম সকাল, একাকি বিকেল ক্লান্ত দুপুর বেলা’ ও ‘সাধের লাউ, বানাইল মোরে বৈরাগী’সহ জনপ্রিয় কিছু গান।

শিল্পী শাকিলার পরিবেশনার আগের ফখরুদ্দিন বিরিয়ানীর মালিক ফখরুদ্দিনের ছেলে মোহাম্মদ রফিক উদ্দিন ও তার সহকর্মীদের উত্তরীয় ও ফুলের তোড়া দিয়ে স্বাগত জানান হাইকমিশনারের সহধর্মনী তোহফা জামান আলী।

আমন্ত্রিত অতিথিদের সারিতে ছিলেন বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের উধ্বতন কর্মকর্তা, ভারতের সরকারি কর্মকর্তা, সামরিক বাহিনীর সাবেক সদস্যদের বেশ কয়েকজন এবং সাউথ এশিয়ান বিশ্ববিদ্যালয় ও দিল্লির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীসহ।

এরপর বুফেতে ফখরুদ্দিনের কাচ্চি বিরিয়ানী, বোরহানী, জর্দা পোলাওয়ের স্বাদ দিয়ে শেষ হয় বাংলাদেশ দূতাবাসের বিজয় দিবসের উদযাপন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর