ইন্দোনেশিয়ায় বিমান বিধ্বস্তে জীবিতের খোঁজ মেলেনি

এশিয়া, আন্তর্জাতিক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 00:33:23

ইন্দোনেশিয়ার জাভা সাগরে ১৮৯ আরোহী নিয়ে লায়ন এয়ারের যাত্রীবাহী বোয়িং ৭৩৭ বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় এখনো কাউকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। দেশটির অনুসন্ধান ও উদ্ধার সংস্থার কর্মকর্তারা বলছেন, ধ্বংসাবশেষ ও মানবদেহের অংশের খোঁজ পাওয়া যাওয়ায় ধারণা করা হচ্ছে কেউ জীবিত নেই।

ইন্দোনেশিয়ার অনুসন্ধান ও উদ্ধার সংস্থা সোমবার আল-জাজিরাকে জানিয়েছে, স্থানীয় সময় ৬টা ২০ মিনিটে জাকার্তা থেকে সুমাত্রা যাওয়ার পথে লায়ন এয়ারের একটি যাত্রীবাহী বিমান জাভা সাগরে বিধ্বস্ত হয়েছে।

কর্মকর্তারা জানান, বিমানটিতে ক্রুসহ ১৮৯ জন আরোহী ছিল। উড্ডয়নের ১৩ মিনিট পর স্থানীয় সময় সাড়ে ৬টায় বিমানটি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়।

বিমান ট্র্যাকিং সেবাদাতা ফ্লাইটর‌্যাডার ২৪ জানায়, বিমানটি ছিল একটি বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স ৮।

এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারদের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার সময় বিমানটি সমুদ্রপৃষ্ঠের এক হাজার ১১৩ মিটার ওপর দিয়ে পাড়ি দিয়ে রাজধানী থেকে সুমাত্রার পংকল পিনাং যাচ্ছিল।

ইন্দোনেশিয়ার বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের মুখপত্র ইয়োহানেজ সিরাইত জানান, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার আগে পাইলট খুব দ্রুত বিমানবন্দরে ফিরতে অনুরোধ করেছিল।

সিরাইত বলেন, ‘এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল পাইলট সে অনুমতি দিয়েছিল, কিন্তু তারপরই বিমানটি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।’

অনুসন্ধান ও উদ্ধার সংস্থার প্রধান মোহাম্মদ সিয়াগি জানান, বিমানটি যেখানে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয় সেখানে ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে।

এক সংবাদ সম্মেলনে সিয়াগি বলেন, ‘আমরা এখনও জানি না সেখানে কেউ বেঁচে আছেন কিনা। আমরা আশা করি, প্রার্থনা করি কিন্তু এখনো নিশ্চিত হতে পারিনি।’

সংস্থার প্রায়োগিক পরিচালক ব্যামব্যাং সারিও বলেন, ‘এখন আমাদের মূল কাজ হচ্ছে মূল বিমানের ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পাওয়া।’

২০১৪ সালের ডিসেম্বরে ইন্দোনেশিয়ায় এয়ারএশিয়া’র একটি বিমান সাগরে নিমজ্জিত হওয়ার পর এটিই সবচেয়ে বড় বিমান দুর্ঘটনা। ঐ দুর্ঘটনায় বিমানে থাকা ১৬২ জনের সবাই প্রাণ হারান।

লায়ন যাত্রীবাহী বিমানে তিন শিশুসহ ১৮১ আরোহী ও আট জন ক্রু ছিল। ধারণা করা হচ্ছে বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার পর ডুবে গেছে।

ধ্বংসাবশেষ পাওয়া স্থানে ডুবুরিদের কাজে লাগানো হয়েছে। সাগরের সেখানে জীবনরক্ষাকারী জ্যাকেট ও মোবাইল ফোন ভাসতে দেখা যায়।

জাতীয় অনুসন্ধান ও উদ্ধার সংস্থা জানায়, বিমানটি পশ্চিম জাভার সাগরে পতিত হয়েছে, যেখানে পানির গভীরতা ৩০ থেকে ৩৫ মিটার।

দেশটির পরিবহণ নিরাপত্তা কমিটির এক কর্মকর্তা জানান, তিনি বিমানটির বিধ্বস্ত হওয়ার কোনো কারণ সম্পর্কে এখনো নিশ্চিত হতে পারেননি।

সুয়েরজানতো জাজনো বলেন, ‘কন্টোল টাওয়ার থেকে বিমানটি যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করব। বিমানটি খুবই আধুনিক মানের, এটি চলার সময় তথ্য প্রেরণ করে এবং আমরা এটিও পর্যালোচনা করব। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ব্লাকবক্স।

ফ্লাইটর‌্যাডার ওয়েবসাইট দেখায় যে বিমানটি উড্ডয়নের সময়ই দক্ষিণ দিকে বাঁক নিচ্ছিল। এরপর জাভা সাগরের ওপরে উপকূলের অদূরে যাত্রাপথ শেষ করার আগে উত্তর দিকে এগোচ্ছিল।

ফ্লাইটর‌্যাডার জানায়, সাগরে পতিত হওয়ার আগে বিমানটি একবার এক হাজার ৫২০ মিটার উচ্চতায় ওঠে। রেকর্ড অনুসারে বিমানটি সর্বশেষ এক হাজার ১১৩ মিটার উচ্চতায় ছিল এবং গতি ৩৪৫ নটে বৃদ্ধি পেয়েছিল।

ইন্দোনেশিয়ার জ্বালানি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পার্টামিনা কর্মকর্তা সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে জানান, সাগরে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রমের পাশেই বিমানের আসনসহ ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে।

দেশটির টেলিভিশনে দেখা যায়, পংকল পিনাং বিমানবন্দরের বাইরে কয়েকশত মানুষ অপেক্ষা করছেন।

বিমান দুর্ঘটনা অনুসন্ধানকারীদের মতে, গত আগস্টে লায়ন বিমানে বোয়িংটি অন্তর্ভুক্ত হয়। এ পর্যন্ত বিমানটি ৮০০ ঘণ্টা উড্ডয়ন করেছে।

জ্বালানি সাশ্রয়ী বহুল বিক্রিত বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স এর উন্নত সংস্করণ এ বিমানের এটিই প্রথম কোনো দুর্ঘটনার খবর। ২০১৭ সালে প্রথমবারের মত বোয়িং ৭৩৭ যাত্রা শুরু করে।

টুইটারে বিমানটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান জানায়, বিধ্বস্ত প্রতিবেদন সম্পর্কে বোয়িং খুবই সতর্ক ছিল এবং নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছিল।

আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার এ ঘটনায় সাহায্য করবে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় পরিবহণ নিরাপত্তা বোর্ড। এক্ষেত্রে তারা বোয়িং ও যুক্তরাষ্ট্র-ফ্রান্স নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সিএফএম এর কারিগরি পরামর্শ নেবে।

লায়ন এয়ার হচ্ছে ইন্দোনেশিয়ার সবচেয়ে নতুন ও বড় বিমান সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান, এটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা করে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর