মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রে মধ্যবর্তী নির্বাচনে ভোট নেওয়া হয়। নির্বাচনে হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভের সব আসনে এবং সিনেটের ৩৫ আসনে ভোট নেওয়া হয়। সেই সঙ্গে ৩৬টি অঙ্গরাজ্যে গভর্নর পদে এবং অঙ্গরাজ্য পরিষদ ও স্থানীয় পরিষদের অনেক আসনের জন্যও ভোট নেওয়া হয়।
সদ্য শেষ হওয়া ওই নির্বাচনে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার পাশাপাশি নিজস্ব কিংবা প্রতিবেশী প্রদেশের সমস্যাগুলোর ওপরও সিল দেওয়ার সুযোগ ছিল ভোটারদের সামনে। মাদক নির্মূল, গর্ভপাত প্রসঙ্গ, ভোটাধিকার প্রয়োগ, বয়োবৃদ্ধ, সমকামী, গৃহহীন ও ক্যানাবিসদের অধিকার ইত্যাদি প্রসঙ্গে বিভিন্ন দাবি ও সমস্যার কথা উল্লেখযোগ্য ছিল ব্যালটে।
ভোটাররা পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার পাশাপাশি ভোটে নির্দিষ্ট প্রদেশে সমস্যাও চিহ্নিত করার সুযোগ পান। এমনও দেখা গেছে কোনো প্রার্থীর প্রতিশ্রুতি ছিলো না, কিন্তু একটা সমস্যা চিহ্নিত হয়েছে। যেটার সমাধান জনতার ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিকে করতে হবে।
যেমন সান ফ্রান্সিসকোতে গৃহহীনদের জন্য যথার্থ ব্যবস্থা করার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েছে প্রদেশটির ভোটাররা। প্রদেশটির বড় বড় ৪শ’ কোম্পানি থেকে কর নিয়ে এই গৃহহীন মানুষদের জন্য সহায়তার করার বিষয়ে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপকে সমর্থন জানান ভোটাররা।
ক্যালিফোর্নিয়ার জনগণ তাদের প্রদেশে অবসরপ্রাপ্ত বৃদ্ধ মানুষদের নিয়ে চলমান সমস্যাটি ভোটের মাধ্যমে সামনে নিয়ে আসে। এখানকার বৃদ্ধদের মানসিক সেবার পাশাপাশি শিশুদের মতো করে পরিচর্যার কথা তুলে ধরেন ক্যালিফোর্নিয়ার বাসিন্দারা।
ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার ভোটাররা ‘অতিরিক্ত গর্ভপাত প্রবণতা’র ওপর সরকারের দেওয়া নিষেধাজ্ঞাকে সমর্থন করেছেন। এতে করে এ অঞ্চলে ‘জন্ম নেওয়ার আগে শিশুর মৃত্যুর’ সংখ্যা কমবে বলেও দাবি করছে এখানকার মানুষজন।
ফ্লোরিডাতে ১২ লাখেরও বেশি মানুষ জেলখানায় রয়েছে। জেলখানার এই কয়েদিদের ভোটাধিকার সংরক্ষণের জন্য সংবিধান সংশোধন করে দেশটির সরকার। ১৫০ বছর পূর্বের করা এ আইনের সংশোধনের পক্ষে ফ্লোরিডার ৬৫ শতাংশ জনতা রায় দেয় বলে জানায় মিয়ামি হেরাল্ড নামের দেশটির আঞ্চলিক সংবাদমাধ্যম।
এছাড়াও মিশিগানে ক্যানাবিসদের (গাঁজা জাতীয় মাদক সেবনকারী) সামাজিকভাবে গ্রহণের পক্ষে ভোট দেয় মার্কিন জনতা। ম্যাসাচুয়েটসে সমকামীদের সামাজিক অধিকার স্থাপনের পক্ষ নিয়েছে দেশটির জনগণ।
এছাড়াও দেশেটির বিভিন্ন প্রদেশের বিভিন্ন সমস্যাকে ব্যালট পেপারের মাধ্যমে তুলে ধরে ভোটাররা। তবে প্রার্থী নির্বাচনের পাশাপাশি আইনি ও সামাজিক সমস্যাগুলো তুলে ধরে এক যুগান্তকারী দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের এই নির্বাচন। যে দৃষ্টান্ত অন্যান্য দেশেগুলোর জন্যও আদর্শ হয়ে থাকবে। যে নির্বাচনে শুধু একজন প্রার্থী জয় পাবে না একটা সমস্যাও জয় পাবে। যেটার সমাধান করে নাগরিক কল্যাণ সাধন করবে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি।