সামরিক অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমারে জলবায়ু বিপদ বাড়ছে

, আন্তর্জাতিক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম | 2023-08-25 23:25:37

মিয়ানমারে সামরিক বাহিনীর অর্থায়নের জন্য প্রাকৃতিক সম্পদের শোষণ বাড়িয়েই চলেছে। যা জলবায়ুর দিক থেকে মিয়ানমারকে পর্যায়ক্রমে ঝুঁকির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। ক্রমবর্ধমান উদ্বেগ রয়েছে যে দেশটি একটি গুরুতর পরিবেশগত সংকটের ঝুঁকিতে বিরাজ করছে।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলকারী সেনাবাহিনীরা তাদের নিয়ন্ত্রণ শক্তিশালী করতে প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার বাড়তে থাকায় দেশের জন্য ধ্বংসাত্মক নীতিগুলিকেও উপেক্ষা করে যাচ্ছে।

এদিকে গ্লোবাল ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেস্ক মিয়ানমারকে জলবায়ু সংকটে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর তালিকা অন্তর্ভুক্ত করেছে। কেননা দেশটিতে প্রায়শই বন্যা, ভুমিধস এবং খরার সম্মুখীন হতে দেখা যায়। যা কয়েক দশক ধরে অনিয়ন্ত্রিত বন উজার এবং খনিজ ও রত্ন খননের কারণে বৃদ্ধি পাচ্ছে। শুধু তাই নয়, গত ২০ বছরে দেশটি সবচেয়ে বেশি আবহাওয়া সংক্রান্ত ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।

কিন্তু অং সান সু চি ক্ষমতায় থাকাকালীন নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্প এবং জলবায়ুর স্থিতিস্থাপকতা বিকাশের জন্য উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা দক্ষলের পর এই অস্থায়ী প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।

২০২০ সালে ডেভেলপাররা একটি সৌরবিদ্যুতের দরপত্র উপস্থাপন করেছিল। যার মোট ১ জিডব্লিউ বা মিয়ানমারের বর্তমান শুষ্ক মৌসুমের ৩.১ জিডব্লিউ উপলব্ধ ক্ষমতার চেয়ে একতৃতীয়াংশ বেশি। যা সেনাবাহিনীর অভ্যুত্থানের কারণে সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয়েছিল।

ফলে মে মাসে সামরিক বাহিনী তাদের নিজস্ব সৌরবিদ্যুতের দরপত্র চালু করেছিল। কিন্তু দরদাতার অভাব থাকার কারণে এর সময়সীমা তিন বার বাড়াতে হয়েছে। সর্বশেষ সময়সীমা অক্টোবর মাসের মধ্যে শেষ হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত তার ফলাফল প্রকাশ করা হয়নি।

ইয়াঙ্গুন-ভিত্তিক মিয়ানমার সেন্টার ফর রেসপন্সিবল বিজনেসের পরিচালক এবং মিয়ানমারের সাবেক ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত ভিকি বোম্যান দেশটির জলবায়ু নিয়ে সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরার সাথে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘মিয়ানমারে ভালো বিনিয়োগযোগ্য প্রকল্প রয়েছে যা প্রাকৃতিক বনায়ন এবং পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি প্রকল্পের মতো জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা তৈরি করবে। কিন্তু অভ্যুত্থানের পর থেকে উন্নয়ন সহযোগীরা নিথর বলে মনে হচ্ছে, এবং বেসরকারি খাতের বিনিয়োগকারীরা এখন স্বভাবতই মিয়ানমারকে উচ্চ ঝুঁকি হিসেবে দেখেন এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বিকল্পের দিকে তাকান, যদিও জলবায়ু বিনিয়োগে মিয়ানমারের মতো বাস্তবে অনেক সমস্যা থাকতে পারে’।

গত নভেম্বর মাসে গ্লাসগোতে কপ ২৬-এ বিশ্বের শীর্ষ জলবায়ু আলোচনায় মিয়ানমারের অনুপস্থিতি দেশটির অভ্যুত্থান-প্ররোচিত আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতা এবং অভ্যুত্থান নেতাদের স্বীকৃতির জন্য চলমান যুদ্ধ এবং জাতীয় ঐক্য সরকার (এনইউজি), সমান্তরাল প্রশাসনের কর্মকর্তাসহ নির্বাচিতদের কর্মকর্তাদের মধ্যে প্রতিফলিত করেছে।
এদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে পরিবেশগত শোষণ দেশটিকে আরও দারিদ্রের দিকে ঠেলে দিচ্ছে এবং খাদ্যের নিরাপত্তাহীনতা বাড়িয়ে তুলছে। এছাড়া দেশটির সামরিক বাহিনীরা তাদের বিরুদ্ধে যেকোন প্রতিরোধকে চূর্ণ করে থাকে। ফলে মিয়ানমারে আসন্ন জলবায়ুর সংকটকের সাথে মোকাবিলা করার ইচ্ছা পোষণ করবে এমন লোক দেশটিতে নেই বললেই চলে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর