চারপাশে গণকবর আর লাশের গন্ধ। রাস্তায় ইসরায়েলি ট্যাঙ্ক আর গুলির আওয়াজ। সংসারের শেষ চিহ্নটুকু বা ছোট্ট দুধের শিশুকে বুকে ঝাঁপটে ধরে দৌঁড়াচ্ছেন কোনো অসহায় মা। আল-শিফা হাসপাতাল ছাড়তে হবে। সংসার কিংবা প্রিয়জন-পেছনে কাকে ছেড়ে যাচ্ছেন তা ফিরে তাকানোর সময় নেই। তাকে বাঁচতে হবে।
গাজার সবচেয়ে বড় আল-শিফা হাসপাতাল, জাবালিয়া শরণার্থী শিবির, খান ইউনিস অঞ্চল- কোনোখানেই আর ঠাঁই হচ্ছে না ফিলিস্তিনিদের। কোনো এক অজ্ঞাত স্থানে যাওয়ার জন্য তাদের হাতে সময় খুবই কম। সাথে যেতে পারবেনা পুরুষ সঙ্গীও। স্বজনদের মৃত্যু দেখে দেখে নির্বাক হয়ে যাওয়া মানুষগুলো তবুও ছুটছে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে। হাসপাতালের কোনো করিডোর থেকে শোনা যায় রোগীর কাতরানোর শব্দ।
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, শনিবার (১৮ নভেম্বর) আইডিএফ হাসপাতাল ফাঁকা করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। লাউড স্পিকারে ঘোষণা করে যেন কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সবাই হাসপাতাল ছেড়ে চলে যায়। খুব বেশি মানুষ আর নেই হাসপাতালটিতে। মুহূর্তেই যেন জনমানবশূন্য হয়ে গেল হাসপাতালটি।
এই খবর প্রকাশ্যে আসার ৯০ মিনিটের মধ্যে বিবৃতি দিয়ে আইডিএফ জানিয়েছে, যেসব রোগী হাসপাতাল ছেড়ে যেতে পারবেন না, তাদের দেখাশোনা করার জন্য চিকিৎসক, স্বাস্থ্য-কর্মীরা চাইলে থেকে যেতে পারেন।
আইডিএফ আরও জানিয়েছে, একটি নিরাপদ রাস্তা দিয়ে উদ্ধার করা হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। কিন্তু তাদের কোথায় পাঠানো হচ্ছে, তা জানানো হয়নি। শোনা যাচ্ছে, আইডিএফের নির্দেশ, পায়ে হেঁটে সমুদ্রের দিকে যেতে হবে সকলকে। বেশির ভাগ চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীকেই হাসপাতাল ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে।
এত দিন উত্তর ও মধ্য গাজার বাসিন্দাদের দক্ষিণের দিকে চলে যেতে বলা হচ্ছিল। ফলে গত কয়েক সপ্তাহে দক্ষিণ গাজার খান ইউনিস অঞ্চলের জনসংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি হয়ে যায়। লক্ষ লক্ষ মানুষ খান ইউনিসে আশ্রয় নেয়। কিন্তু এখন সেখানেও এলাকা ফাঁকা করে দিতে বলা হচ্ছে। শোনা গিয়েছে, আজ বিকেল চারটের মধ্যে সকলকে বাড়ি ছাড়তে বলা হয়েছে। আজ ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানের হামলায় খান ইউনিসে ২৬ জন বেসামরিক প্রাণ হারিয়েছেন।
ও দিকে জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে জোড়া হামলা চালিয়েছে ইজরায়েলি সেনাবাহিনী। সেখানকার আল-ফাকৌরা স্কুলে বহু মানুষ আশ্রয় নিয়েছিলেন। ইসরায়েলের এই হামলায় কমপক্ষে ৫০ জন প্রাণ হারিয়েছেন।
আল-শিফা হাসপাতালের পরিচালক মুহম্মদ আবু সালমিয়া দু’দিন আগেই বলেছিলেন, ‘রোগীদের ফেলে কোথাও যাব না। মরতে হলে সবাই একসঙ্গে মরব।’ তবে বেশির ভাগ চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীকেই হাসপাতাল ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে।
ইজরায়েলি বাহিনী সালমিয়াকে ডেকে নির্দেশ দিয়েছে, হাসপাতাল ফাঁকা করে দিতে হবে। রোগী, জখম ব্যক্তি, হাসপাতালের কর্মী ও যারা নিরাশ্রয় হয়ে হাসপাতালে ঠাঁই নিয়েছিলেন, সকলকে বার করে দিতে হবে। এবং এই প্রক্রিয়ার তদারকির দায়িত্ব নিতে হবে সালমিয়াকেই। এতোদিন ছুটে ছুটে রোগী দেখেছেন তিনি, এবার তার কাঁধেই উদ্ধারকাজের ভার।
মৃত্যুপুরী গাজা উপত্যকায় টানা দেড় মাসের হামলায় মৃত্যের সংখ্যা ১২ হাজার ছাড়িয়েছে। মসজিদ, গীর্জা কিংবা হাসপাতাল কোনো জায়গা-ই আজ নিরাপদ নেই। তাই নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে গাজা ছাড়ছেন অসহায় ফিলিস্তিনিরা।