পশ্চিমবঙ্গে ভোটের ডঙ্কা

, আন্তর্জাতিক

ড. মাহফুজ পারভেজ, অ্যাসোসিয়েট এডিটর, বার্তা২৪.কম | 2023-08-29 03:01:18

আগেই নির্বাচনমুখী রাজনীতি শুরু হয়ে গিয়েছিল। ছড়িয়ে পড়তে আরম্ভ করেছিল উত্তাপ। বড় বড় নেতাদের পদচারণয় মুখরিত হচ্ছিল সমগ্র রাজ্য। সেই উত্তেজনার রেশ ধরেই পশ্চিমবঙ্গে বেজেছে ভোটের ঢঙ্কা।

আর ৪/৫ মাস পরেই অনুষ্ঠিত হবে পশ্চিমবঙ্গের ভাগ্য নির্ধারণকারী বিধান সভা নির্বাচন। ঠিক হবে, কারা ক্ষমতায় থাকবেন। ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতা ধরে রাখতে পারবে, নাকি নতুন কেউ কলকাতার মসনদে বসবে, সেটাও ঠিক হবে আসন্ন ভোটের মাধ্যমে।

নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করেছে, চলতি নভেম্বরের শেষে ভোটার তালিকা তৈরির কাজ শুরু হবে। ডিসেম্বরের মধ্যে হবে ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ। এর মধ্যেই খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশিত হবে। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশিত হলে এপ্রিলের শেষ দিকে কিংবা মে মাসের শুরুতে অনুষ্ঠিত হবে তুমুল উত্তেজক ভোটযুদ্ধ।

সাংবিধানিক নিয়মে ভারতের গুরুত্বপূর্ণ পশ্চিমবঙ্গে ২০২১ সালের মে মাসের মধ্যে নতুন মন্ত্রীসভাকে শপথ নিতে হবে। ফলে এপ্রিলেও ভোট শুরু হতে পারে। চলমান কোভিড মহামারি পরিস্থিতি বিবেচনা করে ভোটের দফা বাড়তে পারে। বুথের সংখ্যাও বাড়বে বলে জানিয়েছে নির্বাচনী কর্তৃপক্ষ। বুথ-প্রতি ভোটার সংখ্যা কমানো হতে পারে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কারণে।

পশ্চিমবঙ্গের ভোটের আগে পার্শ্ববর্তী বিহার রাজ্যের নির্বাচনে ও কয়েকটি উপ-নির্বাচনে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) বেশ ভালো ফল করেছে। পশ্চিমবঙ্গেও ক্ষমতা ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য তৎপর বিজেপি। দলের অন্যতম শীর্ষ নেতা অমিত শাহ স্পষ্টত দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতা হাসিলের আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।

মাত্র দুটি আসন পাওয়া বিজেপি স্বল্প সময়ে যেভাবে ১৮টি আসন পেয়ে ক্ষমতা দখলের চিন্তা করছে, তাতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। দলের কেন্দ্রীয় ও রাজ্য নেতৃত্ব সেভাবেই জোরকদমে লড়াই করছে।

ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসও সম্ভাব্য পদক্ষেপ নিয়েছে ক্ষমতা ধরে রাখতে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলের নেতাদের নিয়ে মাঠে নেমে গেছেন।

বসে নেই একদা পশ্চিমবঙ্গে সুদীর্ঘকাল ক্ষমতায় থাকা বামপন্থী দলগুলোও। পুরনো দল কংগ্রেসও উজ্জীবিত হয়ে ময়দানে অবতীর্ণ হয়েছে। তবে এ দুটি দল পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতা দখল করার মতো শক্তিশালী অবস্থানে নেই। নিদেনপক্ষে তারা কোনো দলের ক্ষমতায় যাওয়ার অনুঘটক হতে পারবে।

তবে নির্বাচন যদি বিজেপি, তৃণমূল, বাম ও কংগ্রেসের মধ্যে চতুর্মুখী লড়াইয়ে পরিণত হয়, তাহলে ভোট কাটাকাটির মাঝখান দিয়ে বিজেপি'র ক্ষমতায় চলে আসা সুনিশ্চিত। কিন্তু পরিস্থিতি যদি এমন হয় যে, সবগুলো দল বিজেপির বিরুদ্ধে একাট্টা, তাহলে পরিস্থিতি পাল্টে যাবে।

এমনিতে তৃণমূল, বাম ও কংগ্রেস নীতিগতভাবে বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক মতাদর্শ লালন করে। বিজেপি'র সমালোচনায় মুখর তারা। কিন্তু ভোটের মেরুকরণের চিত্রটি কেমন দাঁড়ায়, তা এখনো স্পষ্ট নয়। কে কার সঙ্গে জোট করে, সেটাও পরিষ্কার হবে অচিরেই। তখন বোঝা যাবে ভোটযুদ্ধের আসল গতি-প্রকৃতি।

তবে সামনের ২০২১ সালের প্রথমার্ধে পশ্চিমবঙ্গে যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও উত্তেজনাময় নির্বাচন হতে চলেছে, তা বিলক্ষণ টের পাওয়া যাচ্ছে। যতই নির্বাচন এগিয়ে আসবে, ততই ভোটের উত্তাপ-উত্তেজনা বাড়বে। নির্ধারণ হবে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক ভাগ্য। ঠিক হবে, মমতা থাকবেন নাকি নরেন্দ্র মোদীর পছন্দের কেউ আসবেন রাজ্য ক্ষমতার শীর্ষে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর