২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যার অভিযোগে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) গাম্বিয়ার করা মামলায় বাদী হিসেবে যোগ দিচ্ছে বিশ্বের আরও ৭টি দেশ।
বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) কানাডা, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস ও যুক্তরাজ্য যৌথভাবে এবং মালদ্বীপ এককভাবে মামলায় পক্ষভুক্ত হওয়ার জন্য আদালতে আবেদন করেছে বলে আইসিজের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
মামলাটি এখন আদালতের শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। তবে এখনও শুনানির তারিখ দেয়া হয়নি।
আইসিজের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কানাডা, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, জার্মানি, নেদারল্যান্ড ও যুক্তরাজ্য তাদের যৌথ ঘোষণায় বলেছে, ১৯৪৮ সালের গণহত্যার অপরাধ প্রতিরোধ ও সাজাবিষয়ক সনদের স্বাক্ষরকারী হিসেবে সনদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের অভিন্ন স্বার্থে তারা এই মামলায় অর্ন্তভুক্ত হওয়ার অধিকার চায়।
রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও বর্বর আক্রমণ অব্যাহত থাকায় গভীর উদ্বেগ থেকে দেশগুলো এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে মনে করছে মালদ্বীপ। দেশটি বলছে, আর্ন্তজাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে গণহত্যা প্রতিরোধ ও এই অপরাধে শাস্তিবিধানের অভিপ্রায়ে তারা মামলায় পক্ষভুক্ত হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
উল্লেখ্য, আইসিজের বিধি অনুযায়ী, গণহত্যা সনদের আওতায় মামলা হলে মামলায় পক্ষ না হলেও সনদে স্বাক্ষরকারী অন্য যেকোনো দেশ শুনানিতে পক্ষভুক্ত হওয়ার আবেদন করতে পারে। এই মামলায় আদালত যে রায় দেবেন, তা পক্ষভুক্ত হওয়া দেশগুলোর ক্ষেত্রেও সমভাবে প্রযোজ্য হবে।
২০১৭ সালে নজিরবিহীন হত্যাযজ্ঞ থেকে বাঁচতে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। যার ফলে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গার সংখ্যা দাঁড়ায় ১১ লাখে। বিশাল এই জনগোষ্ঠী এখন কক্সবাজারের কুতুপালংয়ে শরণার্থী শিবিরে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে।
২০১৮ সালে জাতিসংঘের এক তদন্ত প্রতিবেদনে রোহিঙ্গা মুসলিম ও অন্যান্য নৃ-তাত্ত্বিক সংখ্যালঘুদের ওপর গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য দেশটির সেনাবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের অভিযুক্ত করা হয় ওই প্রতিবেদনে।
জাতিসংঘের ওই তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গণহত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দেশটির শীর্ষ ছয়জন সামরিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত এবং বিচার হওয়া দরকার।
এরপর রোহিঙ্গাদের ওপর এই নৃশংসতাকে গণহত্যা আখ্যা দিয়ে ২০১৯ সালের ১১ই নভেম্বর আইসিজেতে মামলা দায়ের করে আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া। অভিযোগে গাম্বিয়া বলেছে, রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংস সামরিক অভিযান চালানোর মাধ্যমে ১৯৪৮ সালে গৃহীত জাতিসংঘের মানবাধিকার সনদ লঙ্ঘন করেছে মিয়ানমার।
গণহত্যার তদন্ত শুরু না হওয়া পর্যন্ত মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে জরুরি ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানায় দেশটি। শুনানির পর ২০২০ সালের ২৩শে জানুয়ারি একটি অন্তর্বর্তী আদেশে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দিতে আদেশ জারি করে আইসিজে। সে সময় আদালত গণহত্যার অভিযোগের সব স্বাক্ষ্যপ্রমাণ সংরক্ষণেরও নির্দেশ দেন।
এরপর গণহত্যার অভিযোগ সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ শুনানির জন্য উভয় পক্ষকে মামলার আরজি ও তার জবাব লিখিতভাবে পেশ করতে সময় নির্ধারণ করে দেন আদালত। গাম্বিয়া ২০২০ সালের ২৩ অক্টোবরের মধ্যে নির্ধারিত সময়ে আরজি পেশ করে।
কিন্তু মিয়ানমার ২০২১ সালের ২০ জানুয়ারি আদালতের এখতিয়ার চ্যালেঞ্জ করে মামলা করে। আদালত ওই আবেদনের ওপরও শুনানি গ্রহণ করেন। ২০২২ সালের ২২ জুলাই আদালত রায় দেন, মামলাটি আইসিজের গ্রহণের এখতিয়ার আছে।
আদালত গাম্বিয়ার আরজির জবাব দাখিলের জন্য মিয়ানমারকে সময় বেঁধে দেন এবং মিয়ানমারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তিন দফা সময় দেন। সর্বশেষ গত ২৪ আগস্টের সময়সীমার মধ্যে মিয়ানমার তার জবাব দাখিল করেছে।
এরপর আদালত গাম্বিয়ার আরজির জবাব দাখিলের জন্য মিয়ানমারকে সময় বেঁধে দেন এবং মিয়ানমারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তিন দফা সময় দেন। সর্বশেষ গত ২৪ আগস্টের সময়সীমার মধ্যে মিয়ানমার তার জবাব দাখিল করেছে।
এমন পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা গণহত্যায় মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গাম্বিয়ার পাশে দাঁড়ালো বিশ্বের প্রভাবশালী কয়েকটি দেশ। এতে বিচার প্রক্রিয়া আরও ত্বরান্বিত হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ আইসিজের বিশেষ এক ক্ষমতার বিপক্ষে অবস্থান করায় নিজে বাদী হয়ে আন্তর্জাতিক গণহত্যার বিরুদ্ধে মামলা করার এখতেয়ার হারিয়েছে। ফলে বাংলাদেশের হয়ে ২০১৮ সালে গাম্বিয়া বাদী হয়ে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে এই মামলা করে।