ভারতে ২০১৯ সালে দূষণে ২৩ লাখ মানুষের মৃত্যু

ভারত, আন্তর্জাতিক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-24 14:27:33

দূষণের কারণে ২০১৯ সালে ভারতে ২৩ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১৬ লাখই বায়ুদূষণে এবং পাঁচ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে পানিদূষণে।

লন্ডনভিত্তিক সাময়িকী ল্যানসেটের এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণায় বিশ্বে প্রতি ছয় মৃত্যুর একটির জন্য দূষণকে দায়ী করা হয়েছে।

গবেষণায় বলা হয়েছে, বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশের মধ্যে ভারত একটি। দেশটিতে প্রতি বছর বায়ু দূষণে ১০ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়।

ল্যানসেটের সাম্প্রতিক এই গবষেণাটি মূলত ২০১৫ সালে হওয়া গবেষণার হালনাগাদকরণ। সাম্প্রতিক গবেষণার তথ্য নেওয়া হয়েছে গ্লোবাল বারডেন অব ডিজিজ, ইনজুরিজ অ্যান্ড রিস্ক ফ্যাক্টর স্ট্যাডি–২০১৯ থেকে। এই গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, দূষণের কারণে প্রতিবছর বিশ্বে ৯০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়।

যদিও গৃহস্থালির সঙ্গে সম্পৃক্ত দূষণ ও পানিদূষণে মৃত্যু কমলেও কলকারখানার দূষণ, বায়ুদূষণ এবং বিষাক্ত রায়ায়নিক দূষণের কারণে মৃত্যু ঠিকই বেড়েছে। ২০১৯ সালে বৈশ্বিকভাবে গৃহস্থালি ও কলকারখানাসহ বিভিন্ন বাহ্যিক বায়ুদূষণে ৬৭ লাখ মানুষ মারা গেছে। পানিদূষণ ১৪ লাখ মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী, আর সিসা (লেড) দূষণ ৯ লাখ মানুষকে অকাল মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে।

সমীক্ষায় দেখা গেছে, দূষণজনিত মৃত্যুর ৯০ শতাংশের বেশি নিম্ন-আয়ের এবং মধ্যম আয়ের দেশগুলিতে ঘটেছে। এর মধ্যে ভারতে ২৩ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। যা বিশ্বে শীর্ষ। প্রতিবেশী চীনের অবস্থান দ্বিতীয় স্থানে। দেশটিতে মৃত্যুর সংখ্যা ২১ লাখ।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০০ সালে প্রচলিত দূষণের কারণে ভারতে ক্ষতির পরিমাণ ছিল জিডিপির ৩ দশমিক ২ শতাংশ। অবশ্য তখন থেকে প্রচলিত দূষণের কারণে দেশটিতে মৃত্যুর হার কমছে এবং অর্থনৈতিক ক্ষতিও যথেষ্ট পরিমাণে হ্রাস পেয়েছে। তারপরও দেশটিতে ক্ষতির হার জিডিপির ১ শতাংশের আশপাশে রয়েছে।

এদিকে ২০১৯ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে বায়ু, রাসায়নিক ও সিসার মতো দূষণ বেড়েছে, যা ভারতের জিডিপিতে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১ শতাংশের মতো। তবে ভারত বায়ুদূষণ কমাতে যে উদ্যোগ নিচ্ছে, সেটাও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। বিশেষ করে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উচ্চাভিলাষী ‘উজ্জওয়ালা যোজানা’ প্রকল্পের কথা। ২০১৬ সালে মোদি এই প্রকল্প গ্রহণ করেন গ্রামীণ গরিব মানুষের রান্নার গ্যাস ব্যবহারে আগ্রহী করতে। তবে এ ক্ষেত্রে এখনো ঘাটতি রয়ে গেছে।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারত দূষণের উৎস প্রশমিত করতে বিভিন্ন নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা গড়ে তুলেছে। কিন্তু দূষণ নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীভূত কোনও ব্যবস্থা না থাকায় কাঙ্ক্ষিত মাত্রা অর্জন করতে পারছে না।

এ গবেষণা আরও বলছে, ভারতের ৯৩ শতাংশ এলাকাতেই দূষণের পরিমাণ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইনের চেয়ে অনেক বেশি। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের একদল গবেষক জানান, বৈশ্বিক দূষণ র‌্যাঙ্কিংয়ে ভারতের শহরগুলো ওপরের দিকে।

মার্কিন গবেষণা আরও বলা হয়েছে, উত্তর ভারতের ৪৮ কোটির বেশি মানুষ বিশ্বের সবচেয়ে ‘ভয়াবহ পর্যায়ের বায়ুদূষণের’ মুখোমুখি।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের এনার্জি পলিসি ইনস্টিটিউটের তথ্যমতে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী দিল্লির বায়ুদূষণ যদি কামানো যায়, তাহলে ভারতের রাজধানীর বাসিন্দাদের আয়ু আরও ১০ বছর বাড়তে পারে

এ সম্পর্কিত আরও খবর