প্রবাসীদের নিয়ে ১৯ জুন স্পেনে আসবে বিমানের ‘বিশেষ ফ্লাইট’

, প্রবাসী

কবির আল মাহমুদ, স্পেন থেকে | 2023-08-30 05:58:03

করোনাভাইরাসের কারণে বাংলাদেশে আটকেপড়াদের স্পেনে ফেরাতে বিশেষ চার্টার্ড ফ্লাইটের ব্যবস্থা করেছে বাংলাদেশ বিমান। স্পেনে বাংলা গণমাধ্যমে প্রতিনিধিত্বশীল সংগঠন স্পেন বাংলা প্রেস ক্লাবের উদ্যোগে বাংলাদেশ বিমানের বিজি-৪১০৯ নম্বরের বিশেষ চার্টার্ড ফ্লাইট রাজধানী মাদ্রিদে ১৯ জুন অবতরণ করবে।

এর আগে একবার সময় সূচি নির্ধারিত হলেও কিছু সমস্যার কারণে তা অনির্ধারিত রাখা হয়। কিন্তু অবশেষে সবকিছু চুড়ান্ত করেই স্পেনের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ বিমানের একটি বিশেষ ফ্লাইট ঘোষণা করেছে বিমান কর্তৃপক্ষ। গত ১৩ জুন এসংক্রান্ত একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে 'বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস'। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় আগামী ১৯ জুন শুক্রবার বাংলাদেশ সময় সকাল ৮:০০টায় বাংলাদেশ বিমানের একটি বিশেষ চাটার ফ্লাইট স্পেনে উদ্দেশ্যে রওনা দিবে। যার ফ্লাইট নম্বর BG 4109/19, উড়জাহাজটি ২৭৩ জন (সম্ভব্য) যাত্রী নিয়ে ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়ন করে সরাসরি মাদ্রিদ এয়ার্পোরটে ১৯ জুন স্পেন সময় বিকেল ৩:১৫ মিনেটে অবতরণ করবে।

ইতিপূর্বে কখনো স্পেনে বাংলাদেশ বিমানের সরাসরি কোন ফ্লাইট অবতরণের ঘটনা ঘটেনি, সবকিছু স্বাভাবিক থাকলে নতুন এক ইতিহাসের সাক্ষী হতে যাচ্ছে স্পেনে বসবাসরত বাংলাদেশি প্রবাসীরা।

স্পেনে বসবাসকারী প্রবাসী বাংলাদেশি, যারা দুই দেশে জরুরি রাষ্ট্রীয় সতর্কতা ঘোষণার আগে বাংলাদেশে সফর করেছিলেন এবং বর্তমানে চলমান লকডাউনে বাংলাদেশ থেকে স্পেনে ফেরত আসতে পারছেন না, তাদের একটি বিশেষ চার্টার বিমানে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে গত ১৫ মে একটি অনলাইন আলোচনা সভার আয়োজন করে স্পেন বাংলা প্রেসক্লাব। যেখানে অংশগ্রহণ করেন স্পেনে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাসের মিনিস্টার ও মিশন উপ-প্রধান এম হারুণ-আল রাশিদ। তিনি বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে ১৭ মে বাংলাদেশ দূতাবাস বাংলাদেশে আটকে থাকা স্পেন প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রত্যাবর্তনের প্রক্রিয়া বিষয়ক একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। পরবর্তীতে আগ্রহীরা দূতাবাস এবং স্পেন বাংলা প্রেসক্লাবের সহযোগিতায় ফ্লাইট সংক্রান্ত সকল প্রক্রিয়া সম্পাদন করেন।

বিশেষ চার্টার্ড ফ্লাইটের ব্যবস্থা করেছে বাংলাদেশ বিমান

ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ বিমান তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে এই বিশেষ ফ্লাইটের শিডিউল প্রকাশ করেছে। স্পেন বাংলা প্রেস ক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি বনি হায়দার মান্না এই বিশেষ ফ্লাইটের প্রস্তুতির জন্যে মূল সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

