ইতালির ঐতিহ্যের নগরী নাপোলি

, প্রবাসী

ইসমাইল হোসেন স্বপন, ইতালি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-12-13 21:05:18

ইতালি প্রাচীন সভ্যতার এক অনন্য নগরী। নানা ভাস্কর্য আর শৈল্পিক নিদর্শন ছড়িয়ে আছে পুরো ইতালিজুড়ে। ভ্রমণ পিপাসু মানুষও ছুটি ও অবসাদ কাটাতে অনেকেই বেছে নেন ইউরোপের দেশ ইতালিকে। যেখানে প্রকৃতি-ইতিহাস-ঐতিহ্যের মেলবন্ধনের দেখা মেলে!

পৌরাণিক নানা ইতিহাসে সমৃদ্ধ ইতালিতে বেড়াতে প্রতিবছর ২ কোটি পর্যটকের সমাগম হয়।

ছবি: বার্তা২৪.কম

ইতালির এমন কিছু দর্শনীয় স্থান নিয়ে বার্তা২৪.কম-এর আয়োজনে আজকে থাকছে প্রাচীন শহর নাপোলি। করোনামুক্ত পৃথিবীতে একদিন আপনারা চাইলেই ঘুরে আসতে পারবেন ঐতিহ্যের নগরী নাপোলিতে। 

ইতালির ঐতিহ্যের নগরী নাপোলি

হাজার বছরের পুরনো শহর নাপোলি। যা ইতালির পশ্চিম উপকূলে টাইর্রেনিয়ান সাগরের মুখোমুখি অবস্থিত। শহরটির কাছাকাছিই রয়েছে আগ্নেয়গিরি ভিসুভিয়াস পর্বত। নাপোলি শুধু ইতিহাস ঐতিহ্যের নয় এটি ইতালির অর্থনীতির বৃহত্তম ও গুরুত্বপূর্ণ এক শহর।

নাপোলিতে বহু শতাব্দী ধরে গুরুত্বপূর্ণ শিল্প ও স্থাপত্য রয়েছে। নগরীর ক্যাথেড্রাল, ডুমো দি সান জেনারো, ফ্রেস্কোয়েসে ভরা। রয়েছে তেরো শতকের একটি দুর্গ।

নাপোলি পিজার শহর নামেও পরিচিত। বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় একই খাবারটির রেসিপি  ১৮৮৯ সালের ১১ জুন নাপোলিতে প্রথম তৈরি করা হয়।

ইতালিতে বেড়াতে প্রতিবছর ২ কোটি পর্যটকের সমাগম হয়

নাপোলির দর্শনীয় স্থানসমূহ...

মাউন্ট ভিসুভিয়াস: বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এমন পর্বত রয়েছে। ইতালির ভিসুভিয়াস এদের অন্যতম। ইতালির নেপলস থেকে ৯ কিলোমিটার পূর্বে সমুদ্র উপকূলের খুব কাছে এর অবস্থান। ইউরোপের মূল ভূখণ্ডের মধ্যে অবস্থিত একমাত্র আগ্নেয়গিরি, যাতে বিগত কয়েক শতাব্দীর মধ্যে অগ্ন্যুৎপাত হয়েছে।

 

মাউন্ট ভিসুভিয়াস বেশি পরিচিত খিস্টপূর্ব ৭৯ অব্দের অগ্ন্যুৎপাতের জন্য। সেই অগ্ন্যুৎপাতে পম্পেই ও হারকিউলানিয়াম নামের দুটি রোমান শহর লাভার নিচে চাপা পড়ে ধ্বংস হয়ে যায়। বর্তমানে ভিসুভিয়াসকে পৃথিবীর সব থেকে ভয়ংকর আগ্নেয়গিরিগুলোর মধ্যে একটি ধরা হয়। ভিসুভিয়াসের সব শেষ অগ্ন্যুৎপাত হয়েছিল ১৯৪৪ সালে। 

