মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভে শনিবার শতাধিক মানুষের বেশি মানুষ প্রাণ হারান। ওই ঘটনার পর রাতেই পার্টি দেন দেশটির সামরিক অভুত্থানের নেতা মিন অং হ্লাইং ও তার জেনারেলরা।
বিবিসি বলছে, সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে রাতে সেই বিলাসবহুল পার্টির আয়োজন করা হয়।
গত মাসে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখলের পর শনিবারই সবচেয়ে রক্তাক্ত দিন দেখেছে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার এ দেশটি। সেদিন মিয়ানমারজুড়ে অন্তত ১১৪ বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে মিয়ানমার নাও।
শতাধিক বিক্ষোভকারীর মৃত্যুর ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ১২টি দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী। মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী ত্রাসের রাজত্ব করেছিল বলে অভিযোগ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
গত ১ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থান হয়। আটক করা হয় দেশটির নোবেলজয়ী রাষ্ট্রনেতা অং সান সুচি ও তার দলের বেশ কয়েকজনকে। এরপর থেকেই দেশজুড়ে বিক্ষোভ চলছে। বিক্ষোভ দমনে কঠোর অবস্থানে রয়েছে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী।
দেশটির বাণিজ্যিক রাজধানী ইয়াংগনে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে সোমবার এক বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে ডেমোক্রেটিক ভয়েস অব বার্মা নামের একটি গণমাধ্যম।
বার্তা সংস্থা রয়র্টাস বলছে, মধ্যাঞ্চলীয় শহর বাগো, মিনহলা, খিন-ইউ, দক্ষিণাঞ্চলীয় মাওলামাইন, পূর্বের দেমোসেও ছোট ছোট বিক্ষোভ হয়েছে।
দেশটির গণতন্ত্রপন্থি বিক্ষোভকারীরা সেনাশাসনবিরোধী লড়াইয়ে মিয়ানমারের বিভিন্ন নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর সশস্ত্র অংশের সহযোগিতাও চেয়েছে।
নিহতদের একজনের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় রোববার নিরাপত্তা বাহিনী গুলি চালিয়েছে বলে জানায় প্রত্যক্ষদর্শীরা। এদিন দেশটির বিভিন্ন জায়গায় সহিংসতা আরও ১৩ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে বলে মিয়ানমারের ঘটনাবলী পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিকাল প্রিজনার্স জানিয়েছে।তাদের হিসাব অনুযায়ী ১ ফেব্রুয়ারির অভ্যুত্থানের পর শুরু হওয়া আন্দোলনে এখন পর্যন্ত অন্তত ৪৬০ বেসামরিক নিহত হয়েছে।
সোমবার ডিভিবি টিভি আগের রাতে আয়েইয়ারওয়াদি অঞ্চলের পাথেইন শহরে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে একজন নিহত হয়েছে বলে জানায়।
বাণিজ্যিক রাজধানী ইয়াংগনের সাউথ ডাগন এলাকায় গুলিতে দেড় বছর বয়সী এক শিশু আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে সংবাদ মাধ্যম মিজিমা।
পুলিশ এবং সামরিক জান্তার এক মুখপাত্রের কাছে এ প্রসঙ্গে জানতে চেয়ে ফোন করা হলেও তারা ধরেননি, জানিয়েছে রয়টার্স।
মিয়ানমারজুড়ে বিক্ষোভের অন্যতম প্রধান আয়োজকগোষ্ঠী জেনারেল স্ট্রাইক কমিটি অব ন্যাশনালিটিস (জিএসসিএন) ফেইসবুকে পোস্ট করা এক খোলা চিঠিতে ‘সেনাশাসনের বিরোধিতাকারী জনগণ, তরুণ, নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের সুরক্ষা’ নিশ্চিতে দেশটিতে ক্রিয়াশীল জাতিগত বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর সহযোগিতা চেয়েছে।দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার এ দেশটির বিস্তৃত অংশ দুই ডজন সশস্ত্র গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে; গত কয়েকদিনে ওই গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে সেনাবাহিনীর লড়াইয়ের তীব্রতাও বেড়েছে।
কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়ন (কেএনইউ) নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতে সেনাবাহিনীর বিমান থেকে বোমা ফেলার পর সেখানকার প্রায় ৩ হাজার বাসিন্দা সীমান্ত টপকে থাইল্যান্ডে চলে গেছে বলে গণমাধ্যম ও অ্যাক্টিভিস্টদের একটি গোষ্ঠী জানিয়েছে।
শনিবার কেএনইউ নিয়ন্ত্রিত একটি গ্রামে সেনাবাহিনীর বিমান হামলায় অন্তত ৩ জন নিহত হয়েছে। কেএনইউ এর আগে বলেছিল, তারা সীমান্তের কাছে একটি সেনা পোস্টে হামলা চালিয়ে ১০ জনকে হত্যা করেছিল।