‘মেয়েকে বিক্রি করেছি এখন কিডনি’-আফগান বস্তিতে ক্ষুধার জ্বালা

, আন্তর্জাতিক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক,বার্তা২৪.কম | 2023-08-30 02:26:59

সম্প্রতিকালে সবচেয়ে সঙ্কটময় পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে আফগানিস্তান। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ভগ্নদশার সঙ্গে রয়েছে মানবিক সঙ্কট।

২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতা দখলের পর আফগানিস্তানের উপর জারি করা অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার ভঙ্গুর হয়েছে সে দেশের অর্থনীতির সঙ্গে করোনা ও ক্ষরার দাপটে কর্মহীন দেশের বহু মানুষ। সেই সাথে মুদ্রাস্ফীতির চাপে পড়েছে রহমতির মতো আরো পরিবার। নিজেদের কিডনি বিক্রি করাই তাদের কাছে অর্থ উপার্জনের অন্যতম পথ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

প্রায় চার বছর আগে আফগানিস্তানের বদগিস প্রদেশের ভিটেমাটি ছেড়ে বস্তিতে এসেছিলেন দেলরম রহমতি, আট সন্তানের মুখে খাবার জোটাতে দিশেহারা অবস্থা রহমতিদের। ক্ষুধার জ্বালায় মাস কয়েক আগে বাধ্য হয়ে বিক্রি করে দিয়েছেন নিজের মেয়েদের। রহমতি বলেন, 'অচেনা লোকদেরে হাতে বিক্রি করে দিয়েছি নিজের মেয়েদের। তাদের একজনের বয়স আট আর অন্যজনের বয়স ছয়।'

এক লাখ আফগান মুদ্রায়, বাংলাদেশি টাকায় ৮১ হাজার ৯শ ২৭ টাকায় এক একটি মেয়েকে বিক্রি করে হাতে কিছু অর্থ এসেছে কিন্তু তাতে রহমতির সংসারে উপকার হয়নি। দুই ছেলের চিকিৎসায় সেই অর্থ শেষ! রহমতির এক ছেলে ভুগছে মানসিক অসুস্থতায়, অন্যজন পক্ষাঘাতগ্রস্ত। স্বামীর জন্য নিয়মিত ওষুধ কিনতে হয়। উপায় না পেয়ে দুই মাস আগে দেড় লাখ আফগানিতে নিজের ডান কিডনিও বিক্রি করেছেন রহমতি এবং এরপর থেকে নিজেও অসুস্থ। কিন্তু, চিকিৎসা করানোর জন্য অর্থ নেই। রহমতি বলেন, 'মেয়েদের বিক্রি করাটা যন্ত্রণার। তবে ঋণের বোঝা নামাতে আর পেটের জ্বালায় আমার কিডনিও বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছি।'

তালেবানশাসিত আফগানিস্তানের এ রকম হাজারো রহমতির দেখা মিলবে বলে জানাচ্ছে দ্যা গার্ডিয়ানের এই প্রতিবেদনটি। 

অস্ত্রোপচাররে পর এখনও পুরোপুরি সুস্থ হন নি রহমতি। তিনি বলেন, 'এখনও ঠিকমতো হাঁটতে পারি না। শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। আমার ক্ষত শুকায়নি তবুও হাসপাতাল থেকে চলে আসতে হয়েছে, তবে সন্তানদের ক্ষুধার জ্বালায় ছটফট করতে দেখার চেয়ে নিজের মরে যাওয়া ভালো।' 

কোনও মতে মাথা গোঁজার ঠাঁই রয়েছে। তবে তাতে দশ জনের সংসারে অন্ন যোগানের সংস্থান নেই। কাজ কারবার হারানো ভিটেহারা আফগান মা বাধ্য হয়ে বিক্রি করে দিয়েছেন নিজের দুই মেয়েকে। এতেও সমস্যা না কমলে বিক্রি করেছেন নিজের কিডনিও। এরমধ্যে এই ক্ষত নিয়েই জোগাড় করতে হচ্ছে দুই ছেলের খাবার আর স্বামীর জন্য ওষুধ। এই শীতের মধ্যেই ক্ষরা, তার সাথে করোনার প্রকোপ মৃতপ্রায় এই জীবনগুলো। 

এ সম্পর্কিত আরও খবর