গণহত্যা চলছে মিয়ানমারে: বিবিসির অনুসন্ধান

এশিয়া, আন্তর্জাতিক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-31 22:56:24

মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালানোর অভিযোগ পুরোনো। তবে, এবার দেশটির সামরিক সরকারের বিরোধিতা করায় গণহত্যা চালানো হয়েছে বলে বিবিসির এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটির সেনাবাহিনী গত জুলাইয়ে ধারাবাহিকভাবে কয়েকটি গণহত্যা চালায়। এতে কমপক্ষে ৪০ জন মানুষকে হত্যা করা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী এবং গণহত্যা চালানোর সময় পালিয়ে বেঁচে যাওয়াদের বরাত দিয়ে বিবিসির এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গ্রামে গ্রামে তল্লাশি চালিয়ে সেনারা কিছু গ্রামবাসীকে আলাদা করে ও নির্যাতন চালায়। এরপর তাঁদের হত্যা করা হয়।

এ ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ও ছবি প্রকাশিত হয়েছে। এতে দেখা যায়, নিহতদের বেশিরভাগকে প্রথমে নির্যাতন করা হয়েছে এবং পরে হত্যা করে কবরে সমাহিত করা হয়েছে।

গত জুলাইয়ে মিয়ানমারের সাগাইং জেলার কানি টাউনশিপে পৃথক চারটি ঘটনায় এসব হত্যাকাণ্ড চালানো হয়। এই এলাকাটি জান্তা বিরোধীদের ঘাঁটি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

তবে, সামরিক সরকারের একজন মুখপাত্র এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

এ নিয়ে নতুন করে তদন্ত শুরু করেছে জাতিসংঘ। মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে কি না, তা নিয়ে তদন্ত করছে সংস্থাটি।

কানির ১১ জন প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ানের সঙ্গে মিয়ানমারের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে কাজ করে যুক্তরাজ্যভিত্তিক মিয়ানমার উইটনেস যেসব ভিডিও ফুটেজ ও ছবি সংগ্রহ করেছে তার মিল পাওয়া গেছে।

বিবিসি বলছে, ইন নামের একটি গ্রামে সবচেয়ে বড় হত্যাকাণ্ডটি চালানো হয়। সেখানে কমপক্ষে ১৪ জনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে এবং তাদের মরদেহ একটি জঙ্গলে ফেলে দেওয়া হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, হত্যা করার আগে তাঁদের প্রথমে দড়ি দিয়ে বেঁধে পেটানো হয়। ওই নারী বলেন, আমরা সেনাদের কাছে প্রাণভিক্ষা চেয়েছি। কিন্তু তাঁরা এতে কোনো সাড়া দেননি। ওই সময় সেনারা নারীদের উল্টো জিজ্ঞেস করেছে, যাঁদের ধরা হয়েছে তাঁদের মধ্যে কি আপনাদের স্বামীরা রয়েছেন। থাকলে তাঁদের জন্য শেষ ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করুন।

গণহত্যা চালানোর সময় পালাতে সক্ষম এক ব্যক্তি বলেন, হত্যা করার আগে সৈন্যরা কয়েক ঘণ্টা ধরে ভয়ঙ্কর নির্যাতন চালায়। তারা হাত-পা বেঁধে পাথর ও রাইফেলের বাট দিয়ে পিটিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে।

নির্যাতনকারী কিছু সৈন্যের বয়স ১৭ বা ১৮ বছর হবে, আবার অনেকে ছিলেন বয়স্ক। যাঁরা নির্যাতন চালিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে একজন নারী ছিলেন।

এই গ্রামের কাছেই জি বিন ডুইন গ্রামে জুলাইয়ের শেষের দিকে নির্যাতন চালানো হয়। যেখানে ১২টি বিকৃত মৃতদেহ দাফন করা হয়। এর মধ্যে একটি ছোট দেহ উদ্ধার করা। এটি সম্ভবত একটি শিশুর এবং একটি প্রতিবন্ধী ব্যক্তির মরদেহ ছিল।

ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, বরই গাছের সঙ্গে ঝুলানো অবস্থায় ৬০ বছর বয়সী এক ব্যক্তির মরদেহ। বিবিসি ছবিগুলো পর্যালোচনা করে দেখেছে, মরদেহের শরীরে নির্যাতনের স্পষ্ট লক্ষণ দেখা গেছে।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে অং সান সুচির নেতৃত্বাধীন গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে দেশটির নিয়ন্ত্রণ নেয় সামরিক বাহিনী। এরপর থেকে দেশটিতে প্রতিবাদ হচ্ছে। এসব বিক্ষোভে নিয়মিত হামলা চালাচ্ছে নিরাপত্তা বাহিনী। এ ছাড়া গ্রেফতারের ঘটনাও ঘটছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর