ভ্যাকসিন জাতীয়তাবাদ!

, আন্তর্জাতিক

কনক জ্যোতি, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-30 23:38:46

ভ্যাকসিন প্রদান নিয়ে বারবার জাতীয়তাবাদের অভিযোগ তুলেছে জাতিসংঘ। একাধিক দেশও বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার কাছে আবেদন জানিয়েছে, কোভিড-১৯ সংক্রান্ত যে কোনও আবিষ্কারের উপরে ‘ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি রাইট’ তুলে দেওয়া হোক। তাতে আপাতত ভাবে রাজি নয় উন্নত দেশগুলি। পশ্চিমা জাতীয়তাবাদ বৈশ্বিক মহামারি প্রতিরোধেও নিজের নেতৃত্ব ধরে রাখতে তৎপর। সমালোচকরা যার নাম দিয়েছেন 'ভ্যাকসিন জাতীয়তাবাদ'।

'ভ্যাকসিন জাতীয়তাবাদ' প্রসঙ্গটি বেশি প্রচার পাচ্ছে এজন্য যে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এমনও বলছে, 'আমরা চুক্তি মতো টিকা না-পেলে, এই ব্লকের বাইরে ভ্যাকসিন যেতে দেব না।' তবে, পক্ষান্তরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিপরীত অবস্থান নিয়ে রাশিয়া দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছে, ইচ্ছুক দেশকে তারা ‘স্পুটনিক ভি’ টিকা পাঠিয়ে সাহায্য করতে চায়। কিন্তু এখন বিভিন্ন দেশের আবেদন মতো রাশিয়া প্রতিষেধক সরবরাহ করতে পারবে কি না, সেটা নিয়েই সংশয় দেখা দিয়েছে। স্লোভাকিয়া, চেক প্রজাতন্ত্র-সহ ইউরোপ, লাতিন আমেরিকা, আফ্রিকার ছোট দেশগুলো ভ্যাকসিন চেয়ে আবেদন জানিয়েছে খোদ পুতিনকে। ‘ইউরোপিয়ান মেডিসিনস এজেন্সি’ এখনও স্পুটনিক ভি-কে ছাড়পত্র দেয়নি। তবে রুশ কর্তাদের দাবি, ‘ধীরে ধীরে গোটা ইউরোপই জয় করবে স্পুটনিক ভি।’

এদিকে ৮ মার্চ বিশ্ব নারী দিবসে সুসংবাদ পেলো দক্ষিণ এশীয় দ্বীপ রাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র ‘কোভ্যাক্স’ প্রকল্পে ৮ মার্চ প্রথম ২ লক্ষ ৬৪ হাজার ডোজ় অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজ়েনেকা কোভিড-ভ্যাকসিন এসে পৌঁছায় 'পার্ল অব ইন্ডিয়ান ওশ্যান' নামে খ্যাত শ্রীলঙ্কায়। আর্থিক সঙ্গতির বিচারে নয়, সার্বিক ভাবে যাতে বিশ্বের প্রতিটি দেশে প্রতিষেধক পৌঁছায়, সে কথা মাথায় রেখে এই বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে হু। আফ্রিকার কিছু দেশেও সংস্থাটি ভ্যাকসিন সরবরাহ করেছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তরফে শ্রীলঙ্কা পেয়েছে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজ়েনেকার ‘কোভিশিল্ড’, যা তৈরি করেছে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট। ভ্যাকসিন শ্রীলঙ্কায় পাঠানোর বিষয়ে সহযোগিতা করেছে ইউনিসেফ। ‘কোভ্যাক্স’ প্রকল্পে পাঠানো ভ্যাকসিন দেওয়া হবে ষাটোর্ধ্ব, সব চেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের। মে মাসের মধ্যে ১৪ লক্ষ ৪০ হাজার ডোজ় শ্রীলঙ্কায় পাঠানোর চুক্তি হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।

শ্রীলঙ্কার কর্তৃপক্ষের মতে, রাজধানী কলম্বো-সহ পশ্চিমের প্রদেশে সংক্রমণ বেশি। সেখান থেকেই টিকাকরণ শুরু হবে। এর আগেই অবশ্য সীমিত আকারে প্রতিষেধক দেওয়া শুরু হয়েছে শ্রীলঙ্কায়। ভ্যাকসিনের কিছু ডোজ় শ্রীলঙ্কাকে উপহার হিসেবে দিয়েছিল ভারত। তাতে করোনা যুদ্ধে প্রথম সারিতে থাকা কর্মীদের টিকা দেওয়া হয়।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সামনে দিনগুলোতে বিশ্বের সবগুলো দেশেই চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনী সংখ্যক ভ্যাকসিন সরবরাহ করা সম্ভব হবে। জাতীয়তাবাদী উগ্রতা কিংবা ইউরোপের আধিপত্যের বিষয়টিও শেষ পর্যন্ত টিকতে পারবে না। বিশ্বায়নের চলমান প্রক্রিয়ার জোয়ারে অন্যান্য রাজনৈতিক মতাদর্শের মতোই 'ভ্যাকসিন জাতীয়তাবাদ'ও ভেসে যাবে, এমনটিই ধারণা করছেন পর্যবেক্ষকগণ।

এ সম্পর্কিত আরও খবর