দেশের ভেতরে সামরিক শাসন বিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের শতাধিক নেতা-কর্মীকে হত্যা, হামলা, মামলা করেই ক্ষান্ত হয়নি মিয়ানমারের ক্ষমতা দখলকারী আর্মি। পুরো দেশকে ফৌজি বর্বরদশায় নিপতিত করেছে তারা। দেশের সীমান্তগুলো পর্যন্ত ফৌজি ত্রাসে পলায়নপর নাগরিকদের আদিঅন্তহীন মিছিলে ভরে গিয়েছে। সাধারণ নাগরিকদের মতোই বিপন্নতা ঘিরে ধরেছে দেশটির জাতিগত সংখ্যালঘুদেরও।
মিয়ানমারের পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র থাইল্যান্ডের রাজধানী থেকে বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েট প্রেস (এপি) সীমান্ত পেরিয়ে ক্যারেন সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীর পালিয়ে আসার খবর দিয়েছে। মিয়ানমারের দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তে বসবাসকারী এই ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী অতীতে কখনোই দেশ ছেড়ে পালানোর মতো পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়নি। কিন্তু এবারের সামরিক শাসনের নির্মমতায় তাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর বরাত দিয়ে এপি জানিয়েছে, পহেলা ফেব্রুয়ারি সামরিক শাসন জারির পর ফৌজি তাড়ায় ৮০০০ হাজার ক্যারেন নাগরিক বাড়িঘর ছেড়ে সীমান্তে আশ্রয় নিয়েছে। প্রতিদিনই এ সংখ্যা বাড়ছে।
অতীতে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের সংখ্যাগরিষ্ঠ বার্মিজ জাতি, সরকার, প্রশাসন ও সামরিক বাহিনীর রোষানলে পড়ে দেশত্যাগী হলেও এবার অন্য সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর সদস্যরাও বিপদে পড়ে দেশে ছাড়ছেন। বিশেষত, ক্যারেন সম্প্রদায়ের লোকজন আর্মির ধাওয়া খেয়ে সীমান্ত এলাকার বন-জঙ্গলে চরম বিপদের মধ্যে অমানবিক পরিস্থিতিতে জীবন কাটাচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সামরিক শাসন জারি হলে সাধারণ মানুষের সকল শ্রেণি ও পেশার মতো সংখ্যালঘুরাও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যোগদান করে, যা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং দাতা দেশ ও সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণে সমর্থ হয়। এতে বিশ্বব্যাপী সামরিক শাসকের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ উচ্চারিত হয় এবং মিয়ানমারে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি করা হয়।
মিয়ানমারের ক্ষমতা দখলকারী সামরিক বাহিনী এ কারণে বড় বড় শহরের আন্দোলন ও জনসমাবেশের পাশাপাশি সংখ্যালঘু জনপদে সাড়াশি হামলা চালায়। বিনা-ঘোষণায় অতর্কিতভাবে হামলা চালানোর ফলে জাতিগত সংখ্যালঘুরা প্রাণের ভয়ে সীমান্তের দিকে পালাতে বাধ্য হয়। প্রাপ্ত তথ্যে, ক্যারেন সম্প্রদায়ের মানুষ সামরিক হামলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদের পক্ষে বাড়িঘরে বসবাস করার মতো নিরাপত্তাও প্রতিনিয়ত হ্রাস পাচ্ছে সামরিক বাহিনীর বর্বর হামলার কারণে।
বিভিন্ন সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে আন্তর্জাতিক বার্তা সংখ্যাগুলো আরো জানাচ্ছে যে, সংখ্যালঘু ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর গ্রাম-জনপদ থেকে লোকজনকে তাড়িয়ে দিয়েই নিবৃত্ত হচ্ছে না আর্মি। বরং তাদের ঘরবাড়ি, স্থাপনা ইত্যাদি দখল করে নেওয়া হচ্ছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, রোহিঙ্গাদের মতো মিয়ানমারের অন্যান্য সংখ্যালঘুদেরও বৃহত্তম বার্মিজ জাতি নিয়ন্ত্রিত সেনাবাহিনী বর্তমান সামরিক শাসনের অবৈধ ক্ষমতা ও শক্তি প্রয়োগ করে দেশছাড়া করতে পারে।