হামলার পর এবার ইউরোপের সবচেয়ে বড় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র জাপোরিঝিয়া দখলে নিয়েছে রুশ সেনারা। এ পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে লাগা আগুন নেভানো সম্ভব হলেও রাশিয়ান বাহিনীর দখল এড়াতে পারেনি ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী। খবর রয়টার্সের।
জাপোরিঝিয়া কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, রুশ বাহিনী কেন্দ্রটি দখলে নিলেও অপারেশনাল টিম এটি দেখভাল করছে। তারা দেশের বিদ্যুৎব্যবস্থার দিকেও নজর রাখছে।
এদিকে, জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে দখলে নেওয়ার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিশ্বনেতারা। তারা এটিকে গোটা পৃথিবীর জন্য উদ্বেগজনক বলে উল্লেখ করেছেন।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, ‘রাশিয়ার এমন বেপরোয়া হামলা ইউরোপের জন্য সরাসরি হুমকির।’
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন অবিলম্বে ইউক্রেনে সব ধরনের সামরিক অভিযান বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্ট্রিন ট্রুডো বলেছেন, ‘রাশিয়ার ভয়াবহ হামলা। এটি এখনি বন্ধ করতে হবে।’
এর আগে স্থানীয় সময় শুক্রবার (৪ মার্চ) ভোররাতে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে রুশ বাহিনীর হামলায় আগুন লাগে। জাপোরিঝিয়ার পার্শ্ববর্তী শহর এনারগোদারের মেয়র দিমিত্রো অরলভ এ তথ্য জানান।
মেয়র দিমিত্রো অরলভ এক টুইটবার্তায় লেখেন, ‘রুশ বাহিনী পারমাণবিক কেন্দ্রটি দখলে নেওয়ার চেষ্টা করছে। তবে ইউক্রেনের বাহিনীর শক্ত প্রতিরোধের মুখে তারা সুবিধা করতে পারছে না। সেখানে ইউক্রেনীয় বাহিনীর সঙ্গে রুশ সেনাদের তীব্র লড়াই চলছে। সংঘর্ষে ব্যাপক হতাহতের আশঙ্কা করছি।’
জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক কেন্দ্রের আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা কাজ করছে বলেও জানান মেয়র দিমিত্রো অরলভ।
সেসময় পারমাণবিক কেন্দ্রে হামলা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবা। তিনি এক টুইট বার্তায় লেখেন, ‘রুশ বাহিনী পারমাণবিক কেন্দ্রটির সব দিক থেকে আক্রমণ করছে। রাশিয়াকে অবশ্যই আগুন নিয়ে খেলা বন্ধ করতে হবে। নিরাপত্তা নিশ্চিতে সেখানে ফায়ার সার্ভিস সদস্যদের কাজ করতে দিতে হবে।’
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, জাপোরিঝিয়াতে ইউক্রেনের অন্তত চারটি সক্রিয় পারমাণবিক কেন্দ্র রয়েছে। সেখানে রুশ বাহিনীর হামলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শঙ্কা করছেন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা।
এদিকে, জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক কেন্দ্রে আগুন লাগার ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি কমিশন (আইএইএ)। পারমাণবিক কেন্দ্রটিতে রুশ সেনাদের হামলার খবর জানার পর ইউক্রেন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করছে আইএইএ।
সংস্থাটির একজন মূখপাত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখেন, ‘পারমাণবিক কেন্দ্র সুরক্ষিত রাখতে হবে। এটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে সত্যিকার অর্থে ভয়াবহ বিপদের মুখে পড়তে হবে। এ বিষয়ে আমরা ইউক্রেন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলছি।’
পরে রুশ বাহিনীর আক্রমণে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার দাবি করেছে ইউক্রেন কর্তৃপক্ষ। বিদ্যুৎকেন্দ্রটির পরিচালকের বরাতে জাপোরিঝয়া অঞ্চলের সেনা কমান্ডার জানান, জাপোরিঝিয়ার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। রুশ বাহিনীর হামলায় কেন্দ্রটির প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং ল্যাবরেটরি ভবন কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’