​ইরাকে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে অনিয়মের অভিযোগ

মধ্যপ্রাচ্য, আন্তর্জাতিক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম | 2024-01-27 15:39:53

দক্ষিণ ইরাকের নাসিরিয়া কেন্দ্রীয় কারাগারে ১৩ জন ইরাকি বন্দিকে ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করার পরদিনই মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। ঘটনাটিকে ইরাকি গণমাধ্যমগুলো ‘গোপন মৃত্যুদণ্ড’ হিসেবে প্রকাশ করেছে। 

নেতিবাচক প্রচার এবং আন্তর্জাতিক নিন্দা এড়াতে কোনও স্বচ্ছতা বা আগাম বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছিল। মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আগে ১৩ বন্দীকে তাদের পরিবার বা আইনজীবীদের ফোন করার অনুমতি দেওয়া হয়নি বলে জানায় অপর এক বন্দী।  

শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) সংবাদমাধ্যম টাইমের প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) জানায়, ২০২০ সালের নভেম্বরের পর থেকে এ ঘটনার আগ পর্যন্ত ইরাকে সন্ত্রাসের অভিযোগে ২১ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। যদি ইরাকি রাষ্ট্রপতি আবদুল লতিফ রশিদ মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন করেন, তবে শুধু এই সপ্তাহেই অন্তত ১৫০ জন বন্দিকে পূর্ব সতর্কতা ছাড়াই মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে দেশটিতে। এটি ইরাকের একমাত্র কারাগার যেখানে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। এসব মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ঘটনায় প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে প্রশাসন।

মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে বিশ্ব জোটের পরিচালক অরেলি প্লাকেইস বলেন, ইরাকে গণ মৃত্যুদণ্ড নিষ্ঠুর শাস্তির স্বেচ্ছাচারিতার একটি ভয়ংকর উদাহরণ।

এইচআরডব্লিউ-এর মতে, ২০১৭ সালে তিন মাসেরও কম সময়ের ব্যবধানে দুই দফায় যথাক্রমে ৪১ এবং ৩৮ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছিল। বর্তমানে, ইরাকে ৮ হাজার বন্দি মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত আছে বলে জানা গেছে। এদের বেশিরভাগই সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে অভিযুক্ত। অতীতে ইরাকি সরকার জীবনের অধিকার বা সমাজের শান্তি ও নিরাপত্তাকে প্রভাবিত করে এমন গুরুতর অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ডের ব্যবহারে জোর দিয়েছিল 

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মতে, বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বেশি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা দেশগুলোর মধ্যে ইরাক বর্তমানে পঞ্চম স্থানে রয়েছে।

এইচআরডব্লিউ গণ মৃত্যুদণ্ডের সর্বশেষ পুনর্নবীকরণকে ‘একটি ভয়ংকর পদক্ষেপ’ বলে অভিহিত করেছে। ইরাকি কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে মৃত্যুদণ্ড রহিত করার প্রয়াসে সমস্ত মৃত্যুদণ্ডের উপর স্থগিতাদেশ ঘোষণা করার আহ্বান জানিয়েছে। 

মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে বিশ্ব জোট প্রতিষ্ঠাতা ম্যাথিউ গোল্ডবার্গ বলেন, ‘মানব মর্যাদার মৌলিক নীতির প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য এমন আকস্মিক মৃত্যুদণ্ডের স্থগিতাদেশ ঘোষণা করা উচিত। আসামিদের ন্যায়বিচার চাওয়ার অধিকারকে অস্বীকার করাসহ ইরাকের বিচার ব্যবস্থায় বিদ্যমান ত্রুটি ও জটিলতাগুলো রহিত করা উচিত।

এইচআরডব্লিউ বলেছে, দেশটির নিয়ম অনুযায়ী আটক ব্যক্তিদের আইনজীবী রাখার, তাদের পরিবারের সাথে কথা বলার এবং গ্রেফতারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে একজন বিচারকের সাথে দেখা করার অধিকার রয়েছে। ইরাকি কর্তৃপক্ষ নিয়মতান্ত্রিকভাবে ইরাকি আইন-প্রক্রিয়া লঙ্ঘন করেছে।

গোল্ডবার্গ বলেন, মৃত্যুদণ্ড একটি নিঃসন্দেহে নিষ্ঠুর শাস্তি যা ইরাকে বর্তমানে অস্বচ্ছ এবং অন্যায্য প্রক্রিয়ায় ঘটছে। এর ফলে বন্দীর ন্যায়বিচারের অধিকার ব্যাহত হচ্ছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর