তুরস্ক কাবুল বিমানবন্দর ‘দেখভালে’ কতটা সক্ষম?

এশিয়া, আন্তর্জাতিক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-26 14:29:42

সংঘাতময় এক রাষ্ট্রের নাম আফগানিস্তান। তালেবানের শাসনে বর্বরতা। অতঃপর রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ, ধ্বংসস্তুপ মাড়িয়ে সেখান থেকে মার্কিনিদের কব্জায়। তবুও থামেনি রক্তপাত। দুই দশক ধরে তালেবান নিজেদের সংঘবদ্ধ করেছে। অবশেষে আফগানিস্তানের মসনদ দখলে নিয়েছে সশস্ত্র এ গোষ্ঠী।

প্রথম মেয়াদে আফগানিস্তানের ক্ষমতায় বসা সেই তালেবান এখন আরও কৌশলী। আঞ্চলিক রাজনীতিতে তাদের নয়া নীতি। তালেবানে আস্থা রাখার সুর চীন, রাশিয়া, পাকিস্তান, ইরানের। হাল ছাড়ছে না যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা রাষ্ট্রপ্রধানরাও।

তালেবানের লক্ষ্য এখন মুসলিম বিশ্বের নেতাদের সঙ্গে সখ্যতা। সেই লক্ষ্যে প্রথমেই তালেবান যেন জাল বিছিয়েছে তুরস্কে। কাবুল দখলের দুই সপ্তাহের মাথায় ন্যাটোভুক্ত দেশটির প্রেসিডেন্টকে কাবুলের হামিদ কারজাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দেখভাল করার প্রস্তাব দিয়েছে তারা।

বৈঠকের পর সেই প্রস্তাবের কথা গলা উঁচিয়ে প্রকাশ্যে এনেছেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। যা ন্যাটোভুক্ত দেশগুলো তো বটেই, অন্য দেশেরও জন্যও মাথাব্যথার কারণ।

আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের পর তালেবান দেশটির রাজধানী হামিদ কারজাই বিমানবন্দর সুশৃঙ্খলাভাবে পরিচালনা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে তুরস্ককে স্পষ্ট প্রস্তাব দিয়েছে। সম্প্রতি তুরস্কের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে তালেবান নেতাদের বৈঠকে এমন প্রস্তাব দেয়া হয় বলে জানিয়েছেন খোদ তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান।

তবে গত ১৯ আগস্ট কাবুল বিমানবন্দরে ভয়াবহ হামলার পর এখন বড় প্রশ্ন—তুরস্ক কী হামিদ কারজাই বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবে? পারবে কী সুশৃঙ্লখভাবে পরিচালনা করতে? নিজ দেশের অভ্যন্তরে নিরাপত্তা দিতে তালেবান তুরস্কের কাছে বিমানবন্দরের কতটুকুই ছাড়বে? তুর্কি সেনা বা নিরাপত্তাকর্মীদের কার্যপরিধি কী হবে?

আনদোলু নিউজ এজেন্সির বরাত দিয়ে বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, তুর্কি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে তালেবানের স্পষ্ট প্রস্তাব ছিল—‘আঙ্কারা আমাদের নিরাপত্তা দিক। কিন্তু তুরস্ক কী এটা (বিমানবন্দর) সঠিকভাবে অপারেট (পরিচালনা) করতে পারবে?’

বিশেষজ্ঞদের মত হিসেবে উল্লেখ করে বিবিসি তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে—তুরস্ককে যদি কাবুলের হামিদ কারজাই বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ও পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয় এবং তারপর যদি আরেকটি রক্তাক্ত হামলা হয়। তখন তুরস্ক কীভাবে বিশ্বকে হামলা ঠেকাতে পারার ব্যর্থতা ব্যাখ্যা করবে? কারণ এটা খুব সহজ কাজ নয়।

আরও পড়ুনতুরস্ককে কাবুল বিমানবন্দর ‘দেখভালে’র প্রস্তাব তালেবানের!

তবে তালেবানের পক্ষ থেকে বিমানবন্দর ‘দেখভাল’ করার প্রস্তাব দেয়ার বিষয়টি তুর্কি প্রেসিডেন্টের মুখ থেকে গণমাধ্যমে আসায় ধারনা করা হচ্ছে, তুরস্ক তালেবানের প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে চ্যালেঞ্জ নিতে অনেকটাই রাজি।

একধাপ এগিয়ে এরদোয়ান গত ২৬ আগস্ট বলেই রেখেছেন, ‘কাবুল বিমানবন্দর পরিচালনার কাজ করতে তালেবানের দেওয়া প্রস্তাব আমরা এখনো পর্যালোচনা করছি। আমরা প্রথমবারের মতো তালেবানের সঙ্গে বৈঠক করেছি। তাদের সঙ্গে সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে আলোচনা হয়েছে। প্রয়োজনে আরও বৈঠকে বসতেও রাজি তুরস্ক।’

আরও পড়ুন: কাবুলে দূতাবাস ও কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাবে তুরস্ক

দুদিন পর ২৮ আগস্ট কাবুলে নিজেদের থাকার বিষয়ে আরও স্পষ্ট করেছেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেছেন, ‘তুরস্ক আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে পুনরায় তাদের দূতাবাস চালু করবে এবং কাবুলের সঙ্গে সব ধরনের কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রাখবে।’

এদিকে, তালেবানকে সমর্থন দেওয়া নিয়ে তুরস্কের নাগরিকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। যদিও প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান বলছেন, ‘এটি কূটনৈতিক বিষয়। তাদের প্রত্যাশা কী বা তারা কী চায়, সেটা আলোচনা ছাড়া জানা সম্ভব নয়।’

কিন্তু সবচেয়ে মজার বিষয় হলো—ন্যাটোভুক্ত তুরস্ক গেল কয়েকদিনে কাবুল থেকে তাদের অন্তত ৫০০ সেনা সরিয়ে নিয়েছে। নীতি বদলে তুর্কি সেনাদের কী আবার কাবুলে ফেরাবেন এরদোয়ান?

এ সম্পর্কিত আরও খবর