নাপোলি

পম্পেই:  ইতালির ক্যাম্পানিয়া প্রদেশে নেপলসের (নাপোলি) আগ্নেয়গিরি ভিসুভিয়াস পর্বতের পাদদেশে অবস্থিত ছোট্ট এই নগরী। বর্তমানে উপকূল থেকে বেশ দূরে সরে গেছে এটি। একসময় একেবারে উপকূলের ধার ঘেঁষে ছিল এই জায়গা। পরিকল্পিত নগরীটি চাপা পড়েছিল পাশের ভিসুভিয়াস আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতে সৃষ্ট জ্বলন্ত লাভার নিচে।

নাপোলি জাতীয় প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর: ১৭৫০ এর দশকে তৈরি করা একটি সূক্ষ্ম অলঙ্কৃত বিল্ডিংয়ের মধ্যে অবস্থিত যাদুঘরটি সামরিক এবং অশ্বারোহী ব্যারাক হিসাবে কাজ করত এবং পরবর্তীতে এটিকে যাদুঘরে পরিণত হয়েছিল।

প্রাচীন ইতিহাস এবং প্রত্নতত্ত্ব সম্পর্কে আগ্রহী যে কেউ এই জাদুঘরটি দেখার জন্য একটি অসীম আকর্ষণীয় জায়গা খুঁজে পাবেন।

নাপোলি জাতীয় প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর

হারকিউলেনিয়াম: ভিসুভিয়াসের বিস্ফোরণের ধ্বংস হয়ে যাওয়া আরেকটি শহরটি হারকিউলেনিয়াম।  এই শহরটি পম্পেইয়ের চেয়ে কম পরিচিত অংশ, তবে এটি দেখার মতো আকর্ষণীয় এবং দুর্দান্ত দৃশ্য। যদিও পম্পেইয়ের চেয়ে শহরটি ভেসুভিয়াস থেকে আরও দূরে অবস্থিত ছিল, তবুও এটি পুরোপুরি ধ্বংস হয়েছিল।

হারকিউলেনিয়াম আসলে পম্পেইয়ের চেয়ে ভাল সংরক্ষণযোগ্য উদাহরণ হিসাবে বিবেচিত হয় এবং এর কাঠের কাঠামো, ফ্রেম এবং ছাদ অক্ষত কিছু রয়েছে।

কমপ্লেক্সের মধ্যে আকর্ষণীয় দর্শনীয় স্থানগুলির মধ্যে রয়েছে পাপাইরির ভিলা এবং হাউস অফ আরগাসের অন্তর্ভুক্ত যা উভয়ই সুন্দর ফ্রেসকোস এবং প্রাচীর চিত্রকর্মগুলি অন্তর্ভুক্ত করে। তদুপরি একটি কঙ্কালের অবশেষের একটি সিরিজও রয়েছে যা এই দুর্ভাগ্যজনক গোষ্ঠীর মৃত্যুর চিত্র প্রদর্শন করে।

নাপোলি শুধু ইতিহাস ঐতিহ্যের নয় এটি ইতালির অর্থনীতির বৃহত্তম ও গুরুত্বপূর্ণ এক শহর

ক্যাসটেল নুভো: এটি নাপোলির অন্যতম প্রধান ঐতিহাসিক স্থানগুলোর একটি। বিখ্যাত পাইয়াজা দেল প্লাইবিস্কিতো দুর্গে খুব কাছাকাছি অবস্থিত এই দুর্গটি। যেখানে সহজের সবাই  যাতায়াত করতে পারে।

১২৮২ সালে নির্মিত এই ক্যাসটেলটিতে ৫ টি বৃত্তাকার ক্রেনুলেটেড টাওয়ার এবং একটি দুর্দান্ত বিজয়ী খিলান রয়েছে। দুর্গটির টাওয়ারগুলির অত্যন্ত সুন্দর। টাওয়ারগুলোর কেন্দ্রীয় উঠানের অভ্যন্তরে দাঁড়িয়ে ব্যারনের আঁকা হলটির সিলিংটির প্রশংসা করতেই হবে। নেপলস এবং হারবারের অত্যাশ্চর্য মনোমুগ্ধকর দৃশ্যের জন্য আপনাকে দুর্গে  উঠতেই হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর