দেশের রাজাকে ডিম ছুড়ে মারলেন এক ‘প্রজা’। অথচ রাজা শাস্তি দেওয়া তো দূর, বিষয়টি তিনি পাত্তাই দিলেন না।
বুধবার (৯ নভেম্বর) ব্রিটেনের নতুন রাজা তৃতীয় চার্লস বেড়াতে বেরিয়েছিলেন স্ত্রী ক্যামিলাকে নিয়ে। তবে লন্ডনে নয়। ইয়র্কশায়ারের ইয়র্ক শহরে। রাজা হওয়ার পর এই প্রথম স্ত্রীকে নিয়ে ব্রিটেন সফরে বেরিয়েছেন তিনি। আপাতত ইয়র্কেই রয়েছেন সস্ত্রীক চার্লস।
বুধবার সেই সফরের অংশ হিসেবেই ইয়র্কের জনগণের সঙ্গে দেখা করতে বেরিয়েছিলেন রাজদম্পতি। শহরের মাঝখানে একটি ছড়ানো উঠোনের মতো এলাকা। সামনে বিরাট তোরণ। পাশে সবুজ ঘাসে ঢাকা জমি। রাজার সঙ্গে ‘প্রজা’দের সাক্ষাতের জন্য এই চত্বরটিকেই বেছে নিয়েছিল স্থানীয় প্রশাসন। ঘটনাটি ঘটে সেখানেই।
তোরণ পেরিয়ে গাড়ি থেকে নেমে অপেক্ষারত জনগণের দিকে এগিয়ে আসছিলেন রাজা চার্লস এবং রানি (কুইন কনসর্ট) ক্যামিলা। দু’পাশে দাঁড়ানো জনতার সঙ্গে এগিয়ে গিয়ে হাত মেলাচ্ছিলেন, কথা বলছিলেন দম্পতি। সেই সময়েই একটি ডিম আছড়ে পড়ে রাজার থেকে হাতখানেক দূরে।
চার্লস অন্য দিকে তাকিয়েছিলেন, প্রথমটায় তাই বুঝতে পারেননি। কিন্তু এর পর একের পর এক ডিম উড়ে আসতে থাকে রাজাকে লক্ষ্য করে।
রাস্তার ধারে নিজের দোকানে দাঁড়িয়ে গোটা ঘটনাটি দেখছিলেন এক মহিলা। কে ডিম ছুড়ছে তা-ও দেখতে পাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু আক্রমণকারীকে থামানো তো দূর, ভিড় এড়িয়ে তার কাছে পৌঁছতেই পারছিলেন না।
পুলিশকে ওই প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, হামলাকারীকে মোট পাঁচটি ডিম ছুড়তে দেখেছিলেন তিনি। তার দাবি, রাজা-রানি কাছাকাছি আসতেই মুখে অদ্ভুত শব্দ করতে শুরু করেন ওই হামলাকারী। তার পরই একের পর এক ডিম ছুড়তে থাকেন। যদিও তাতে রাজার হাবভাবে কোনও পরিবর্তন হয়নি। লক্ষ্যভ্রষ্ট ডিমগুলি রাজার ধারে পাশেও এসে পৌঁছয়নি।
সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, ঘটনাটি যখন ঘটছে তখন ইয়র্কের নাগরিকদের সঙ্গ হাত মেলাচ্ছিলেন রাজা চার্লস। পর পর হামলার পরেও তার আচরণ বদলায়নি এক বিন্দু। নির্বিকার ভাবে একের পর এক দর্শনপ্রার্থীদের দিকে হাসিমুখে এগিয়েছেন তিনি।
পরে অবশ্য রাস্তায় এসে পড়া ফাটা ডিম মাথা নিচু করে দেখতে দেখা গিয়েছে তাকে। কিন্তু তার বেশি কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
পুলিশ এই ঘটনায় ওই হামলাকারী যুবককে গ্রেফতার করেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, গোটা ঘটনাটাই ঘটেছে কয়েক মিনিটের মধ্যে। নিরাপত্তারক্ষীরা দ্রুত ওই যুবককে চিহ্নিত করে তাকে ভিড় থেকে আলাদা করে এক পাশে নিয়ে আসে।
সেই সময় ওই যুবক চিৎকার করে বলছিলেন, এই দেশ দাসেদের রক্ত দিয়ে তৈরি হয়েছে। একই সঙ্গে ব্রিটেনের রাজার লজ্জা হওয়া উচিত,— বলেও চিৎকার করতে শোনা যায় হামলাকারীকে। সেই চিৎকারের পাল্টা ‘গড সেভ দ্য কিং’ বলে চিৎকার করতে শুরু করেন বাকিরা।
রাজদম্পতি অবশ্য তার পরও কিছুক্ষণ থাকেন ওই এলাকায়। পরে মেয়রের সঙ্গে সাক্ষাৎ সেরে রওনা হন পরের গন্তব্য দক্ষিণ ইয়র্কশায়ারের উদ্দেশে।