মিয়ানমারে নাটকীয় গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে যুদ্ধাপরাধ

এশিয়া, আন্তর্জাতিক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 00:35:18

জাতিসংঘের তদন্তকারী একটি দল বলেছে, মিয়ানমারে গণহত্যা এবং যৌন সহিংসতাসহ দেশটির সেনাবাহিনীর দ্বারা সংঘটিত যুদ্ধাপরাধগুলো নাটকীয় গতিতে বৃদ্ধি পেয়েছে।

আল-জাজিরা জানিয়েছে, মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে মিয়ানমার বিষয়ক স্বাধীন তদন্ত প্রক্রিয়া (আইআইএমএম) বলেছে, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী এবং তার সহযোগী মিলিশিয়ারা তিন ধরণের যুদ্ধাপরাধ করেছে বলে তাদের কাছে শক্তিশালী প্রমাণ রয়েছে।

২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অভ্যুত্থান ক্ষমতাচ্যুত নেতা অং সান সু চির সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটি মারাত্মক সহিংসতায় বিপর্যস্ত হয়েছে। জান্তা সরকার ভিন্নমতের বিরুদ্ধে রক্তাক্ত দমন-পীড়ন চালিয়েছে, যা দেশটির বিভিন্ন অংশে লড়াইয়ের সূত্রপাত করেছে।

জাতিসংঘের ওই প্রতিবেদনে, ২০২২ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের জুন মাস পর্যন্ত সময়কালের মধ্যে সংঘটিত অপরাধগুলোকে তুলে ধরা হয়েছে।

প্রতিবেদনে অপারেশন চলাকালীন আটক বেসামরিক লোক বা যোদ্ধাদের হত্যা, সেইসঙ্গে নির্যাতন এবং ভয়ঙ্কর যৌন সহিংসতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

আইআইএমএমের প্রধান নিকোলাস কৌমজিয়ান বলেছেন, ‘মিয়ানমারে প্রতিটি প্রাণহানি দুঃখজনক। তবে, বিমান থেকে বোমা হামলা এবং গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে সমগ্র সম্প্রদায়ের ধ্বংসযজ্ঞ বিশেষভাবে মর্মান্তিক৷’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের প্রমাণগুলো মিয়ানমারে যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের নাটকীয় বৃদ্ধির দিকে নির্দেশ করে। বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে ব্যাপক এবং পদ্ধতিগত আক্রমণসহ অন্য সকল অপরাধের মামলার ফাইল আমরা তৈরি করছি, যা অপরাধীদের দায়ী করার জন্য আদালত ব্যবহার করতে পারবে।’

সবচেয়ে গুরুতর আন্তর্জাতিক অপরাধের প্রমাণ সংগ্রহ এবং ফৌজদারি বিচারের জন্য ফাইল প্রস্তুত করার জন্য ২০১৮ সালে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল দ্বারা আইআইএমএম প্রতিষ্ঠিত হয়।

যদিও দলটিকে কখনোই মিয়ানমারে ঢোকার অনুমতি দেওয়া হয়নি, কিন্তু তদন্তকারী দল বলেছে, তারা ৭০০জনেরও বেশি সাক্ষীর বিবৃতি, নথি, স্থিরচিত্র, ভিডিও, ফরেনসিক প্রমাণ এবং উপগ্রহ চিত্রসহ ২৩ মিলিয়নেরও বেশি তথ্য সংগ্রহ করেছে।

দলটি ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সঙ্গে সহযোগিতা করছে।

আইআইএমএমের প্রতিবেদনে ব্যাখ্যা করা হয়েছে যে, আন্তর্জাতিক আইনে সামরিক কমান্ডারদের তাদের কমান্ডের অধীনে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধ প্রতিরোধ করার ও শাস্তি দেওয়ার দায় রয়েছে ।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বারবার এই ধরনের অপরাধ উপেক্ষা করার অর্থ হলো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এই অপরাধগুলো পরিচালনা করতে চেয়েছিলেন।

প্রতিবেদনে সেনাবাহিনী দ্বারা শিশু সেনাদের ব্যবহারের প্রমাণ তুলে ধরে বলা হয়েছে, অনেক বন্দী কেন্দ্রে নির্যাতন, যৌন সহিংসতা এবং নানা ধরণের গুরুতর দুর্ব্যবহার সম্পর্কিত আরও বেশি প্রমাণ তাদের কাছে রয়েছে।

প্রমাণগুলো ইঙ্গিত করে যে, এই ধরনের অপরাধগুলো নিষ্ঠুরতার সর্বোচ্চ স্তরে সংঘটিত হচ্ছে। অপরাধগুলোর মধ্যে রয়েছে বস্তুর সাথে ধর্ষণ, অঙ্গচ্ছেদ, গণ বা সিরিয়াল ধর্ষণ এবং যৌন দাসত্ব।

আইআইএমএম বলেছে, তারা মিয়ানমারের মুসলিম রোহিঙ্গা সংখ্যালঘুদের উপর রক্তক্ষয়ী দমন-পীড়নের সময় সংঘটিত ব্যাপক যৌন সহিংসতার তদন্ত করছে, যা ২০১৭ সালে প্রায় এক মিলিয়ন লোককে বাস্তুচ্যুত করেছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর