চীন গত এক বছরে তার পারমাণবিক মজুদ উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়েছে এবং এখন প্রায় ৫০০ সক্রিয় ওয়ারহেড ধরে রেখেছে বলে দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
পেন্টাগন কর্তৃক প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বেইজিং ২০৩০ সালের মধ্যে তার অস্ত্রাগার দ্বিগুণ করে এক হাজারেরও বেশি ওয়ারহেড তৈরির আশা করছে।
তবে ওয়াশিংটন বলেছে, চীন এক্ষেত্রে ‘নো-ফার্স্ট-স্ট্রাইক’ পারমাণবিকনীতিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীন মজুদ বাড়লেও রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের মজুদের বিপরীতে তার মজুদ এখনও অনেক কম।
ইন্টারন্যাশনাল স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট অনুসারে, রাশিয়ার কাছে প্রায় ৫,৮৮৯টি এবং যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ৫,২৪৪টি ওয়ারহেডের পারমাণবিক অস্ত্রাগার রয়েছে।
২০২১ সালে মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ অনুমান করেছিল, চীনের কাছে প্রায় ৪০০টি ওয়ারহেড রয়েছে।
পেন্টাগনের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বৃহস্পতিবার (২০ অক্টোবর) সাংবাদিকদের বলেন, ‘যেখান থেকে চীন শুরু করতে চেয়েছিল, আমরা সেখান থেকে খুব বড় প্রস্থানের পরামর্শ দেওয়ার চেষ্টা করছি না। তবে আমরা পরামর্শ দিচ্ছি যে, তারা আমাদের পূর্বের অনুমানগুলোকে অতিক্রম করার পথে রয়েছে, যেটি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য উদ্বেগের বিষয়।’
এদিকে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ঘোষণা করেছেন যে, চীন ২০৪৯ সালের মধ্যে একটি বিশ্বমানের সামরিক বাহিনী তৈরি করবে। ২০১২ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে তিনি দেশের সশস্ত্র বাহিনীকে আধুনিকীকরণের চেষ্টা করেছেন শি।
পেন্টাগনের বৃহস্পতিবারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনের পারমাণবিক অস্ত্রাগার বাড়ানোর পরিসর এবং জটিলতা উভয় ক্ষেত্রেই পূর্ববর্তী প্রচেষ্টাকে পেছনে ফেলতে পরিকল্পনা করা হয়েছে।
মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, বেইজিং সম্ভবত ২০২২ সালে তিনটি নতুন ক্লাস্টার মিসাইল সাইট নির্মাণ সম্পন্ন করেছে। এই ক্ষেত্রগুলোর মধ্যে অন্তত ৩০০টি নতুন ইন্টারকন্টিনেন্টাল ব্যালিস্টিক মিসাইল (আইসিবিএম) সাইলো রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মিও আইসিবিএম তৈরি করতে চাইছে, যা এটিকে যুক্তরাষ্ট্র, হাওয়াই এবং আলাস্কায় লক্ষ্যবস্তুতে প্রচলিত হামলার হুমকি দিতে পারে।
বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, পারমাণবিক মজুদ বৃদ্ধি সত্ত্বেও চীন শুধুমাত্র শত্রুর হামলার বিপরীতে ‘প্রতিরোধ নীতি’তে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং যখন প্রতিরোধ ব্যর্থ হয় তখন পাল্টা হামলা চালানোর নীতিতে বিশ্বাসী।
এক প্রেস ব্রিফিংয়ে শুক্রবার (২০ অক্টোবর) চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং বলেন, ‘মার্কিন প্রতিবেদনটি কুসংস্কারে পূর্ণ এবং চীনের হুমকির তত্ত্বকে ছড়িয়ে দিয়েছে।’
মাও আরও বলেন, ‘চীন সর্বদা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় সর্বনিম্ন স্তরে আমাদের পারমাণবিক বাহিনী বজায় রেখেছে এবং আমাদের কোনও দেশের সঙ্গে পারমাণবিক অস্ত্রের প্রতিযোগিতায় জড়ানোর কোনও ইচ্ছা নেই।’
হেনরি বয়েড ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের হেনরি বয়েড বিবিসিকে বলেছেন, চীনের পরমানু কর্মসূচী বৃদ্ধির প্রতিবেদনে উল্লেখিত হার খুব একটা ব্যতিক্রমী বলে মনে হচ্ছে না।
তিনি আরও বলেছেন, চীন তার এক হাজার ওয়ারহেডের নির্ধারিত লক্ষ্যের দিকে আনুমানিক গতির চাইতে তুলনায় কিছুটা দ্রুত এগিয়ে চলেছে।
পেন্টাগনের বৃহস্পতিবারের প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, বেইজিং সাম্প্রতিক মাসগুলোতে তাইওয়ানের বিরুদ্ধে কূটনৈতিক, রাজনৈতিক এবং সামরিক চাপ বাড়িয়েছে।