আফগানিস্তান: শাসক, পলাতক, কেউ ভালো নেই!

, আন্তর্জাতিক

কনক জ্যোতি, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 12:45:48

আফগানিস্তানে তালেবানদের পুনঃক্ষমতা দখলের এক বছর পূর্তি হলো কদিন আগে। আমেরিকা ও মিত্ররা ক্ষমতাসীন তালেবানদের হটিলে দিলেও প্রায়-ধূলিসাৎ তালেবানরা আবার ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে দেশছাড়া করেছে বিদেশি সৈন্যদের। এতো কিছুর পরেও আফগানিস্তানে শাসক, পলাতক, কেউ ভালো নেই। মোটেও ভালো নেই সাধারণ জনতা।

পালিয়ে যাওয়া আমেরিকান সৈন্য ও কর্মকর্তাগণ পরাজয়ের জন্য উপর্যুপরি জেরার সম্মুখীন নিজের দেশের বিভিন্ন সংস্থার কাছে। আমেরিকানদের পেছনে পেছনে পালিয়ে যাওয়া আফগান নেতারা রয়েছেন করুণ দশায়। আর খোদ আফগানিস্তান নানা সমস্যায় পর্যুদস্ত। সাধারণ মানুষের প্রাত্যহিক জীবনে চলছে সঙ্কটের ঘূর্ণাবর্ত।

আমেরিকার সেনা এবং আফগানিস্তানের স্বাধীনতাকামী তালিবান বিরোধী শক্তির সঙ্গে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ থামলেও সম্পূর্ণ ভাবে ভেঙে পড়েছে দেশেটির অর্থনীতি। মানবাধিকার ও নারীমুক্তির যে প্রতিশ্রুতি তালেবান নেতাদের মুখে এক বছর আগে লেগে থাকত, তা ইতিহাসের নথিতে মুখ গুঁজেছে । শাসকরা এখন ভেতর ও বাইরের চাপে দিশেহারা। পশ্চিমা মিডিয়ার প্রচারণায় নয়, বাস্তব তথ্য-প্রমাণে আফগানিস্তানের করুণ হাল সুস্পষ্ট।

জনতা ও শাসকদের মতো না হলেও ভালো নেই আফগানিস্তানের পলাতক নেতারাও। বিশেষ করে, আমেরিকার সমর্থক প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি এবং প্রাক্তন আফগান ভাইস প্রেসিডেন্ট আমরুল্লা সালেহ রয়েছেন প্রায়-উদ্বাস্তু পরিস্থিতিতে।

কিছু দিন আগে খবর পাওয়া যায়, গনি জমানায় আফগানিস্তানের অর্থমন্ত্রী খালিদ পায়েন্দা আমেরিকায় ট্যাক্সি চালিয়ে সংসার চালাচ্ছেন। আফগানিস্তানের তালেবান শাসনের বর্ষপূর্তির মধ্যেই জানা গেল প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট গনি আরব আমিরাতে তার নির্বাসিত জীবন কাটাচ্ছেন। তবে সেখানে তার কোনো নাগরিকত্ব নেই।

মধ্য আগস্টে একটি টিভি চ্যানেলের অনুষ্ঠানে তাকে দেখা গিয়েছে। সেখানে আফগানিস্তান থেকে আমেরিকান সেনা প্রত্যাহারের ‘সমালোচনা’ করতে শোনা যায় তাকে। গনিকে বলতে শোনা যায়, ‘‘আমি আমার দেশকে সুস্থ করতে চাই। আমি আশা করি, যে জায়গায় আমার শরীরের প্রতিটি কোষ রয়েছে, যাকে ছাড়া আমি বিজাতীয় বোধ করি, সেই দেশকে আবার রক্ষা করতে পারব।’’

অন্য দিকে, প্রাক্তন আফগান ভাইস প্রেসিডেন্ট সালেহ তালেবান বিরোধী জোট নর্দার্ন অ্যালায়্যান্সের ( ‘ন্যাশনাল রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট অব অফ আফগানিস্তান’ বা এনআরএফও) নেতা আহমদ মাসুদ ও আফগান সেনাবাহিনীর প্রাক্তন লেফটেন্যান্ট জেনারেল সামি সাদাতের সহযোগিতায় শক্তি সঞ্চয়ের চেষ্টা করেও বিশেষ কোনো সুবিধা করতে পারছেন না। আত্মগোপনে দেশের নানা প্রান্তে পলাতক জীবন কাটাচ্ছেন তিনি।

বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম বলছে, প্রাক্তন আফগান ভাইস প্রেসিডেন্ট এখন পঞ্জশির উপত্যকায় রয়েছেন। তবে এটি তার স্থায়ী ঠিকানা নয়। নিরাপত্তার কারণে তিনি প্রতিনিয়ত জায়গা বদল করেন এবং কোনো স্থায়ী ঠিকানা প্রকাশ করেন না। এরই মধ্যে ১৫ আগস্ট একটি টুইট করেন সালেহ। দাবি করেন, ডজন খানেক তালেবান যোদ্ধাকে বন্দি করা হয়েছে। কয়েক জন এনআরএফের আক্রমণে নিহত হয়েছেন। শীঘ্রই তারা এই যুদ্ধের ফুটেজ প্রকাশ করবেন বলে জানান সালে। তার বার্তাকে আফগানিস্তান ও তার বন্ধুরা মোটেও আমলে নেয় নি।

মোটের উপর যারা আফগানিস্তান শাসন করছেন আর যারা পরাজিত হয়ে পালিয়ে গেছেন, সবার ভাগ্যই 'বিপন্ন দেশ আফগানিস্তান'-এর মতোই বিপদাপন্ন। সংঘাতের ধারাবাহিকতায় ভালো নেই কোনো পক্ষই।

এ সম্পর্কিত আরও খবর