মিয়ানমারের বিদ্রোহী জোট ব্রাদারহুড অ্যালায়্যান্সের হামলায় একের পর এক এলাকা হাতছাড়া হচ্ছে মায়ানমার সেনাবাহিনীর। প্রাণ বাঁচাতে গ্রামবাসীদের সঙ্গে তাই ভারতে ঢুকে পড়ছে তারাও।
আল-জাজিরা জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সীমান্ত পেরিয়ে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্য মিজোরামে ঢুকে পড়েছেন মিয়ানমারের অন্তত ৫ হাজার নাগরিক। মিজোরাম পুলিশ জানিয়েছে, ওই দলে ৩৯ জন সেনা সদস্যও রয়েছেন।
মিজোরাম পুলিশের আইজি লালবিয়াকথাঙ্গা খিয়াংটে মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) বলেন, ‘মিজোরামের চাম্পেই জেলা লাগোয়া সীমান্তের অদূরে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর রিখাওদর এবং খাওমাওয়ি ছাউনি দুটি গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় দখল করে নেয় বিদ্রোহী বাহিনী। প্রাণভয়ে দেশটির ৩৯ জন সেনা জোকাওথান সীমান্ত চেকপোস্ট পেরিয়ে ভারতীয় ভূখণ্ডে ঢুকে আত্মসমর্পণ করেছেন। তারা এদেশে আশ্রয় চেয়েছেন।’
লালবিয়াকথাঙ্গা আরও জানান, ‘মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী একাধিক গ্রামেরও দখল নিয়েছে বিদ্রোহী বাহিনী। তাই মিয়ানমারের প্রায় ৫ হাজার গ্রামবাসী আতঙ্কে ভারতে চলে এসেছেন।’
মিজোরাম পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গুলিতে জখম কয়েক জন গ্রামবাসীকে চাম্পেই জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। তাদের মধ্যে একজনের মৃত্যুও হয়েছে।
গত ৭ নভেম্বর বিধানসভার ভোটগ্রহণ পর্ব শেষ হলেও এখনও ভোট গণনা হয়নি মিজোরামে। এই পরিস্থিতিতে বিপুল সংখ্যক শরণার্থীর আগমনে সেখানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তায় রয়েছে প্রশাসন।
মিজোরাম ছাড়াও উত্তর-পূর্বের অরুণাচল প্রদেশ এবং হিংসাদীর্ণ মণিপুরের সঙ্গেও মিয়ানমারের স্থলসীমান্ত রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সীমান্ত এলাকার নজরদারিতে নিযুক্ত বিএসএফ এবং আসাম রাইফেলসকে সতর্ক করা হয়েছে বলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
প্রসঙ্গত, অক্টোবরে মধ্যভাগে মিয়ানমারের তিনটি বড় বিদ্রোহী গোষ্ঠী- তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ), আরাকান আর্মি (এএ) এবং মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স আর্মি’র (এমএনডিএএ) নতুন জোট সে দেশের সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে যৌথ অভিযান শুরু করেছে।
মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী শক্তির স্বঘোষিত সরকার ‘ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট’ বিদ্রোহীদের পাশে দাঁড়িয়েছে। ইতিমধ্যেই উত্তর এবং উত্তর-পশ্চিম মিয়ানমারের শান এবং সাগিয়াং প্রদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল বিদ্রোহীদের দখলে গেছে।
গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতিতে মিয়ানমারের লক্ষাধিক মানুষ ইতিমধ্যেই ঘরছাড়া হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মিয়ানমারের গণতন্ত্রকামী নেত্রী অং সান সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসির নেতৃত্বাধীন সরকারকে উৎখাত করে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেছিল মিয়ানমারের সেনাবাহিনী।