কিউবায় অস্তমিত 'কাস্ত্রো'!

, আন্তর্জাতিক

লুৎফে আলি মহব্বত, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-25 23:38:24

সেই অকল্পনীয় ও অভাবণীয় ঘটনাই ঘটতে চলছে কিউবায়। কিউবার শাসন দল কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে ‘কাস্ত্রো’ পদবির কেউ থাকবেন না। গত ১৬ এপ্রিল শুরু হওয়া দলীয় সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন শনিবারই (১৭ এপ্রিল) পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা জানিয়েছেন রাউল কাস্ত্রো। সেই সঙ্গে 'কাস্ত্রো যুগ'র অবসান হচ্ছে কিউবায়।  

কিউবার বিপ্লবের মহানায়ক ফিদেল কাস্ত্রোর ভাই রাউল কাস্ত্রো বছর তিন আগেই দেশের প্রেসিডেন্ট পদ থেকেও সরে দাঁড়িয়েছিলেন। এবার ছাড়ার কথা ঘোষণা করলেন দলের শীর্ষ পদও। এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে পরবর্তী প্রজন্মের উপরই দলের দায়িত্বে ছেড়ে দিচ্ছেন তিনি। 

১৯৪৯ সালে তরুণ ফিদেল কাস্ত্রো কিউবার ক্ষমতা দখলের সময় তার ছায়াসঙ্গী হয়েছিলেন ২৭ বছর বয়সী ভাই রাউল কাস্ত্রো। ২০০৮ সালে অসুস্থতার কারণে কিউবার অবিসংবাদিত নেতা ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ফিদেল কাস্ত্রো রাউলের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই রাউল কাস্ত্রো দেশে ব্যাপক অর্থনৈতিক সংস্কার শুরু করেন। তরুণ হিসেবে কমিউনিস্ট কিউবার যে যুদ্ধ শুরু করেছিলেন, বৃদ্ধ বয়সেও তাই চালিয়ে যান তিনি।

৬০ বছর ধরে কিউবার দায়িত্ব সামলেছেন কমিউনিস্ট বিপ্লবের নায়ক ফিদেল ও তার ভাই রাউল। এবার সেই প্রথায় ছেদ পড়তে চলেছে। দলীয় সম্মেলনে ৮৯ বছরের রাউল কাস্ত্রো তার বক্তৃতায় জানান, নয়া নেতৃত্ব সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী চেতনায় দলকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন এবং দলীয় আদর্শের প্রতি অনুগত থাকবেন। 

প্রতি পাঁচ বছর অন্তর নীতিগত পর্যালোচনা ও নেতা নির্বাচনের জন্য বৈঠকে বসে কিউবান কমিউনিস্ট পার্টির শীর্ষ নেতৃত্ব। গোপনেই হয় সেই বৈঠক। তবে, বড় কিছু সিদ্ধান্ত হলে তা সরকারি সংবাদমাধ্যম মারফত জনগণকে জানানো হয়। 

২০১৬ সালের বৈঠকেই সরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন রাউল। এরমধ্যে ২০১৮ সালে ৬০ বছর বয়সী মিগুয়েল দিয়াজ-ক্যানেলের হাতে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা তুলে দিয়েছেন রাউল। মিগুয়েলই এবার কমিউনিস্ট পার্টিকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বর্তমানে কিউবা অত্যন্ত কঠিন আর্থিক সঙ্কটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আমেরিকার তরফে বাণিজ্যে দীর্ঘমেয়াদি নিষেধাজ্ঞা, করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। সার্বিকভাবে মানুষের মধ্যে হতাশা, ক্ষোভ বাড়ছিল। নিত্যদিন তাদের লড়তে হচ্ছে মূল্যবৃদ্ধি, খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর অভাবের সঙ্গে।

মানুষের মধ্যে মুক্ত সমাজ ও উদরনৈতিকতার পক্ষে জোরালো প্রত্যাশার মুখে  বিগত কয়েক বছরে দেশে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে কিছু ছাড় মিলেছে। সেখানেই আমজনতা, মূলত যুব সম্প্রদায়ের ক্ষোভের কথা উগ্রে দিচ্ছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে ইতিমধ্যেই সরকার কিছু সংস্কারের পথে হাঁটতে শুরু করেছে। 

তবে, পরিবর্তনের তোড়ে যে নতুন নেতৃত্ব রাষ্ট্র ও দলে অধিষ্ঠিত হচ্ছে, তারা জনগণের চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতি রক্ষা করতে পারবেন বলে আশা করছেন বিশ্লেষকরা। যদিও রাউল কাস্ত্রোর পরে কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে যারা আসছেন, তারা কেউই কিউবার বিপ্লবের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন না। তথাপি, সাম্রাজ্যবাদ তথা মার্কিন আধিপত্যের বিরুদ্ধে কিউবার স্বার্থে তারা সুদৃঢ় লড়াই অব্যাহত রাখবেন বলেই আশা করা হচ্ছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর