১৬ জানুয়ারি ২০২১ সাল। দিনটি করোনা মহামারির বৈশ্বিক বিপর্যয়ের ইতিহাসে এক উজ্জ্বল ব্যতিক্রম। লাল হরফের দিনটিতে দক্ষিণ এশিয়ায় সূচিত হয় ভ্যাকসিন যুগের। ভারত প্রথম দেশ হিসেবে শুরু করে ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রম।
এমন আশাবাদী খবরের পিছু পিছু একটি দুঃসংবাদ এসেছে বিশ্বের আরেক প্রান্তের ইউরোপ থেকে। প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস থেকে পরিত্রাণ পেতে বিশ্বজুড়ে ভ্যাকসিন নেওয়ার তোড়জোড়ের মধ্যেই আগত দুঃসংবাদে জানা যায় যে, বহুল আলোচিত ফাইজার-বায়োএনটেক কোম্পানি উদ্ভাবিত করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন নেওয়ার পর নরওয়ের ২৩ জন নাগরিকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে।
বিদ্যমান পরিস্থিতে করোনা মহামারি ঠেকাতে ভারতে ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু হয় শনিবার (১৬ জানুয়ারি)। কালান্তক কোভিড-এর বিরুদ্ধে যারা মরণপণ লড়াই করেছেন সেই চিকিৎসক, সেবিকা, স্বাস্থ্যকর্মীদের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে উদ্বোধনী দিনে ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে। ভারতে তিন হাজার ছয়শ’টি ভ্যাকসিন দান কেন্দ্রে মোট ছত্রিশ হাজার কোভিড যোদ্ধাকে প্রথম দিন ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে বিভিন্ন রাজ্যে।
তালিকায় সেনাবাহিনীর কোভিড যোদ্ধা ছিলেন তিন হাজার একশ’ ঊনত্রিশ। প্রথম যাকে টিকা দেয়া হয় তিনি দিল্লির এইমস-এর সাফাইকর্মী মনীষ কুমার। ভারতে প্রথম পর্যায়ে তিন কোটি মানুষকে ভ্যাকসিন দেয়া হবে, দ্বিতীয় পর্যাযে ভ্যাকসিন পাবে তিরিশ কোটি ভারতবাসী।
ভ্যাকসিন প্রদান পর্বে গোটা ভারত সেজে উঠে নতুন চেহারায়। সমস্ত ভ্যাকসিন কেন্দ্রগুলোকে সাজানো হয় রঙে ও আলোয়। প্রাথমিক খবরে ভ্যাকসিনের কোনো বিরূপ বা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার তথ্য পাওয়া যায় নি। তবে, ভ্যাকসিনের প্রাপ্যতার পরিমাণ নিয়ে কেন্দ্র ও বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে মন কষাকষি ও রাজনৈতিক বিতণ্ডার খবর পাওয়া গেছে।
তবে, ভারতে করোনা ভ্যাকসিনের সূচনার ফলে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশেও আশার সঞ্চার হয়েছে। ভারতীয় অভিজ্ঞতার ইতি ও নেচিবাচক তথ্যের ভিত্তিতে অন্যান্য দেশগুলোও করোনার বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধকে আরো শাণিত করতে পারবে।
ভারত হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পর করোনার ক্ষয়-ক্ষতির দিক থেকে দ্বিতীয় শীর্ষ দেশ। ভারতের অভিজ্ঞতা বৈশ্বিক মহামারি নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ হবে বলে বিবেচনা করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
এদিকে বাংলাদেশে করোনার টিকা বঙ্গভ্যাক্সের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছে গ্লোব বায়োটেক। রোববার (১৭ জানুয়ারি) মহাখালীতে বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিলে (বিএমআরসি) এই আবেদন জমা দেয়া হয়। প্রায় ১০ হাজার পৃষ্ঠার আবেদনটি গ্রহণ করেন বিএমআরসির একজন সহকারী পরিচালক। উল্লেখ্য, সিআরও লিমিটেড নামের একটি কোম্পানি গ্লোব বায়োটেকের হয়ে টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের কাজটি করবে। এই ট্রায়াল হবে একটি সরকারি হাসপাতালের একটি ইউনিটে। এরআগে গত ২৮ শে ডিসেম্বর গ্লোব বায়োটেককে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের জন্য করোনাভাইরাসের টিকা উৎপাদনের অনুমতি দেওয়া হয়।