মৃত্যু ও বিক্ষোভের অস্থির পথে মিয়ানমার

, আন্তর্জাতিক

কনক জ্যোতি, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-24 16:07:44

সামরিক দখলদারিত্বের দেড় মাসের অভিজ্ঞতায় মিয়ানমারে রক্ত ও মৃত্যুর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে অসন্তোষ, অস্থিরতা ও হতাশা। গণতন্ত্র ফিরে পাওয়ার দাবিতে সামরিক বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত মহিলা ও শিশু মিলিয়ে মোট ১৩৮ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে জাতিসংঘ। পরিস্থিতির ভয়াবহতায় মিয়ানমারের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে বলে দাবি করেছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। মৃত্যু ও বিক্ষোভের অস্থির পথে চলমান মিয়ানমানের ভবিষ্যৎ নিয়ে বিশ্বব্যাপী দেখা দিয়েছে তীব্র উদ্বেগ।

আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, মিয়ানমারে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের উপরে হিংসার ঘটনা ক্রমাগত বাড়ছে। প্রতিদিনই দেশে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে বহু মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। শান্তি, জননিরাপত্তা ও নাগরিক জীবন-যাপনের ক্ষেত্রেও প্রতিনিয়ত বিপদ বাড়ছে মিয়ানমারে।

একাধিক মানবাধিকার সংগঠন জানিয়েছে, মৃতদের অধিকাংশ বিক্ষোভকারী হলেও, এমন অনেকেই প্রাণ হারিয়েছেন, যারা বিক্ষোভে অংশ নেননি। সামরিক নির্মমতা এতোটাই প্রকট যে, ইয়াঙ্গুনে নিরাপত্তাবাহিনীর গুলিতে বাড়ির ভিতরে থাকাকালীন মৃত্যু হয়েছে দুই মহিলার। বিভিন্ন শহরেও সামরিক বাহিনীর নির্বিচার হামলায় আহত হয়েছে বহু নিরিহ সাধারণ নাগরিক।

তবে, সামরিক অভ্যুত্থান এবং পাল্টা গণতান্ত্রিক প্রতিরোধের মুখে দৃশ্যত সমগ্র মিয়ানমার জ্বলছে। ফৌজি আক্রমণ ও হাতাহতের ঘটনাতেও জনতা ভয় পাচ্ছেনা। প্রতিদিনই নতুন নতুন আন্দোলনে মুখরিত হচ্ছে বিভিন্ন শহর। আন্তর্জাতিক সংবাদসংস্থাগুলো এ খবরের পাশাপাশি আরো জানিয়েছে যে, বিদ্যমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটিতে খাদ্য ও জ্বালানির দাম বৃদ্ধি নিয়েও উদ্বেগ বাড়ছে।  দেশে নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যশস্যের দাম মাত্রাছাড়া বৃদ্ধি পেয়ে কোনো কোনো জায়গায় ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ বেশিতে বিক্রি হচ্ছে। সাধারণ মানুষের প্রধান খাবার ভাত বা চালের দাম বিভিন্ন বাজারে ৩ শতাংশ বেড়েছে।

আরেকটি খবরে প্রকাশ, সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা দখল ও জনতার সঙ্গে তাদের সশস্ত্র আচরণের ফলে উদ্ভূত নিরাপত্তাহীনতায় মিয়ানমানের কয়েক হাজার মানুষ দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে। মিয়ানমারের প্রতিবেশী দেশগুলোর সীমান্ত এলাকায় ক্রমেই দেশত্যাগীদের ভিড় বাড়ছে। উল্লেখ্য, মিয়ানমারের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা ছাড়াও আরো অনেক ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু আগে থেকেই চরম নিরাপত্তাহীনতায় ছিল। তাদের বিপদ আরো বেড়েছে এবং তারা দেশত্যাগের পথ ধরেছে।

এদিকে জাতিসংঘ ও অধিকাংশ পশ্চিমা দেশ মিয়ানমারে গণতন্ত্রের অবক্ষয়ের তীব্র নিন্দা করলেও সামরিক বাহিনী সেদিকে ভ্রূক্ষেপ করছেনা। আন্তর্জাতিকভাবে নানা রকম চাপ দেওয়া হলেও মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী গণতন্ত্র হত্যাসহ কঠোর হত্যা-নিপীড়নের পথে চলছে। ফলে প্রতিদিনই বাড়ছে মৃত্যর সংখ্যা আর বিপর্যস্ত হচ্ছে দেশের শান্তি, নিরাপত্তাসহ আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক কাঠামো। বিশেষজ্ঞরা অনুমান করছেন যে, নিকটবর্তী আঞ্চলিক পরাশক্তির মদদে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সব ধরণের বৈশ্বিক চাপ ও প্রতিবাদ উপেক্ষা করার দুঃসাহস দেখাতে পারছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর