চলমান চীন-মার্কিন বাণিজ্যযুদ্ধ নিরসনে যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনায় বসার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছে চীন। আল-জাজিরা জানায়, একদিকে শুল্ক আরোপ অন্যদিকে বাণিজ্য আলোচনা অসম্ভব বলে জানিয়েছেন চীনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তাঁরা বলছেন, এভাবে ‘গলার সামনে ছুরি ধরে’ যুক্তরাষ্ট্র যে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছে, তা সম্ভব নয়।
২০০ বিলিয়ন ডলারের চীনা পণ্যের উপর ওয়াশিংটনের শুল্ক আরোপের এক দিন পর মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে চীনের উপ-বাণিজ্যমন্ত্রী ওয়াং শুয়েন বলেন, ‘চীন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সমঝোতায় যেতে প্রস্তুত কিন্তু দুই পক্ষই একে অপরকে সমান ও সম্মানের সাথে বিবেচনা করতে হবে।’
ওয়াং শুয়েন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে এত বিশাল পরিমাণের বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যে তারা কারও গলার সামনে ছুরি ধরে রেখেছে। এই অবস্থায় কীভাবে সমঝোতা এগিয়ে যেতে পারে?’
নতুন করে আলোচনা শুরু করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্টিভেন মুচিন চীনা কর্মকর্তাদের আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু আরও ২৬৭ বিলিয়ন ডলারের চীনা পণ্যের উপর প্রস্তুতি চলছে- প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই ঘোষণা, আলোচনা প্রচেষ্টায় পানি ঢেলে দিয়েছে।
গত আগস্টে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের সাথে ওয়াশিংটনে বৈঠক করেছিলেন ওয়াং শুয়েন। তারপর বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির এই দেশ দুটির মধ্যে আর বড় কোন বৈঠক হয়নি।
মঙ্গলবার শুয়েন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক শুল্ক আরোপের ঘটনা গত মে মাস থেকে চলে আসা বাণিজ্যযুদ্ধ নিরসনে সমঝোতা প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করেছে।’
চীনা পণ্যের উপর যুক্তরাষ্ট্রের দুই দফা শুল্ক আরোপ দুই দেশের বাণিজ্যযুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করছে। দুই দফায় যুক্তরাষ্ট্র চীনের ২৫০ বিলিয়ন ডলারের পণ্যের উপর শুল্ক আরোপ করেন, যা চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রফতানির প্রায় অর্ধেক।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি পদক্ষেপেই পাল্টা ব্যবস্থা নিয়েছে চীন। বর্তমানে তা প্রায় ১১০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্যের প্রায় সমান।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীন-মার্কিন এই বাণিজ্যযুদ্ধ উভয় দেশের জন্য ক্ষতিকর হবে এমনকি বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধিকেও তা প্রভাবিত করবে।
গত সোমবার চীনের মন্ত্রিসভার প্রকাশিত শ্বেতপত্র অনুযায়ী, গত বছর চীনের মোট বৈদেশিক রফতানির ১৯ শতাংশ করা হয় যুক্তরাষ্ট্রে।
বেইজিংয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, বাণিজ্যযুদ্ধের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত কোম্পানিগুলোর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সহযোগিতার পরিকল্পনা করেছে চীন।
রফতানিকারকদের খরচ কমানোর পরিকল্পনা করছে বেইজিং এবং সম্প্রতি কর কমানোর একটি পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে যা আগে পরিশোধ করতে হত।
বাণিজ্যযুদ্ধের মধ্যে কোম্পানিগুলো কীভাবে চাপ সামলাবে জানতে চাইলে চীনের শিল্প ও তথ্য মন্ত্রণালয়ের উপ-মন্ত্রী লু ওয়েন বলেন, ‘কোম্পানিগুলো যাতে তাদের সকল সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারে সেই জন্য আমরা সকল ধরণের কার্যকরি পদক্ষেপ নেব।’
তিনি বলেন, ‘চীন আগ্রহের সাথে কোম্পানিগুলোর কর ও বোঝা কমাবে এবং ব্যবসার পরিবেশ চাঙ্গা করে তুলবে।’
গত সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের শিকার হওয়া চীনা পণ্যগুলো হল ভয়েস ডেটা রিসিভার, কম্পিউটার মেমোরি মডিউল, অটোমেটিক ডেটা প্রসেসর ও অফিসের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন যন্ত্রাংশ।
এদিকে চীন ৬০ বিলিয়ন ডলারের ৫হাজার ২০০টি মার্কিন পণ্যকে টার্গেট করে, এগুলোর উপর পাঁচ থেকে দশ শতাংশ প্রতিশোধমূলক শুল্ক আরোপ করে। যার মধ্যে আছে এলএনজি, কাঠ ও ইলেকট্রনিকস, সুগন্ধযুক্ত তেল, শূকরের চামড়া ও কনডম।