রাখাইন প্রদেশের মিনবায়া টাউনশিপের বাইরে অবস্থিত মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দুটি ব্যাটালিয়নের সদর দফতর দখল করেছে আরাকান আর্মি। এরপর শহরটি থেকে সেনাদের তাড়িয়ে দিয়ে তারাই নিয়ন্ত্রণ করছে।
মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী গণমাধ্যম দ্য ইরাবতীর প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
জাতিগত রাখাইনদের দ্বারা গঠিত আরাকান আর্মি জানিয়েছে, মিনবায়া শহরের বাইরে অবস্থিত সামরিক জান্তার ৩৭৯ লাইট ইনফ্যান্ট্রি ব্যাটালিয়ন এবং ৫৪১ লাইট ইনফ্যান্ট্রি ব্যাটালিয়ন সদর দফতর তারা দখল করেছে। শহরটির নিয়ন্ত্রণ পেতে টানা প্রায় এক মাস আক্রমণ চালানোর পর মঙ্গলবার এই সাফল্য পায় আরাকান আর্মি।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, শক্তিশালী সামরিক ঘাঁটি দুটি দখলের সময় জান্তার পক্ষে লড়া কয়েক ডজন সেনা ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা আরাকান আর্মির কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন।
এর আগে গত ২৮ জানুয়ারি মিনবায়ার বাইরে অবস্থিত ৩৮০ লাইট ইনফ্যান্ট্রি ব্যাটালিয়নের সদর দফতর দখল করে নেয় আরাকান বিদ্রোহীরা। এসময় যুদ্ধবিমান ও গানবোট থেকে গোলাবর্ষণ করেও বিদ্রোহীদের দমাতে পারেনি সরকারি বাহিনী।
জানুয়ারি মাসে, বার্জে করে (এক ধরনের নৌযান) মিনবায়ায় বিপুল সংখ্যক বাড়তি সেনাশক্তি মোতায়েন করে জান্তা সরকার। কিন্তু, তাঁদের প্রায় প্রত্যককেই চোরাগুপ্তা হামলা চালিয়ে পরাজিত করে আরাকান আর্মি। জানুয়ারির শেষদিকে– মিনবায়ায় অবরুদ্ধ সেনাদের জন্য অস্ত্র ও খাদ্য রসদ প্যারাশুটের মাধ্যমে বিমান থেকে ফেলা হয়। কিন্তু, সেগুলো আরাকান আর্মিই জব্দ করে নেয়।
মিনবায়ার সামরিক ঘাঁটিগুলোকে রক্ষা করতে জান্তার অনুগত বাহিনী স্থল, সাগর ও আকাশপথেও মিনবায়া শহর ও তাঁর আশেপাশের গ্রামগুলোতে বোমাবর্ষণ করে। তবু শেষ রক্ষা করতে পারেনি।
রাখাইনের গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে ইরাবতী জানিয়েছে, মঙ্গলবার শেষপর্যন্ত জান্তা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণমুক্ত হয়েছে মিনবায়া।
আরাকান আর্মি আরও জানিয়েছে, টানা তিনদিন আক্রমণের পর বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে মংড়ু টাউনশিপের আওতাধীন মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিপি)-র একটি শক্ত অবস্থান তাদের যোদ্ধারা দখল করেছে।
গত রোববার তুয়াং পায়ো লেফট ও রাইট এ দুই ঘাঁটিতে একযোগে হামলা চালায় আরাকান আর্মি। এরমধ্যে ওইদিনই তাঁরা তুয়াং পায়ো রাইট ঘাঁটি দখলে নেয়। এসময় প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে কয়েক ডজন জান্তা সেনা।
এরপর থেকে তুয়াং পায়ো লেফট ঘাঁটি দখলে নিতেও তাঁরা হামলা করছিল। তীব্র আক্রমণে কোণঠাসা হয়ে এপর্যন্ত মিয়ানমারের ৩২৮ জন বিজিপি, কাস্টমস কর্মকর্তা ও সেনা সদস্য বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন।
রাখাইনের ম্রাউক ঊ, কিয়াকতাও, রামরি, আন ও মায়েবিন টাউনশিপের আওতাধীন এলাকাতেও জান্তা বাহিনীর সাথে আরাকান আর্মির প্রচণ্ড যুদ্ধ চলার সংবাদ জানা গেছে। গত ১০ দিনে উত্তর রাখাইনের আরও দুটি জান্তা সেনাদের ঘাঁটি দখল করেছে আরাকান আর্মি।
মিয়ানমারের বিদ্রোহীদের জোট ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের সদস্য সংগঠন আরাকান আর্মি। গত ২৭ অক্টোবর থেকে ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স উত্তরাঞ্চলীয় শান রাজ্যে জান্তা-বিরোধী 'অপারেশন ১০২৭' শুরু করে। এই অভিযানে ২০টি শহর ও গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যপথসহ শান রাজ্যের বেশিরভাগটাই দখলে নিয়েছে বিদ্রোহীরা।
তবে জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে চীনের মধ্যস্ততায় জান্তা সরকারের সাথে এক যুদ্ধবিরতি করার পর তারা এই রাজ্যে অভিযান পরিচালনা বন্ধ রাখে। কিন্তু, গত ১৩ নভেম্বর থেকে আরাকান আর্মি রাখাইন প্রদেশ ও চিন প্রদেশের পালেতোয়া টাউনশিপ এলাকায় বৃহৎ পরিসরে আক্রমণ অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে।
এই অভিযানে তারা জান্তা বাহিনীর ১৭০টি অবস্থান ও তিনটি শহর দখল করেছে। এগুলো হলো– রাখাইনের মিনবায়া ও পুয়াকতাও, এবং চিন প্রদেশের পালেতোয়া টাউনশিপ।