সামরিক অভিযানে আজারবাইজানের বিজয়ের পর ৬৫ হাজারেরও বেশি জাতিগত আর্মেনিয়ান নাগর্নো-কারাবাখ ছেড়ে পালিয়েছে।
আর্মেনিয়া সরকারের মুখপাত্র নাজেলি বাগদাসারিয়ান এক বিবৃতিতে বলেছেন, আজারবাইজান গত সপ্তাহে আকস্মিক আক্রমণে ছিটমহলটি দখল করার পরে বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সকাল নাগাদ ৬৫ হাজার ৩৬ জন বাস্তুচ্যুত মানুষ নাগর্নো-কারাবাখ থেকে জোরপূর্বক আর্মেনিয়ায় প্রবেশ করেছে।
তিনি আরও বলেন, ‘রাষ্ট্র তাদের সকলকে উপযুক্ত আবাসন প্রদান করছে যাদের বসবাসের পূর্বনির্ধারিত স্থান ছিলো না।’
আজারবাইজান বাহিনী আক্রমণের আগে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার জাতিগত আর্মেনিয়ান এই অঞ্চলে বসবাস করত বলে ধারণা করা হয়।
আর্মেনিয়ান বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনী অস্ত্র সমর্পণ করতে সম্মত হওয়ার চার দিন পর গত রবিবার আজারবাইজান নাগোর্নো-কারাবাখের সঙ্গে আর্মেনিয়ার সংযোগকারী একমাত্র রাস্তাটি ফের খুলে দিয়েছে।
আজারবাইজানের অংশ হিসাবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত, নাগর্নো-কারাবাখ, যা তিন দশক ধরে বাকু থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল, এর খ্রিস্টান বাসিন্দারা মূলত আর্মেনিয়াপন্থি এবং মুসলিমরা আজারবাইজানপন্থি বলে জানা গেছে।
গত বুধবার পর্যন্ত নাগর্নো-কারাবাখের ২৮ হাজারেরও বেশি বাসিন্দার সীমান্ত অতিক্রম করে আর্মেনিয়ায় আশ্রয় নেওয়ার কথা জানিয়েছিল এনডিটিভি।
৭০ বছর বয়সি অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ভেরা পেট্রোসিয়ান মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) রয়টার্সকে বলেন, ‘আমি সবকিছু পিছনে ফেলে এসেছি। আমি জানি না আমার ভাগ্যে কী আছে। আমার কিছুই নেই। আমি কিছুই চাই না।’ আজারবাইজানের সঙ্গে সীমান্তের আর্মেনিয়া অংশের একটি হোটেলই এখন তার বাড়ি।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি যে, গুলি, ক্ষুধা, অশান্তি এবং যন্ত্রণা প্রত্যক্ষ করেছি তা আর দেখতে চাই না।’
এদিকে আজারবাইজান বলছে, তাদের সামরিক অভিযানে বেসামরিক নাগরিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি।
আর্মেনিয়া এবং আজারবাইজান ৩০ বছরে ছিটমহল নিয়ে দুটি যুদ্ধ করেছে। ২০২০ সালে ছয় সপ্তাহের সংঘর্ষের পর নাগর্নো-কারাবাখ এবং এর আশেপাশের কিছু অংশ ফিরে পায় আজারবাইজান।
আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ বলেছেন, ‘আর্মেনিয়ানদের অধিকারকে সম্মান করা হবে এবং ওই অঞ্চলটিকে একটি স্বর্গে পরিণত করা হবে।’
কিন্তু কারাবাখের আর্মেনিয়ানরা রয়টার্সকে বলেছে, তারা আজারবাইজানের অংশ হিসাবে বাস করতে চায় না, বরং তারা আজারবাইজানের হাতে জাতিগত নির্মূলের ভয় পায়।
কারাবাখ নেতৃত্বের উপদেষ্টা ডেভিড বাবায়ান বলেন, ‘আমাদের জনগণ আজারবাইজানের অংশ হিসেবে থাকতে চায় না। ৯৯ শতাংশ আর্মেনিয়ান আমাদের ঐতিহাসিক ভূমি ছেড়ে যেতে ইচ্ছুক।’
আজারবাইজানের প্রেসিডেন্টর পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা হিকমেত হাজিয়েভ আল-জাজিরাকে বলেছেন, ওই অঞ্চলের বেসামরিক নাগরিকদের রাজনৈতিক একীকরণ, আর্থসামাজিক সমস্যাসহ তাদের ভবিষ্যত সম্পর্কে সরাসরি সংলাপের জন্য বলা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনজীবী শিলা পেলান বলেছেন, তিনি বিশ্বাস করেন না যে, আজারবাইজানের শাসনের অধীনে জাতিগত আর্মেনিয়ানদের সঙ্গে ন্যায্য আচরণ করা হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘আর্মেনিয়ানদের প্রতি ঘৃণার একটি দীর্ঘস্থায়ী নীতি রয়েছে। এটা শুধু রাতারাতি শেষ হবে না। কারাবাখের আর্মেনিয়ানদের জন্য কোনো নিরাপত্তা বা অধিকার সুরক্ষিত থাকবে বলে বিশ্বাস করার কোনো যুক্তিসঙ্গত ভিত্তি নেই। তারা এখন খুব বিপদে আছে।’
নাগোর্নো-কারাবাখে মানবাধিকার ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য অবিলম্বে জাতিসংঘের একটি দল মোতায়েনের আহ্বান জানিয়েছে আর্মেনিয়া।