৬ সপ্তাহ পর লকডাউন ভেঙে বাড়ির বাইরে স্পেনের শিশুরা

, প্রবাসী

কবির আল মাহমুদ, স্পেন থেকে | 2023-08-25 17:27:07

দীর্ঘ দেড় মাস পর স্পেনের রাস্তাগুলো মুখরিত ছিল শিশু-কিশোরদের কোলাহল আর উচ্ছ্বাসে। স্কুটার, সাইকেল, খেলনা বল আর মানুষের পদচারণায় পরিপূর্ণ ছিল দেশটির ব্যস্ততম রাস্তা, পার্ক, সমুদ্র সৈকতসহ খোলামেলা স্থানগুলো।

গত ১৫ মার্চ দেশটিতে লকডাউন ঘোষণা দেওয়ার পর গত রোববার (২৬ এপ্রিল) প্রথমবারের মতো স্পেনের রাস্তাগুলো খানিকটা সময়ের জন্য দেখতে পায় তার চিরচেনা লোকসমাগম। যার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল ১৪ বছরের কম বয়সী শিশুরা।

কঠোর নিয়মশৃঙ্খলা অব্যাহত রেখে স্পেন সরকার গেল সপ্তাহে ঘোষণা দেয় ২৬ এপ্রিল থেকে কমবয়সী শিশু-কিশোরদের স্বার্থে দেশটিতে লকডাউনে কিছুটা শিথিলতা থাকবে। এতে করে খানিকটা স্বস্তি আসে টানা ছয় সপ্তাহ ধরে গৃহবন্দী থাকা স্পেনীয় জনগোষ্ঠীর মাঝে। আর তাইতো রোববার সকাল থেকেই মানুষজনের পদচারণায় ব্যস্ত হতে শুরু করে দেশের প্রতিটা বসতিপূর্ণ অঞ্চলের রাস্তাঘাট আর ছোটবড় সব উদ্যানগুলো। এ দৃশ্য দেখে মনে হয়েছিল প্রকৃতি যেন দীর্ঘদিন পর নিস্তব্ধতা ভেঙে প্রশান্তির নিশ্বাস নিচ্ছে।

শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, স্পেনের অনূর্ধ্ব ১৪ বছর বয়সী প্রায় ৬৩ লাখ শিশু এখন প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টার মধ্যে মাত্র এক ঘণ্টার জন্য বাড়ির বাইরে থাকতে পারবে। এক্ষেত্রে তাদের গন্তব্য হবে বাড়ির এক কিলোমিটারের গণ্ডির মধ্যে, সঙ্গে থাকবে বাবা-মা কিংবা পরিবারের কোনো জ্যেষ্ঠ ব্যক্তি। আর একদলে তিন জনের বেশি হবে না। করোনা মহামারির এই অচেনা সময়ে, এক মাসেরও অধিককাল গৃহবন্দী হয়ে থাকার এ ঘটনা, শিশুদের জীবনে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

মনের আনন্দে খেলা করছে শিশুরা

রোববার সারা স্পেনে প্রায় ৬০ লক্ষ শিশু এই বন্ধী পরিস্থিতি কাটিয়ে রাস্তায় নেমেছে, যদিও অনেক প্রদেশে বৃষ্টি ছিল। অনেক শিশুকে আবেগে উচ্ছ্বাসিত হয়ে রাস্তায় ছুটতে দেখা গেছে।

করোনা মহামারির কারণে তৈরি হওয়া সামাজিক দূরত্বের কারণে হুমকির মুখে পড়েছে স্পেনের বার রেস্টুরেন্টের ব্যবসা। ধারণা করা হচ্ছে, মহামারি পরবর্তী পরিস্থিতিতে এ ধরনের ব্যবসার ৪০ হাজার প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাবে। যা শতকরা হিসেবে ১৫%। স্পেনে মোট ২ লক্ষ ১৯ হাজার বার রেস্টুরেন্ট আছে।

ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে স্পেন এই ব্যবসার শীর্ষে। কিন্তু করোনা মহামারি অকল্পনীয় সময়ের মধ্যে (তিন দিনের ভেতরে) সব ব্যবসা গুটিয়ে নিতে হয়েছে। এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে, কবে আবার খুলবে আর কিভাবে ব্যবসা পরিচালিত হবে? এখন সামাজিক দূরত্বের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলো চোখে অন্ধকার দেখছে।

আগামী ২ মে থেকে সংক্ষিপ্ত হাটা বা পায়চারি করার জন্য বড়রা (বয়স্কসহ) রাস্তায় বের হতে পারবে বলে নিশ্চিত করেছে সরকার। তবে এর মধ্যে যদি কোনো ধরনের সংক্রমণ বৃদ্ধির প্রাদুর্ভাব থাকে তাহলে সময় পরিবর্তন হতে পারে।

রোববার সকাল থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোতে ভাইরাল হতে থাকে একের পর এক ছবি আর ভিডিও ক্লিপ। যেখানে দেখা যায় শিশু কিশোর এবং তাদের সঙ্গে আসা প্রাপ্তবয়স্ক সবাইকে বেশিরভাগ সতর্কতার অনুসরণ করে বাইরে বের হয়েছেন। প্রায় সবাই গ্লাভস এবং স্যানিটারি মাস্ক পরেছিলেন। তারা তাদের বাড়ি থেকে সর্বাধিক এক ঘণ্টা এবং এক কিলোমিটারেরও কম পথ অবধি চলেছেন। এ সময় বিভিন্ন শহরের অনেক বড় বড় রাস্তাগুলোতে যানজট সৃষ্টি হয়ে গিয়েছিল এমনটাও লক্ষ্য করা যায়। কারণ, হিসেবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ছবি এবং ভিডিওগুলো বিশ্লেষণ করে নিশ্চিত হওয়া যায় যে তাদের অনেকেই কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা সঠিকভাবে অনুসরণ করেনি।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসব ছবি ভাইরাল হয়

নির্দেশনা অনুযায়ী একজন প্রাপ্ত বয়স্কের সঙ্গে সর্বোচ্চ তিনজন নাবালক থাকার কথা থাকলেও কোথাও কোথাও দেখা যায় পুরো পরিবার মিলে হাঁটাচলা করছেন, কখনো কখনো অন্য পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে বা আড্ডা দিতেও দেখা যায়। এছাড়া বাচ্চাদের মাঝেও দেখা যায় গেম এবং খেলনা সামগ্রী একে অন্যের সঙ্গে ভাগ করে নিচ্ছে।

স্পেনের জাতীয় স্বাস্থ্য সংস্থা এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, রোববার স্পেনের করোনাভাইরাস পরিস্থিতির এপর্যন্ত সবচেয়ে উত্তম দিন কেটেছে। এদিন স্পেনে মৃত্যুর সংখ্যা ২৮৮-এ নেমে এসেছিল, যা ২০ মার্চের পর থেকে বিগত ৩৭ দিনের মধ্যে সর্বনিম্ন সংখ্যা। আর আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৭২৯ জন, যা আশানুরূপ উন্নতির দিকে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর