ভারতে লকডাউনের প্রভাব

ভারত, আন্তর্জাতিক

ড. মাহফুজ পারভেজ, অ্যাসোসিয়েট এডিটর, বার্তা২৪.কম | 2023-08-29 03:00:55

করোনার আবহে লকডাউনের প্রভাব পড়েছে ভারতের অর্থনীতিতে। মন্দার ধাক্কায় জুন মাসে শুরু হওয়া চলতি আর্থিক বছরের প্রথম তিন মাসে (জুন-আগস্ট) ২৪ শতাংশ সঙ্কুচিত হয়েছে সে দেশের অর্থনীতি।

ভারতের রিজার্ভ ব্যাংকের অর্থনীতিবিদদের মতে, পরের ত্রৈমাসিকেও (সেপ্টেম্বর-নভেম্বর) অর্থনীতি ৮.৬% সঙ্কুচিত হয়েই চলছে। পর পর দু’টি ত্রৈমাসিকে জিডিপির সংকোচন হলেই অর্থনীতির পরিভাষায় মন্দা এসেছে বলে ধরা হয়। ফলে ইতিহাসে এই প্রথম ভারতের বিশাল অর্থনীতিতে দৃশ্যমান আর্থিক মন্দা দেখা দিল। করোনার কারণে সৃষ্ট আর্থিক ক্ষতির রূপ-চরিত্রও স্পষ্টতর হলো ভারতে।

বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের তীব্র প্রকোপে মারাত্মকভাবে আক্রান্ত দেশগুলোর মধ্যে ভারত অন্যতম। মৃত্যু ও সংক্রমণের ব্যাপকতার জন্য ভারতে একাধিকবার লকডাউন ও বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়ার কুপ্রভাব পড়েছে দেশটির অর্থনীতিতে। শোনা যাচ্ছে আর্থিক মন্দার পদধ্বনি। তবে বিজেপি শাসিত ভারতের কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন মন্দা কাটানোর আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। দক্ষিণ ভারতীয় বংশোদ্ভূত এই মহিলা অর্থমন্ত্রীর দাবি, 'চলতি অর্থ বছরের আসন্ন তৃতীয় ত্রৈমাসিক থেকেই আর্থিক বৃদ্ধি দেখা যাবে।'

তবে মন্দা যে ভারতে সত্যিই মারাত্মক চিন্তার কারণ হয়েছে, তার প্রমাণ কেন্দ্রীয় সরকারের প্রায় ২.৬৫ লাখ কোটি টাকার ১২ দফা প্যাকেজ, যাতে নতুন রোজগার তৈরির চেষ্টা করা হয়েছে। প্যাকেজে বেসরকারি সংস্থাকে নয়া কর্মী নিয়োগে উৎসাহ দিতে বলা হয়েছে। ১৫ হাজার টাকার কম বেতনের নতুন কর্মী নিযুক্ত হলে বা লকডাউনে কাজ যাওয়া কর্মীরা ফের কাজে যোগ দিলে, আগামী দু’বছর প্রভিডেন্ট ফান্ডে কর্মীদের দেয় টাকা সরকারই দিয়ে দেবে। কোনও সংস্থায় কর্মীর সংখ্যা এক হাজারের কম হলে সংস্থার দেয় অংশও কেন্দ্র জমা করবে। সরকারি হিসেবে দেশে এমন সংস্থাই ৯৯.১%।

নতুন আর্থিক কর্মসূচি সুবাদে অর্থনীতি দ্রুত ঘুরে দাঁড়াবে বলে দাবি করেছেন মন্ত্রী নির্মলা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, ‘আত্মনির্ভর ভারত প্যাকেজ কর্মসংস্থান তৈরিতে, বিভিন্ন ক্ষেত্রের সমস্যা মোচনে, নগদের জোগান বাড়াতে, উৎপাদন বৃদ্ধিতে, আবাসন শিল্পকে চাঙ্গা করতে এবং চাষিদের পক্ষে সহায়ক হবে।’

যদিও ভারতের শিল্পমহল সরকারের দাবির সঙ্গে একমত, কিন্তু ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর ক্ষোভ যে, তাদের জন্য প্যাকেজে কিছুই নেই।

ছোট-মাঝারি শিল্প ও ব্যবসায়ীদের সংগঠন সিআইএ-র আহ্বায়ক কে ই রঘুনাথনের যুক্তি, ‘কোনও সংস্থা প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা জমা করতে পারছে না বলে কর্মী ছাঁটাই করেছে, এই ধারণাটাই ভুল। শুধু পিএফের টাকা দিলে নতুন চাকরি হবে না। তার বক্তব্য, মধ্যবিত্ত, পেশাদার, ছোট-মাঝারি সংস্থা, পরিষেবা ক্ষেত্রের জন্য এই প্যাকেজে কিছু নেই।’

ভারতের বড় বড় শহরগুলো থেকে করোনার কারণে চাকরিচ্যুত হয়ে ঘরে-ফেরা পরিযায়ী শ্রমিকদের রোজগারের ব্যবস্থা করতেও অর্থ বরাদ্দ হয়েছে। আবাসন ক্ষেত্রকে চাঙ্গা করতে নতুন ফ্ল্যাট কেনায় কিছু বাড়তি আয়কর ছাড়ের ঘোষণা হয়েছে। পরিকাঠামো ও রফতানি ক্ষেত্রকেও চাঙ্গা করার রাস্তা খুঁজছেন সংশ্লিষ্টরা। লকডাউনে মুখ থুবড়ে পড়া শিল্প সংস্থাগুলোর জন্য বন্ধক ছাড়াই ঋণ গ্যারান্টির ঘোষণাও এসেছে চলমান আর্থিক মন্দাভাব কাটানোর জন্য। এখন দেখার বিষয় এটাই যে, করোনার ক্ষত কাটিয়ে ভারতের মন্দাক্রান্ত অর্থনীতি সামনের দিনগুলোতে উঠে দাঁড়াতে পারে কিনা।

এ সম্পর্কিত আরও খবর