তিনি জানান, স্পেন বাংলা প্রেস ক্লাবের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও স্পেনের বাংলাদেশ দূতাবাসের সর্বাত্মক সহযোগিতাসহ কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সহযোগিতার এই চার্টার্ড ফ্লাইটের শিডিউল তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। বাংলাদেশে আটকেপড়া স্পেন প্রবাসীদের কথা বিবেচনা করে, বিমান বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ মোকাব্বির হোসেনের আন্তরিক সহযোগিতায় বাংলাদেশ বিমানের এই বিশেষ ফ্লাইটের ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়েছে।

বাংলাদেশ বিমানের ই-৭৮৭-৮০০ এয়ারক্রাফটের বিজনেস ক্লাসে ২২ জন এবং ইকনোমিক্লাসে ২৪২ জন যাত্রী ঢাকা থেকে সরাসরি মাদ্রিদে আসতে পারবেন। বিজনেস ক্লাসের জন্য বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ লাখ ত্রিশ হাজার টাকা এবং ইকনোমি ক্লাসের জন্য নব্বই হাজার টাকা ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। ১৪ জুন থেকে বাংলাদেশ বিমানের অফিস থেকে ফ্লাইটের টিকিট কেনা যাবে।

স্পেন বাংলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি, বাংলাদেশ প্রতিদিনের স্পেন প্রতিনিধি সাহাদুল সুহেদ জানান, বাংলাদেশে আটকেপড়া প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতিকূল পরিস্থিতি বিবেচনা করে স্পেন বাংলা প্রেস ক্লাব বিষয়টি সামনে আনে। পরে প্রেস ক্লাবের উদ্যোগে সোশ্যাল মিডিয়ায় লাইভ টক শো’র আয়োজন করে স্পেনের বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তাসহ স্থানীয় বাংলাদেশি কমিউনিটির নেতাদের নিয়ে আলোচনা করা হয়।

টক-শো’ আলোচনায় দূতাবাসের পক্ষ থেকে বিষয়টি নিয়ে সর্ব্বোচ্চ সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করা হলে স্পেন বাংলা প্রেস ক্লাবের পক্ষ থেকে সিনিয়র সহ-সভাপতি বনি হায়দার মান্নাকে বিষয়টিকে সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়। তিনি বিমান বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ মোকাব্বির হোসেনের সাথে যোগাযোগ করে বিষয়টির গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং পরে বিমান কর্তৃপক্ষ স্পেনের বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে বিষয়টি অনুমোদন দিয়ে ফ্লাইটের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

উল্লেখ্য, আগামী ১৯ জুন বিমান বাংলাদেশ মাদ্রিদে বিশেষ ফ্লাইটের ব্যবস্থা করায় বাংলাদেশে আটকেপড়া স্পেন প্রবাসী বাংলাদেশি ও তাদের পরিবারের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে। অল্প সময়ের ভ্রমণের শিডিউল নিয়ে বাংলাদেশ গিয়ে অনেক বাংলাদেশি কারোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারি সঙ্কটের কারণে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট শিডিউল বিপর্যয়ের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আটকেপড়ে। তাদের অনেকের রেসিডেন্ট কার্ড ও পাসপোর্টের মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল।

অনেকে কাজে যোগ না দিতে পারায় চাকরি হারানোর অনিশ্চিয়তাসহ স্পেনে ফেলে যাওয়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তদারকি করতে না পারায় চরম অনিশ্চয়তা ও বিপর্যয়ের মুখে পড়েছিল। অনেকে পরিবার স্পেনে রেখে দেশি গিয়ে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে উৎকণ্ঠায় করোনা মহামারির সময়কাল পার করছে। তাই বর্তমানে ১৯ জুন’র চার্টার্ড ফ্লাইটের মাধ্যমে স্পেনের নিজ নিজ কর্মস্থলে ফিরে আসতে পারার নিশ্চয়তায় আগমন প্রত্যাশীদের মধ্যে কিছুটা হলেও স্বস্তি বিরাজ করছে বলে মন্তব্য করেছেন ভুক্তভোগী অনেকেই।

এ সম্পর্কিত আরও খবর