স্পেনের সিনেটে অবৈধ অভিবাসীদের বৈধতা নিয়ে আলোচনা

, প্রবাসী

স্পেন করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-30 09:57:02

করোনার কারণে পুরো বিশ্ব বিশাল অর্থনৈতিক সংকটে আছে। এর ব্যতিক্রম নয় ইউরোপীয় উন্নত দেশগুলোও। সেই সংকট মোকাবিলায় এরই মধ্যে বিভিন্ন দেশ অনেক রকম প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোতে সাধারণ নাগরিকদের পাশাপাশি বিশেষ করে অবৈধ অভিবাসীরা আছেন চরম বিপাকে।

তাদের কথা মাথায় রেখেই ইতালি এবং পর্তুগাল তাদের অভিবাসী নাগরিক আইনে কিছুটা পরিবর্তন এনে বিশেষ সুবিধার ঘোষণা দিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার (১৯ মে) স্পেনের সংসদ অধিবেশনে অবৈধ অভিবাসীদের বৈধকরণে একটি প্রস্তাব উঠেছে।

সিনেটর পিকরনেল গ্রেন্সনা দেশটির অভিবাসী বিষয়ক মন্ত্রীর কাছে প্রস্তাবটি তোলেন। তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতি শুরুর পর সরকার জোর দাবি দিয়ে বলে যাচ্ছে, এ ভাইরাস আমরা সবাই মিলে প্রতিহত করবে এবং এর থেকে কাউকে পেছনে পড়ে থাকতে দেব না। সরকার যদি আসলেই তা মনে করে, তাহলে স্পেনে যত অবৈধ অভিবাসী আছেন, তাদের সকলকেই এখন বৈধতা দেওয়া উচিত। বৈধ কাগজ না থাকলে তারা তাদের অধিকার ঠিকমতো আদায় করতে পারেন না। কাগজ না থাকলে কাজ থাকে না। আবার কাজ পেলেও ভালো বেতন থাকে না, কোনো ভালো বাসা থাকে না, না থাকে একটা মর্যাদাপূর্ণ জীবনব্যবস্থা। যা সমাজ থেকে তাদের আলাদা করে দেয়, তাই আমাদের তাদের প্রয়োজনে যা কিছু করা দরকার, তা করা উচিত।

তিনি পর্তুগাল এবং ইতালির উদাহরণ টেনে দেখান যে বর্তমান এ সংকটময় পরিস্থিতি মোকাবিলায় এ দুই দেশের সরকার তাদের দেশের অভিবাসীদের জন্য কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

জবাবে দেশটির সামাজিক নিরাপত্তা ও অভিবাসী বিষয়ক মন্ত্রী খোসে লুইস এসক্রিভা বেলমন্তে জানান, পর্তুগাল বা ইতালি যা করেছে, তা কিছু শর্তাবলীর ওপরে করেছে। ইউরোপীয় রিফুজি অধ্যাদেশ ২০০৮-এ বলা হয়েছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে সাধারণভাবে অভিবাসীদের বৈধ করা যাবে না এবং তা এখনো কেউ ভঙ্গ করেনি। তবে একটু ব্যতিক্রমীভাবে পর্তুগাল যা বের করেছে, এটা স্পেনের সাথে মেলানোর কিছুই নেই, কেননা পর্তুগালে যাদের বৈধ কাগজ নেই, তারা চিকিৎসা সেবা পায় না, কিন্তু স্পেনে সেটা পায়। আর যা ইতালি করছে, একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সামাজিক অর্থনৈতিক অবস্থা ধরে রাখতে তার দেশের কৃষি কাজ করার জন্য লোক নিচ্ছে, এটাও স্পেনের সাথে যায় না, কেননা স্পেন অস্থায়ী ভিত্তিতে অবৈধ বসবাসকারী ১৮ থেকে ২১ বছরের মানুষদের জন্যও মাঠে কাজ করার সুযোগ দিয়েছে। উল্লেখ্য, এ দু’টি কারণেই স্পেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিশেষ আইনের কোনো ক্যাটাগরিতে পড়ে না, তাই স্পেনের পক্ষে বিশেষ কোনো প্রস্তাবনায় অবৈধ জনবলকে বৈধ করার সুযোগ নেই।

তবে মন্ত্রী সিনেটরকে পুরোপুরি আশাহত না করে জানান, তার সরকার এরই মধ্যে এ প্রস্তাবনার আলোকে কাজ করে যাচ্ছে এবং তারা নিজেরা আরো খুঁজে দেখছেন, যদি আরো কিছু করা যায়। তারা কিছু সুবিধা পেয়েছেন, আর দেখছেন যদি আরো কিছু পাওয়া যায়। বিশেষত ব্যক্তিগতভাবে রাষ্ট্রের অভিবাসী সচিব এ বিষয়ে কাজ করছেন এবং দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রীও বিষয়টি জানেন।

দেশটির বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন জানায়, স্পেনে সোশ্যালিস্ট পার্টির সরকার অভিবাসীবান্ধব সরকার হিসেবেই পরিচিত। বর্তমান সোশ্যালিস্ট পার্টির সরকারের আমলে ২০০৫ সালে অভিবাসীদের সাধারণ ক্ষমা ও সহজ শর্তে বৈধতা দেওয়া হয়।

২০১৬ সালের ২৪ জুন স্থানীয় গণমাধ্যম ‘ইউরোপা প্রেস’এ দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করার কথা জানিয়েছিলেন সোশ্যালিস্ট পার্টির প্রধান পেদ্রো সানচেজ। অবৈধদের বৈধভাবে দেশটিতে বসবাস করার ব্যবস্থা নেওয়ার আগ্রহের কথা বলেছিলেন তিনি। বর্তমানে ক্ষমতায় আছে সোশ্যালিস্ট পার্টি। তাই তারা অভিবাসন নীতি নমনীয় করবে- এমনটি প্রত্যাশা করছেন স্পেনের অভিবাসীরা।

দেশটিতে অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করা নিবন্ধনকৃত মানবাধিকার সংগঠন ‘ভালিয়েন্তে বাংলার’সভাপতি ফজলে এলাহি বলেন, সিটি কর্পোরেশন থেকে আমরা যে তথ্য পেয়েছি, তাতে পুরো স্পেনে প্রায় ১০ হাজার অবৈধ বাংলাদেশি আছেন, তারা স্পেনে বসবাস করার অনুমোদন পাওয়ার অপেক্ষায় আছেন। স্পেনের বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের সঙ্গে এ সরকারের কাছে আমরাও দাবি জানিয়েছি, যাতে অভিবাসীদের সহজ শর্তে বৈধতা দেওয়া হয়।

স্পেনে অবৈধ অভিবাসী আছেন দুই লাখ, ছবি: সংগৃহীত

স্পেনের প্রধানমন্ত্রী সানচেজ তার দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুসারে কাজ করলে স্পেনে অবৈধ অভিবাসীদের বৈধ হওয়ার সুযোগ রয়েছে বলে জানান ফজলে এলাহি। বাংলাদেশি সমাজকর্মী ও অনুবাদক নাসিরুল ওয়াহাব অপু বলেন, সরকার এ বিষয়ে চিন্তা ভাবনা করছে, হয়তো অচিরেই আমরা ভালো সংবাদ পেতে পারি।

অতীতে দেখা গেছে, সোশ্যালিস্ট পার্টি যখন স্পেনের রাষ্ট্র পরিচালনায় থাকে, তখন অভিবাসীদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ে। ২০০৪ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত দুই মেয়াদে সোশ্যালিস্ট পার্টির প্রধান খসে লুইস রদ্রিগেজ জাপাতেরো প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে অবৈধ অভিবাসীরা সহজ শর্তে স্পেনে বসবাসের বৈধতা পেয়েছেন। বিশেষ করে ২০০৫ সালে সাধারণ ক্ষমা ও সহজ শর্তে বৈধতা পেয়েছেন কয়েক হাজার অভিবাসী।

এরই মধ্যে মানবাধিকার সংগঠনগুলো স্পেনে বসবাসরত অবৈধ অভিবাসীদের বৈধ করার দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে ।

মানবাধিকার সংগঠনগুলোর দাবি, বছরের পর বছর অবৈধ অভিবাসীরা ব্যবসাসহ বিভিন্ন রকমের পেশায় নিয়োজিত থেকে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। অথচ তাদের বৈধতা দিলে বৈধ কাজ করে নিয়মিত সরকারকে ট্যাক্স প্রদান করতে পারবেন তারা। এতে দেশটির অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে।
স্পেনের অর্থনীতির মূল খাতগুলোর মধ্যে কৃষি ও পর্যটন শিল্প প্রধান। করোনার প্রাদুর্ভাব শুরুর সময় থেকেই দেশটির পর্যটন শিল্পে ধস নামে। কৃষিখাতেও ধ্বংস অবধারিত বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কাস্তিইয়া লা মানছা, ভ্যালেন্সিয়াসহ কয়েকটি এলাকা কৃষিকাজের জন্য প্রচুর কাজের লোকের সংকট দেখা দিয়েছে।
স্পেনের অভিবাসন মন্ত্রণালয়ের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রের মাধ্যমে জানা গেছে, দেশটিতে প্রায় ১০ হাজার বাংলাদেশিসহ অবৈধ হয়ে পড়া মোট অভিবাসীর সংখ্যা দুই লাখ।

এ সম্পর্কিত আরও খবর