সমন্বয়হীনতা নয় মানুষের প্রতি সহানুভূতিহীনও সরকার, বাংলাদেশে

, প্রবাসী

সৈকত রুশদী | 2023-08-29 20:58:43

পায়ে হেঁটে দেশের দূরদূরান্ত থেকে রাজধানীতে ফিরছেন পোশাক শিল্পের লাখ শ্রমিক চাকরি হারানোর ভয়ে। ব্যক্তিগতভাবে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ এবং দেশজুড়ে তার বিস্তারের ঝুঁকি নিয়ে।

সরকার পূর্ব ঘোষিত ১০ দিনের ছুটি আরও এক সপ্তাহ বাড়িয়ে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত ঘোষণা করলেও তৈরী পোশাক শিল্পের কারখানাগুলো ৪ এপ্রিলের পর ছুটি বাড়ানো হয়নি এইদিন পর্যন্ত। অথচ সকল ধরণের গণপরিবহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞাও বলবৎ অব্যাহত।

ফলে ঢাকা ও সাভার ছেড়ে দূরবর্তী গ্রামে চলে যাওয়া পোশাক শিল্পের নারী ও পুরুষ শ্রমিক পায়ে হেঁটে ফিরে চলেছেন কর্মস্থলে। রোববার (৫ এপ্রিল) কাজ শুরু করতে, বেতন নিতে।

পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ প্রধান রুবানা হক আজ যখন ৫ এপ্রিল কাজে যোগ না দিলে পোশাক শিল্প শ্রমিকরা চাকুরী হারাবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন, তা' খুব বেশি দেরী হয়ে গেছে। অন্তত তিনদিন আগে এই ঘোষণা আসা উচিত ছিল।

তিনি এক হোয়াটসঅ্যাপ বার্তায় পোশাক শিল্পের কারখানাগুলো ১১ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ থাকার ঘোষণা দিয়েছেন শনিবার (৪ এপ্রিল) মধ্যরাতের অল্প আগে।

ইতোমধ্যে পায়ে হেঁটে চাকুরীস্থল অভিমুখী পোশাক শিল্প শ্রমিকদের বেশিরভাগই পৌঁছে গেছেন গন্তব্যে! হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার না জানা পোশাক শিল্প শ্রমিকরা সকালে দেখবেন কারখানা বন্ধ আরও এক সপ্তাহ। এক হযবরল পরিস্থিতি!

করোনাভাইরাস মোকাবেলায় কেবল সমন্বয়ের অভাব নয়, দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান খাতে অবদান রাখা মানুষের প্রতি যে সহানুভূতিহীন বর্তমান সরকার, তার প্রমাণ এই পরিস্থিতি।

বাংলাদেশের মোট রফতানী আয়ের ৮৩ শতাংশ আসে যে পোশাক শিল্প থেকে, সেই শিল্প খাত সম্পর্কে সরকারের কোনো অগ্রাধিকার নীতি, কৌশল বা পূর্ব পরিকল্পনা থাকলে শ্রমিকদের এই কঠিন পদযাত্রায় যোগ দিতে হয়না।

এই শিল্পে অবদান রাখা যে ৪৫ লাখ শ্রমিক দেশের জন্য বছরে ৩০ বিলিয়ন ডলারের বেশি আয়ের সংস্থান করেন, জীবনকে বাজি রেখে এই পদযাত্রা কেবল তাঁদের জীবনকে ঝুঁকির সম্মুখীন করেনি।

করোনাভাইরাসে তাদের সংক্রামিত হওয়ার এবং পদযাত্রায় অতিক্রম করা দেশের প্রতিটি এলাকা ও সংস্পর্শে আসা প্রতিটি মানুষকে করোনাভাইরাস সংক্রমণের নিশ্চিত ঝুঁকিতে ফেলেছে।

পোশাক শিল্পে কর্মরত ৪৫ লাখ মানুষ দেশের ১৬ কোটি ৪৬ লাখ জনসংখ্যার ২.৭৩ শতাংশ। অর্থাৎ প্রতি ৩৭ জন নাগরিকের একজন পোশাক শিল্পে নিয়োজিত।

তাদের জন্য সরকারের পূর্ব পরিকল্পনা বা নীতিগত কৌশলের অভাব প্রমাণ করে ভোটারবিহীন নির্বাচনের নৈতিকতাহীন সরকার জনবান্ধব তো নয়ই, দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান খাতটি সম্পর্কেও উদাসীন।

সরকারের এই জনবিচ্ছিন্নতা কেবল দেশের নাগরিক নয়, বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের ক্রেতা বিদেশী ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের কাছেও সহানুভূতিহীন, এমনকী নিষ্ঠুর, নীতির প্রবক্তা হিসেবে প্রতিপন্ন করে।

আশঙ্কা করছি, করোনাভাইরাস উত্তর কালে পোশাক শিল্পের বাজার পুনরুদ্ধার প্রচেষ্টার জন্য তা' প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়াতে পারে।

টরন্টো
৪ এপ্রিল ২০২০

এ সম্পর্কিত আরও খবর