দুই শতাধিক সেনা ও কর্মকর্তাকে হত্যা করেছে তালেবান : জাতিসংঘ

এশিয়া, আন্তর্জাতিক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 12:24:09

২০২১ সালে আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের পর তালেবান কর্তৃক সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা সত্ত্বেও ওই বছরের আগস্ট থেকে বিচারবহির্ভূতভাবে দেশটির ২০০ জনেরও বেশি সাবেক সেনা ও কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।

আল-জাজিরা জানিয়েছে, তালেবান ক্ষমতা দখলের পর আফগানিস্তানে জাতিসংঘের সহায়তা মিশন (ইউএনএএমএ) কর্তৃক মঙ্গলবার প্রকাশিত তাদের প্রথম প্রতিবেদনে দেশটিতে নির্বিচারে গ্রেপ্তার, আটক, নির্যাতন, দুর্ব্যবহার এবং গুমসহ গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ৮০০টি ঘটনা নথিভুক্ত করেছে।

তালেবান শাসনের প্রথম চার মাসে সাবেক সরকারি কর্মকর্তা এবং আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর সাবেক সদস্যসহ প্রায় অর্ধেক বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ইউএনএএমএ রেকর্ড করেছে।

জাতিসংঘ জানিয়েছে, ২০২২ সালেও ওই ধরনের হত্যাকাণ্ড অব্যাহত ছিল। গত বছর ৭০টি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড রেকর্ড করা হয়েছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘ইউএনএএমএ-এর প্রতিবেদনে আফগানিস্তানের সাবেক সরকার ও নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে তালেবানরা দেশটি দখল করার পর থেকে আচরণের একটি মর্মান্তিক চিত্র উঠে এসেছে।’

তুর্ক আরও বলেন, ‘তার চেয়েও বড় বিষয় হলো তাদের আশ্বস্ত করা হয়েছিল যে, তাদের লক্ষ্যবস্তু করা হবে না। এটি জনগণের আস্থার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা।’

২০২১ সালের আগস্টে আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার কয়েকদিন পরে দেশটিজুড়ে সরকারি কর্মীদের জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে এবং নারীদেরকে তার সরকারে যোগদানের আহ্বান জানায় তালেবান।

কিন্তু, জাতিসংঘের প্রতিবেদনে সাবেক সরকারি কর্মকর্তা এবং আফগান ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যান্ড সিকিউরিটি ফোর্সের (এএনডিএসএফ) সাবেক সদস্যদের নির্বিচারে গ্রেপ্তার, আটক, নির্যাতনের ৪২৪টিরও বেশি ও দুর্ব্যবহারের ১৪৪টিরও বেশি ঘটনা নথিভুক্ত করা হয়েছে।

জাতিসংঘের এজেন্সির কাছে সাক্ষাৎকার দেওয়া ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, তাদের পাইপ এবং তার দিয়ে মারধরের পাশাপাশি মৌখিক হুমকি ও গালিগালাজ করা হয়েছে।

ইউএনএএমএ সেই সব পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছে, যাদের আত্মীয়রা গ্রেপ্তার বা নিখোঁজ হয়েছে। তাদের লাশ কয়েক দিন বা এমনকি কয়েক মাস পরে পাওয়া গেছে। কিছু ক্ষেত্রে আবার নিখোঁজ ব্যক্তিদের আর খুঁজেও পাওয়া যায়নি।

জাতিসংঘের প্রতিবেদনে তালেবান ক্ষমতা দখলের পর থেকে ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সময়কালের ঘটনা নথিভুক্ত করে বলা হয়েছে, আফগানিস্তানে এমন দায়মুক্তি বিরাজ করছে যেখানে কর্তৃপক্ষের দ্বারা তদন্ত এবং অপরাধীদের জবাবদিহি করার প্রচেষ্টা অত্যন্ত সীমিত।

এমনকি বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে তদন্তের অগ্রগতিতে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতার অভাব পরিলক্ষিত হয়েছে।

কাবুল, কান্দাহার এবং বলখ প্রদেশে সর্বাধিক সংখ্যকসহ ৩৪টি প্রদেশজুড়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে।

আফগানিস্তানের জন্য মহাসচিবের বিশেষ প্রতিনিধি এবং ইউএনএএমএর প্রধান রোজা ওতুনবায়েভা তালেবানকে সাধারণ ক্ষমার প্রতি সত্যিকারের প্রতিশ্রুতি প্রদর্শনের জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।

ওতুনবায়েভা বলেন, ‘আফগানিস্তানে ন্যায়বিচার, পুনর্মিলন এবং স্থায়ী শান্তির বাস্তব সম্ভাবনা নিশ্চিত করার জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর