উত্তর কোরিয়া তাদের পূর্ব উপকূলের দিকে ফের একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। গত কয়েক মাস ধরে পারমাণবিক শক্তিধর এই দেশটি টানা ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করে যাচ্ছে। এর ফলে এই অঞ্চলে উত্তেজনা বেড়েই চলেছে।
রোববার (২৮ জানুয়ারি) মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়, সিনপো বন্দরের কাছে। তবে সেগুলো ঠিক কতটি এবং কী ধরনের মিসাইল, তা এখনো পরিষ্কার নয়। এর আগে উত্তর কোরিয়া পুলওয়াসাল-৩-৩১ নামের একটি নতুন কৌশলগত ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে বলে জানায় দক্ষিণ কোরিয়ার ইয়োনহাপ নিউজ এজেন্সি।
জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করে গত দুই বছর ধরে প্রায় প্রতি মাসে মিসাইল নিক্ষেপ ও অস্ত্র পরীক্ষা করে আসছে উত্তর কোরিয়া। এছাড়া দেশটির শীর্ষ নেতা কিম জং উনের বার্তা এবং নীতি নির্ধারণেও অনেক বেশি আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছেন। শান্তি বজায় রাখাসহ সামরিক কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে বেশ কিছু চুক্তিও লঙ্ঘন করেছেন তিনি।
পিয়ংইয়ং দাবি করে আসছে, তারা জানুয়ারি মাসের শুরু থেকেই পুরোপুরি জ্বালানি নির্ভর মিসাইল ও পানির নিচে ড্রোন দিয়ে আক্রমণের সফল পরীক্ষা করে আসছে, যার মাধ্যমে পারমাণবিক অস্ত্রও বহন করা সম্ভব হতে পারে।
এই মাসের শুরুর দিকে কিম জং উন ঘোষণা দেন যে, দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে পুনর্মিলনের সব সম্ভাবনা শেষ হয়ে গেছে। তার বর্ণনায় দক্ষিণ কোরিয়াই এখন তাদের ‘প্রধান শত্রু’। তার এমন বক্তব্য উত্তর কোরিয়া যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে উদ্বেগ বাড়িয়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইয়ন সুক ইয়ল এই বক্তবের প্রতিউত্তরে এ মাসে কেবিনেটে বলেন, যদি উত্তর থেকে কোনো ধরনের প্ররোচনা আসে, তাহলে দক্ষিণ সেটা 'হাজারগুণ শক্তিতে প্রতিরোধ করবে'।
সিআইএ'র সাবেক বিশেষজ্ঞ রবার্ট এল কার্লিন ও পরমাণু বিজ্ঞানী সিগফ্রাইড এস হেকার জানিয়েছেন, তিনি বেশ কয়েকবার উত্তর কোরিয়া ভ্রমণ করেছেন। থার্টি এইট নর্থ ওয়েবসাইটে এক প্রতিবেদনে লিখেছেন, 'আমাদের বিশ্বাস, ১৯৫০ সালে তার দাদার মতো, কিম জং আনও যুদ্ধের একটা কৌশলগত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন'।
তবে এশিয়া, ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার বিশেষজ্ঞ ও বিশ্লেষকরা যুদ্ধের এই ধারণার সাথে একমত হননি। তারা এ বিষয়ে একমত যে, কিমের ক্রমশ আক্রমণাত্মক আচরণ এখন আর অগ্রাহ্য করার উপায় নেই এবং তার প্রশাসন দিনদিন আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। যদিও বেশিরভাগই কোনো যুদ্ধ শুরু হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত নন। তবে কারো কারো শঙ্কা, সীমিত আকারে হলেও আক্রমণের সম্ভাবনা দেখা যেতে পারে।
সিউলের কুকমিন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র রিসার্চার পিটার ওয়ার্ড বিবিসিকে বলেন, 'একটা যুদ্ধ হলে দক্ষিণে হয়ত অনেক মানুষ মারা যাবে, কিন্তু সেটা কিম জং আন ও তার শাসনেরও ইতি ঘটাবে'।
তবে এই গবেষকও অন্যদের মতো সতর্ক করে দিয়ে বলেন, পরিস্থিতি ছোটখাটো সংঘর্ষের দিকে এগুচ্ছে। তবে কারো কারো মতে কিম জং আন আসলে দেশের অভ্যন্তরে তার গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতেই এসব করছেন।