মমতার মুখ্যমন্ত্রীর ভবিষ্যৎ কিন্তু এখনো ঝুলেই আছে!

ভারত, আন্তর্জাতিক

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কলকাতা | 2023-09-01 05:26:26

শেষে হয়ে গেছে ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচন। জনতার রায় জানিয়ে দিয়েছে আগামী পাঁচ বছরের জন্য রাজ্যবাসী মুখ দেখতে চান মমতারই। আর তাই তৃতীয়বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। 

আক্ষরিক অর্থে মানতেই হবে হুইলচেয়ারের বসে যে খেলা দেখিয়েছেন তৃণমূলনেত্রী, তা বাংলার ভোটচিত্রে সত্যিই নজিরবিহীন। শুধু বাংলা নয় ভারতের কাছেও নজিরবিহীন। ফলে মোদি সরকারের ডিজিটাল ইন্ডিয়ার দ্বারা বাংলার হাইটেক ভোট পরিচলনাকেও চরম ধাক্কা দিয়েছেন মমতা। তবে বিজেপির কাছে তৃপ্তির ঢেকুর একটাই নন্দীগ্রামে তৃণমূল সুপ্রিমোকে পরাজিত করা। সংখ্যাতত্ত্বের হিসাবে হারার মার্জিন অঙ্কটা কম হলেও হার তো হারই। কিন্তু গত ২ মে মমতার হারা-জেতা নিয়ে কম নাটকীয় পট পরিবর্তন হয়নি।

সংবাদ সংস্থা এএনআই (ANI)ওই দিন দুপুরে টুইট করে ঘোষণা করে নন্দীগ্রামে মমতা ১২০১ ভোটে জয়ী হয়েছেন। এএনআইয়ের ওপর দায় চাপিয়ে জাতীয় এবং রাজ্য গণমাধ্যমগুলো হুবহু কপি করে চালিয়ে দেয়। ফলে যতই দায় সংস্থাটির ওপর দেওয়া হোক, এর দায় কোনো সংবাদ মাধ্যম এড়িয়ে যেতে পারে না। কারণ নির্বাচন কমিশন তখনও নন্দীগ্রামের ফল ঘোষণা করেনি। রাতের দিকে জানা গেল মমতা বন্দোপাধ্যায় ১৬২২ ভোটে বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারীর কাছে পরাজিত হয়েছেন। তবে তা নিয়ে পুনঃগণনার দাবি করেছেন মমতা। তখন যদি ফলের কোনো পরিবর্তন হয়, তা সময় বলবে।

কিন্তু দল জিতেও দলের স্রষ্টার হার ভারতের ভোট ইতিহাসে এই প্রথম। প্রশ্ন হলো নেত্রী পরাজিত হয়েও মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু আদৌ কি হওয়া যায় বা পরবর্তীতে এর পরিনাম কি হবে? নির্বাচন কমিশনের নিয়ম বলছে, মুখ্যমন্ত্রী হওয়া সম্ভব। সেক্ষেত্রে পরাজিত প্রার্থীকে বাংলার ২৯৪টি আসনের মধ্যে যেকোনো একটি আসন থেকে আগামী ছয় মাসের মধ্যে জিতে আসতে হবে। কিন্তু তখন যদি মমতা হারেন তৃতীয়বার আর সুযোগ পাবেন না। 

ফলে রাজ্যভার সামালানোর পাশাপাশি মমতাকে এখন খুঁজতে হবে কোন আসন তারজন্য শ্রেয়। এই মুহূর্তে রাজ্যে তিন আসনে ভোট বাকী। মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জ এবং জঙ্গিপুর। এই দুই কেন্দ্রে ভোট হওয়ার আগেই করোনা মৃত্যু হয়েছে দুই বাম প্রার্থীর। অপরদিকে উত্তর ২৪পরগণার খড়দা কেন্দ্র। এখানে তৃণমূল প্রার্থী জয় হওয়ার পরই করোনায় মারা যান বিধায়ক। বিধায়কহীন কেন্দ্রতো আর পড়ে থাকতে পারে না। ফলে এখানেও ভোট হবে।

এর বাইরে সূত্রের খবর মমতা পছন্দের আসন কলকাতার ভবানীপুর কেন্দ্র। সেক্ষেত্রে এই কেন্দ্র থেকে মমতাকে প্রার্থী হতে হলে ভবানীপুরের তৃণমূলের জয়ী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়কে বিধায়ক পদ থেকে পদত্যাগ করতে হবে। তবে এরই মধ্যে আবার করোনা জন্য অনির্দিষ্ট কালের জন্য ভোট পিছিয়ে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

যদি ছয়মাসের মধ্যে ভোট না হয় তখন কি হবে মমতার? সেক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন কোনো বিজ্ঞপ্তি জারি করতে পারে যে যতদিন ভোট স্থগিত থাকবে ততদিন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতাই থাকবে। আবার বিজ্ঞপ্তি জারি নাও করতে পারে। অন্য কোনো উপায়ও বের করতে পারে।

তবে এটা ঠিক যে কেন্দ্রেই মমতা প্রার্থী হবেন সেখানে সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বে রাজ্যের বিরোধী দল বিজেপি। কারণ তাদের কাছে পরমতৃপ্তির ব্যাপার হবে মমতাকে পরাজিত করা। যদি সেই অঘটন ঘটে তখন কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ ছাড়া ভিন্ন কোনো উপায় আর থাকবে না মমতার হাতে। তবে সবই অনুভাবন। কারণ যে নেত্রী ২১৩ আসন নিয়ে ক্ষমতায় আসতে পারেন তিনিও ছেড়ে দেওয়ার পাত্রী নন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর