বন্ধ হয়ে গেলো ১২২ বছর ছাপায় থাকা মালয়েশিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় পত্রিকা ‘দ্যা মালয় মেইল’। মূলত ইন্টারনেট প্রযুক্তির সহজলভ্যতা ও অনলাইন পত্রিকার প্রতি মানুষের ঝুঁকে পড়ার কারণে পত্রিকাটির ছাপার সংস্করণ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিতে এক প্রকার বাধ্য হতে হলো।
‘দ্যা পেপার দ্যাট কেয়ার’ প্রতিপাদ্যে চলা ‘দ্যা মালয় মেইল’ বিশেষভাবে জনপ্রিয় ছিলো ফুটবল সংক্রান্ত খবরের জন্য। তবে পাশাপাশি তারা স্থানীয় খবরও প্রকাশ করতো।
কিন্তু ডিজিটাল যুগে প্রবেশের পর পত্রিকাটির ছাপা সংস্করণে নাটকীয়ভাবে বিজ্ঞাপন আসা বন্ধ হতে থাকে। ফলে ১৯৮০ সনে যে পত্রিকা প্রতিদিন প্রায় ১ লক্ষ কপি সার্কুলেশন হত সেটা নেমে আসে মাত্র ২০ হাজার কপিতে।
ছাপার সংস্করণের এই নাটকীয় অধঃপতন দেখে পত্রিকাটির এডিটর ইন চিফ ওং সাই ওয়াং বলেন, ‘আমি প্রচণ্ড দুঃখ পেয়েছি ছাপার সংস্করণের এই অধঃপতন দেখে, যা আমাদের বিশ্বাসের বাইরে ছিলো, তবে আমরা চেষ্টা করছি এই জনপ্রিয়তাকে ডিজিটাল ভার্সনে ধরে রাখতে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা ছাপার ভার্সনের ১৬৫ জন কর্মচারীকে এত দিন ধরে চেষ্টা করছিলাম ভর্তুকি দিয়েও অন্তত চালু রাখতে। কিন্তু প্রচলিত পদ্ধতির জনপ্রিয়তা হ্রাস পাওয়ায় এই খাতে আরো খরচ করা কোম্পানি সমীচীন মনে করছেনা।
দ্যা মালয় মেইল অনলাইন ভার্সনে প্রতিদিন ৫০ লক্ষ ইউনিক ভিজিটরের কথা উল্লেখ করে ওয়াং বলেন, ‘আমরা যে সময়মত অনলাইন ভার্সনে চলে গিয়েছিলাম তা ছিলো এক যুগোপোযুগী সিদ্ধান্ত তা না হলে ব্যবসা টিকিয়ে রাখাই দায় হয়ে যেত। যারা এই নতুন প্রযুক্তি সাথে পাল্লা দিয়ে চলতে পারবেনা, কোম্পানি তাদেরকে বাধ্য করবে অন্য কোন উপায় খুঁজে বের করতে।’
বর্তমানে দ্যা মালয় মেইলের ৮০ শতাংশ ভিজিটর আসে মোবাইল থেকে যার বেশির ভাগই ফেসবুক ও ইন্সটাগ্রাম নির্ভর।
দ্যা মালয় মেইল এর ইতিহাসঃ
১৮৯৬ এর ৪ ডিসেম্বর প্রকাশিত হওয়া দ্যা মালয় মেইল মালয়েশিয়ার প্রথম ট্যাবলয়েড পত্রিকা হিসাবে প্রকাশিত হয়ে। ন্যাশনাল লাইব্রেরী বোর্ড অব সিঙ্গাপুর এর রেকর্ড থেকে দেখা যায় জেএইচএম রবসন নামের একজন সরকারী কর্মকর্তা প্রথম ৪ পাতার এ পত্রিকা প্রকাশ করেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের অধীনে থাকা অবস্থায় মালয় সিনপোর জায়গা দখল করে সিয়োনান সিনবুন কাই এর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত দ্যা মেইল। যুদ্ধকালীন সময়ে প্রকাশ বন্ধ থাকলেও যুদ্ধ শেষে আবার পত্রিকাটি চালু হয়।
কিন্তু বিংশ শতাব্দীতে এসে জৌলুস হারাতে শুরু করে পত্রিকাটি। পূর্বে যে পত্রিকা ১০০ মিলিয়ন রিঙ্গিতের ব্যবসা করতো ধীরে ধীরে তার পরিমাণ কমতে শুরু করে।
ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে ২০০৮ সাল থেকে দ্যা মালয় মেইলের ব্যবস্থাপনা পর্ষদ নানা ধরনের ব্যবসায়িক মডেল নিয়ে চিন্তা ভাবনা শুরু করে। এক পর্যায়ে তারা কিছু ফ্রি কপি দেয়ার পাশাপাশি স্থানীয় ম্যাগাজিন ‘মালয়সিয়াকিনি’ এর সাথে কন্টেন্ট ভাগাভাগি করা শুরু করে। কিন্তু কিছুতেই যেন ছাপার পত্রিকার বাজার ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছিল না।
ডিজিটাল কন্টেন্ট এর সাথে পাল্লা দিতে সর্বশেষ ২০১৩ সালে ব্যবস্থাপনা পর্ষদ সিদ্ধান্ত নেয়। অতিদ্রুত পত্রিকাটির অনলাইন ভার্সন চালু করার।
অনলাইনের জনপ্রিয়তাকে লক্ষ্য রেখে দ্যা মালয় মেইলের অনলাইন ভার্সনের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক লেসলি লাউ বলেন, ‘সব পত্রিকারই এই ভাগ্য মেনে নিতে হবে। কিন্তু আফসোসের বিষয় অনেক পত্রিকা মালিকপক্ষ এই কথাটি বুঝতে পারছেনা। নতুন প্রযুক্তির আশীর্বাদ আমাদের মেনে নিতে হবে, আমাদের মনে রাখতে হবে অনলাইনই ভবিষ্যৎ।’
নতুন ব্যবসা মডেলর কথা উল্লেখ করে লেসলি বলেন, ‘এখন আমাদের শুধু কন্টেন্ট তৈরির দিকে মন দিলেই চলবেনা, টিকে থাকতে হলে আমাদের একটি ডিজিটাল মিডিয়া গ্রুপও তৈরি করতে হবে। যেখানে নানাবিধ জিনিস থাকবে।
তিনি বলেন, বর্তমান বাজার এখন খুব প্রতিযোগিতাপূর্ণ। তবে ‘দ্যা মালয় মেইল’ এখনো দেশের সেরা ৫ টি ওয়েবসাইটের মধ্যে একটি। আমাদের এটাও মনে রাখতে হবে, আমদের সব পাঠকই বুড়ো। তাই তরুণদের মধ্যে এই পত্রিকা সম্পর্কে আগ্রহ তৈরি করতে শুধু কন্টেন্ট নয় মাল্টিমিডিয়া নিয়ে কাজ শুরু করতে হবে’।
এডিটর ইন চিফ ওয়াং এর দেয়া সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী প্রতিটি পত্রিকা তৈরিতে ১ রিঙ্গিত আয়ের বিপরীতে খরচ পড়ছিল ২.৭৫ রিঙ্গিত। তাই অনলাইনের বিকল্প এখন আর কিছুই নেই বলে যুক্ত করেন তিনি।