আর্থিক অনটনে বেড়ে উঠেছিলেন তিনি। জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করে বড় হয়ে নিজের শিল্পকর্ম দিয়েই সমুচিত জবাব দিলেন দারিদ্র্যকে। তিনি ভারতের প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী মকবুল ফিদা হুসেন। আজ ১৭ সেপ্টেম্বর তার জন্মদিন। ১৯১৫ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর তিনি ভারতের মহারাষ্ট্রে জন্ম নেন। তিনি এমএফ হুসেন নামেই বেশি পরিচিত। বিখ্যাত ফোর্বস ম্যাগাজিন মকবুল ফিদা হুসেনকে 'ভারতের পিকাসো' নামে অভিহিত করে।
তিনি যখন দেড় বছরের শিশু তখন তার মা জৈনব মারা যান। দাদার সঙ্গে হুসেনের সখ্য ছিল। দাদা হারিকেন, কুপি ইত্যাদি বানাতেন। পরবর্তী জীবনে এ দাদা বারবার হুসেনের ছবিতে ঘুরেফিরে এসেছেন। বাল্যকালে হুসেন কিছুদিন মাদ্রাসায় পড়েছিলেন। তারই প্রভাবে হুসেনের ছবিতে মুসলমান ধর্মাবলম্বীদের ক্যালিওগ্রাফিক জ্যামিতিক গড়ন, তার প্রলম্বিত এবং আনুভূমিক রেখা সরব হয়ে ওঠে।
বয়স তখন ২০ তার। মুম্বাইয়ে এসে জে জে স্কুল অব আর্টসে শিক্ষানবিশ শুরু হয় হুসেনের। বাস করতেন এক অখ্যাত পল্লীতে। বেশিরভাগ সময় ফুটপাতে, রেলস্টেশনে ঘুরে বেড়াতেন। একদিন সিনেমার হোর্ডিংয়ের কাজ পেলেন। ধীরে ধীরে রং তৈরি করা, কাপড় বাঁধা, ফ্রেম বানানো ইত্যাদি মন দিয়ে দেখতেন। তার হাতে সিনেমার পোস্টার আলাদাভাবে নান্দনিক মাত্রায় উত্তীর্ণ হয়ে ওঠে।
১৯৬৭ সালে তার প্রথম চলচ্চিত্র ‘থ্রু দ্য আইজ অব আ পেইন্টার’ নির্মাণ করেন। এটি বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবে গোল্ডেন বেয়র পুরস্কার পায়। এ ছাড়া তার পরিচালিত ‘গজ গামিনী’ চলচ্চিত্রে জনপ্রিয় ভারতীয় অভিনেত্রী মাধুরী দীক্ষিত মূল ভূমিকায় অভিনয় করেন।
মকবুল ফিদা হুসেন হিন্দুধর্ম, পুরাণ, ইতিহাস, রাজনীতি, সাহিত্য, ব্যক্তিত্ব, সমসাময়িক সবকিছু থেকে তার ছবির প্রাণসঞ্চার করেছিলেন। ১৯৫০ সালে হয় তার প্রথম প্রদর্শনী। এ প্রদর্শনীর মাধ্যমে তিনি শিল্পী হিসেবে প্রাথমিক পরিচিতি পান। সেই বছরই ফ্রান্সিস নিউটন সুজার আমন্ত্রণে তিনি প্রগ্রেসিভ আর্টিস্ট গ্রুপে যোগ দেন।
১৯৫৫ সালে ললিতকলা একাডেমি আয়োজিত প্রথম জাতীয় প্রদর্শনীতে প্রথম পুরস্কার পান। চীন ও ইউরোপ ভ্রমণ শেষে প্রদর্শনী হয়। ১৯৭১ সালে পাওলো বিয়েনালে শ্রেষ্ঠ পুরস্কার পাওয়ার পর হুসেন ভারতে বিখ্যাত হয়ে ওঠেন। পদ্মভূষণ, পদ্মবিভূষণ, টোকিও বিয়েনাল পুরস্কারসহ পৃথিবীর অনেক বিখ্যাত পুরস্কার তিনি পেয়েছেন। নেহরু পরিবারের সঙ্গে তার সখ্য ছিল। ইন্দিরা গান্ধীর ছবি এঁকেছেন। মাদার তেরেসা তার প্রিয় বিষয়। এ নারীকে তিনি বারবার এঁকেছেন।
মৃত্যুর আগের দিনগুলো তিনি কাটিয়েছিলেন লন্ডন ও কাতারে। জন্মভূমিতে ফেরার ব্যাকুলতা থাকলেও পারেননি। ক্রমেই দুর্বল হতে হতে ২০১১ সালের ৯ জুন তিনি হার্টঅ্যাটাকে মারা যান।