মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থান: কোথায় আছেন অং সান সু চি?

, আন্তর্জাতিক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 15:49:14

মিয়ানমারে গত সোমবার সেনা অভ্যুত্থানের পর সবার মনে প্রশ্ন জেগেছে দেশটির ন্যাশনাল লীগ ফল ডেমোক্রেসি (এনএলডি) দলের নেতা অং সান সু চি এখন কোথায় আছেন? যদিও জান্তা সরকারের পক্ষ থেকে এখনও এ বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। তবে ধরণা করা হচ্ছে তাকে নিজ বাড়িতেই গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছে। এমনকি সু চির একজন প্রতিবেশী তাকে নিজ ডরমিটরি প্রাঙ্গণে হাঁটতে দেখেছেন।

বার্তা সংস্থা এএফপি’র এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ৪৯ বছরের জান্তা শাসনের স্মৃতি ফিরিয়ে আনা এই অভ্যুত্থান কেন হলো সে প্রশ্ন ঘুরছে দেশটির নানা মহলে।

এদিকে, অভ্যুত্থানের পর থেকে মিয়ানমারের রাস্তায় রাইফেল কাঁধে টহল দিচ্ছে সৈন্যরা। ইয়াঙ্গুনে দেশটির প্রধান বিমানবন্দর বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আগামী পহেলা জুন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক এ বিমানবন্দর বন্ধ থাকবে এবং বাতিল করা হয়েছে সব ধরনের ফ্লাইট উঠা নামা।

দেশটির সংবাদ মাধ্যম সূত্রে জানা যচ্ছে, অং সান সু চিসহ এনএলডি নেতাদের আটকে রাখা হলেও বেশিরভাগ স্টেট মিনিস্টারকে মুক্তি দিয়ে বাসায় গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছে। এমনকি তাদের ডরমিটরির সামনে সেনা প্রহরা বসানো হয়েছে।

একজন এমপি ফোনে এএফপিকে জানিয়েছেন, তাদের বাইরে যেতে দেয়া হচ্ছে না।

তবে গত মঙ্গলবার এনএলডির ভেরিফায়েড ফেসবুক পাতায় দেয়া বিবৃতিতে সু চি, প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টসহ অন্য নেতাদের মুক্তি দাবি করা হয়েছে। বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, এ অভ্যুত্থান রাষ্ট্র ও সেনাবাহিনীর ইতিহাসে একটি কালো দাগ হিসেবে দেখছেন তারা। একই সাথে নভেম্বরের নির্বাচনের ফলকে স্বীকার করে নেয়ার আহবান জানানো হয় ওই বিবৃতিতে।

এনএলডি’র একজন কর্মকর্তা এএফপিকে বলেছেন, দলীয় কর্মকর্তাদের সাথে সু চির এখনও কোনও যোগাযোগ হয়নি। তবে সু চির একজন প্রতিবেশী জানিয়েছেন তিনি (সু চি) ভালো আছেন জানাতে নিজ বাসার কম্পাউন্ডে হাঁটাহাঁটি করেছেন।

পরাশক্তি দেশগুলোর অবস্থান:

মিয়ানমারের অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে সরব আছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার আহবান জানিয়েছেন। সেটা না করা হলে মিয়ানমারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকিও দিয়েছেন।

তবে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিয়ানমারের স্থিতিশীলতাকে খাটো না করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। দেশটি আশা প্রকাশ করেছে, মিয়ানমারের সব পক্ষ সংবিধান, আইনি কাঠামো ও রাজনৈতিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতার ভিত্তিতে সব পার্থক্য ঘুচিয়ে উঠবে।

মিয়ানমারের বর্তমান অবস্থা:

অভ্যুত্থানের একদিন পর মিয়ানমারের আজকের অবস্থা হলো অনেকটা 'স্বস্তিহীন শান্তি'র মতো। বড় শহরগুলোতে সৈন্যরা টহল দিচ্ছে এবং রাস্তাঘাটগুলো নিরব হয়ে পড়েছে। তার সাথে আছে রাত্রিকালীন কারফিউ।

তবে ফোন ও ইন্টারনেট সংযোগ আবার চালু করা হয়েছে। যদিও ইয়াঙ্গুনে অনেকেই মনে করছেন যে গণতন্ত্রের জন্য তাদের দীর্ঘ লড়াই হেরে গেছে।

আবার কিছু ক্ষেত্রে প্রতিবাদ দেখা যাচ্ছে। যেমন সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসকরা অং সান সু চির মুক্তির দাবিতে বুধবার থেকে কাজ বন্ধের হুমকি দিয়েছে। সামরিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে তারা কালো ব্যাজ ধারণ করেছেন।

ডা. নাইং তু অং বিবিসি বার্মিজকে জানিয়েছেন, এ ধরনের অভ্যুত্থান সহ্য করা যায় না। দেশ ও জনগণকে পরোয়া করে না এমন সামরিক শাসকের অধীনে কাজ করতে পারেন না বলে তিনি পদত্যাগ করেছেন।

বুধবার সকালে মিয়ানমারের রাস্তাগুলো ছিলো স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় অনেকটাই নীরব।  একদিন বন্ধ থাকার পর বেসরকারি ব্যাংকগুলো তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে।

তবে রাজধানী নেপিডোতে পার্লামেন্ট ভবনের চারপাশে সৈন্যরা ট্যাংক নিয়ে টহল দিচ্ছে। এবারের অভ্যুত্থান রক্তপাতহীন হলেও করোনা পরিস্থিতির মধ্যে অর্থনীতির ওপর এর ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাবের আশঙ্কা করা হচ্ছে।

রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও সম্ভাব্য আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে বিদেশী বিনিয়োগ অনিশ্চিত হয়ে পড়ার ভয় অনেককে হতাশ ও ক্ষুব্ধ করে তুলেছে।

বার্তা সংস্থা এএফপিকে একজন এমপি জানিয়েছেন, ‘আমাদের উদ্বিগ্ন না হওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। যদিও আমরা উদ্বিগ্ন। আমরা যদি তাদের ছবি দেখতে পেতাম তাহলেও স্বস্তি বোধ করতাম।

আর আটক এমপিদের রাখা হয়েছে তাদের সরকারি ভবনেই যাকে একজন এমপি আখ্যায়িত করেছেন 'ওপেন এয়ার ডিটেনশন সেন্টার' হিসেবে।

অং সান সু চি ১৯৮৯ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত আটক অবস্থায় ছিলেন।

এবার আটকের আগ মূহুর্তে দেয়া বিবৃতিতে তিনি জনগণকে অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের ডাক দিয়েছেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর